বিজ্ঞাপনের স্বপ্ন নিয়ে আমেরিকা থেকে কলকাতায়

বিজ্ঞাপনের স্বপ্ন নিয়ে আমেরিকা থেকে কলকাতায়

Friday December 11, 2015,

3 min Read

বাজার ধরতে হলে বিজ্ঞাপন ছাড়া গতি নেই। কিন্তু সঠিক পথ কোনটা? কোথায় বিজ্ঞাপন দিলে তা কার্যকরী। খবরের কাগজ, টেলিভিশন, রেডিও নাকি ডিজিটাল মিডিয়া। পেনসিলভেনিয়ার দ্য হোয়ার্টন বিজনেস স্কুল থেকে পাস করা শরদ লুনিয়াও সে সময় খানিকটা দ্বিধাগ্রস্ত ছিলেন। পড়াশোনা শেষ মার্কিন মুলুকে নামী বিজ্ঞাপন সংস্থায় চাকরি। সেখান থেকে মাইক্রোসফটের ডিজিটাল অ্যাডভা‌র্টাইসিং সলিউশন গ্রুপ। আর নয়, বিদেশ বাসে ইতি টেনে তিনি নিজের শহর কলকাতায় ফিরে তৈরি করতে চান বিজ্ঞাপন সংস্থা। কিন্তু ভারতের মতো জায়গায় কোনটা সঠিক পথ। ডিজিটাল অ্যাডাভার্টিইসিং নাকি কনভেনশনাল মিডিয়া?

বিস্তর সমীক্ষার রিপোর্ট ঘেঁটে বের হল সঠিক পথ। ভারতের বিজ্ঞাপন ব্যবসার বেশিরভাগটাই চলে টেলিভিশন এবং সংবাদপত্রের দৌলতে। প্রচলিত গণমাধ্যমের বিজ্ঞাপনের জগৎ যদি হয়ে থাকে গড়ের মাঠের মতো সুবিশাল, তবে কম্পিউটারের সোশ্যাল নেটওয়ার্কে আটকে থাকা ডিজিটাল অ্যাডভার্টাইজিং হল বাড়ির সৌখিন টব। পরিধি ছোট, সুযোগ কম। কলকাতায় ফিরে সংবাদপত্র, রেডিও, টেলিভিশনের মতো প্রথাগত গণমাধ্যমের জন্য শরদ তৈরি করলেন ওয়েব অ্যাডভার্টাইজিং এজেন্সি। শারদের কথায়, বিজ্ঞাপনের এ টু জেড, সব করি আমরা। ক্লায়েন্টের বাজেট বুঝে পরামর্শ দিই। ধরা যাক তাঁরা নতুন কোনও পণ্যকে তুলে ধরতে চাইছেন। সেই পণ্যের বিজ্ঞাপন কোনও সংবাদপত্রে দেওয়া উচিত, টিভির বিজ্ঞাপন হলে কত সময় অন্তর চলা উচিত, কতক্ষণ ধরে চলা উচিত তার পুঙ্খনাপুঙ্খ পরামর্শ দিয়ে থাকে ‘রিলিজ মাই অ্যাড’।


image


ভারতে বিজ্ঞাপন সংস্থার ব্যবসা নতুন কিছু নয়। কিন্তু ওয়েব অ্যাড এজেন্সি হিসাবে আত্মপ্রকাশ করে ‘রিলিজ মাই অ্যাড’-এর মতো সংস্থা কিন্তু চমকে দিয়েছিল। সেটা ২০০৯ সালের ভ্যালেইনটাইন্স ডে। মাত্র ৬ জনের টিম নিয়ে কলকাতায় খুলল অফিস। পুরনো স্মৃযতি নাড়াঘাটা করতে গিয়ে উজ্জ্বল হয়ে ওঠে শরদের চোখ। ‘‘প্রথম উপার্জনের টাকা ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা পড়তেই অফিসে কী হইচই। মনে হয়েছিল আমরা গোটা পৃকথিবী জিতে নিয়েছি। ছোট্ট এক রেস্টুরেন্টে গিয়ে সব্বাই মিলে সেলিব্রেট করেছিলাম।’’

এর পর ৬টা বছর কেটে গেছে। এর মধ্যে ২ লক্ষেরও বেশি বিজ্ঞাপন প্রকাশ করেছে ‘রিলিজ মাই অ্যাড’। গত আর্থিক বছরে টার্নওভার ছিল ৩২ কোটি টাকা। চলতি বছর তা ৮০ কোটি ছাড়াতে পারে। শরদের কথায়, ‘‘পড়াশোনা করেছি আমেরিকা। সেখানে বিজ্ঞাপন নিয়ে কাজ করার অভিজ্ঞতা ছিল। কিন্তু আমেরিকার ছাঁচ দিয়ে যে ভারতে ব্যবসা করা সম্ভব নয় সেটা আমার নিজের অভিজ্ঞতা দিয়েই বুঝেছি।’’

পশ্চিমী দুনিয়ার মতো ডিজিটাল মিডিয়া ভারতে এখনও সেভাবে ছড়ায়নি। এখনও বিজ্ঞাপনের ৮০ শতাংশ চলে যায় খবরের কাগজ এবং টেলিভিশনে। আমেরিকায় ডিজিটাল মিডিয়ার বিজ্ঞাপন নিয়ে কাজ করলেও, ভারতে এসে কিন্তু শরদকে বেছো নিতে হয়েছে রেডিও, টিভি, সংবাদপত্রের মতো প্রথাগত মাধ্যম। না, আক্ষেপ নেই। শরদের সোজা কথা, ‘‘যে ব্যবসায় বাজার নেই সেটা করে লাভ কী? এখন রেডিও বিজ্ঞাপন দেওয়ার প্রবণতা বাড়ছে। সেদিকে বেশি করে নজর দিচ্ছি।’’

৬ বছরের চেষ্টায় দেশের প্রায় ২০০ সংবাদপত্র, ২৭টি রেডিও স্টেশন, ১৯টি মাল্টিপ্লেক্স চেইন এছাড়াও অসংখ্য সাময়িক পত্রিকা এবং টিভি চ্যানেলের সঙ্গে ব্যবসার সম্পর্ক তৈরি করেছে ‘রিলিজ মাই অ্যাড’। বেঙ্গালুরুতে তৈরি হয়েছে আঞ্চলিক অফিস। শরদ বললেন ৬ বছরের অভিজ্ঞতায় ‘রিলিজ মাই অ্যাড’ এখন অনেক সমৃদ্ধ। এখন সে ডালপালা ছড়িয়ে দেবে গোটা দেশে।