অরিজিতের ওষুধের বাক্সে সবার অধিকার

অরিজিতের ওষুধের বাক্সে সবার অধিকার

Saturday September 19, 2015,

3 min Read

বুকে পুরনো কফ। জ্বোরো শরীর। গা পুড়ে যাচ্ছে। বিছানা থেকে উঠতে গেলেই যেন টাল খেয়ে যান বীরভূমের ইলামবাজারের হতদরিদ্র কৃষক শেখ আলম। ডাক্তার-বদ্যি না করলে যে বিপদ, সেটা বুঝলেও কিচ্ছু করার নেই। বাড়িতে চাল বাড়ন্ত। সংসারের হাল টানতে গিয়েই সব শেষ, তার ওপর রোগ-ভোগ। ওষুধ, পথ্যের টাকা আসবে কোত্থকে! হঠাৎই যে আশ্চর্য প্রদীপের দৈত্য হাজির হাতে ওষুধের বাক্স নিয়ে। একই অভিজ্ঞতা বালুরঘাটের সবিতা দাসেরও। চর্মরোগে তাঁর যন্ত্রণার শেষ নেই। সবিতা দিনমজুর পরি‌বারের বধূ, বাড়িতে অনটন। এবারও ‘‘মেডিসিন বাক্স’’ নিয়ে উপকারি দৈত্য হাজির। ভাবছেন তো এ কোন গাঁজা খুরি গপ্পো! 

image


অ্যাপস, সোশ্যাল মিডিয়ার যুগে আলাদিনের জিন কিংবা আশ্চর্য প্রদীপের সেই দৈত্যের কথা শুনলে ছোটরাও হেসে গড়াগড়ি খায়। বলে, ‘‘মাথাটা দেখাও হে।’’ কিন্তু গ্রামগঞ্জ ঘুরে, শেখ আলম কিংবা সবিতা দাসের মতো মানুষগুলোর সঙ্গে কথা বলে বোঝা যায় – প্রদীপের দৈত্য নেই, আবার আছেও।

সে আছে শুভবুদ্ধিতে, অন্যের পাশে দাঁড়ানোর ইচ্ছায়। প্রদীপের দৈত্য আসলে মানুষের মনে ঘুমিয়ে থাকা এক ইচ্ছের নাম। প্রিয়া এন্টারটেইনমেন্টস প্রাইভেট লিমিটেডের ‘‘মেডিসিন বাক্স’’ কর্মসূচি যেন সেই ‘‘ম্যাজিক’’ দৈত্য। ওষুধের বাক্স হাতে নিয়ে এ-পাড়া ও-পাড়া কিংবা গ্রামগঞ্জের দরিদ্র, বঞ্চিত মানুষদের পাশে গিয়ে সে কথা বলতে চায়, ‘‘ভয় পেয়ো না। আমি তো আছি।’’


অরিজিৎ দত্ত,  ম্যানেজিং ডিরেক্টর, পিইপিএল‌

অরিজিৎ দত্ত, ম্যানেজিং ডিরেক্টর, পিইপিএল‌


ব্যবসার পাশাপাশি বেশ কয়েক বছর ধরেই ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে সচেতনতা ছড়ানোর কাজ চালিয়ে আসছে প্রিয়া এন্টারটেইনমেন্টস প্রাইভেট লিমিটেড। সংক্ষেপে পিইপিএল। চলতি বছর পয়লা বৈশাখে, তারা শুরু করেছে মেডিসিন বক্স কর্মসূচি। সোজা কথায় বললে, ওষুধ কেনার মতো যাদের ক্ষমতা নেই, সেইসব মানুষের সামনে খুলে দিতে হবে ওষুধের ডালি। পিইপিএলের ম্যানেজিং ডিরেক্টর অরিজৎ দত্ত বলেন, ‘‘দেশের দরিদ্র, পিছিয়ে থাকা মানুষের জন্য ভাল কিছু করার কথা দীর্ঘদিন ধরেই ভাবছিলেন আমার মা পূর্ণিমা দত্ত। মেডিসিন বক্স ওই ভাবনারই ফসল।’’

সত্যি, ভারি বিচিত্র দেশ ভারত। বিত্তের গজদন্ত মিনারে দামি ওষুধ আর আধুনিক চিকিৎসায় সুরক্ষিত থাকেন এক দল মানুষ। অন্য দলে রয়েছেন পরিশ্রমী কৃষক, খেটে খাওয়া দিনমজুর। সভ্যতার ভিত তৈরি করতে হবে তাঁদেরই, অথচ ওরাই কিনা ধুঁকবে ওষুধের অভাবে। মরবে বিনা চিকিৎসায়। কিছু একটা করার জন্য প্রদীপ ঘষে যেন উপকারি দৈত্যের ঘুম ভাঙালেন প্রিয়া এন্টারটেইনেমেন্টস-এর অরিজিৎ দত্ত।

আসলে বিন্দুতেই যে সিন্ধু। প্রত্যেকে যদি সামর্থ্য মতো ওষুধ দান করেন, তবে সমস্যা মেটে অনেকটাই। তবে পিইপিএলের মেডিসিন বক্সে কড়া নিয়ম।‘‘মেয়াদ উত্তীর্ণ ওষুধ দান করা নিষিদ্ধ। ’’ এখন প্রশ্ন ওষুধ দেবেটা কে? কোন ব্যক্তি বা সংস্থা যদি ওষুধ দিতেও চায়, তবে যোগাযোগ করতে হবে কার সঙ্গে? অরিজিৎ দত্ত জানালেন, ‘‘প্রিয়া এন্টারটেইনমেন্টসের যতগুলো সিনেমা হল আছে, তাতে দেওয়া থাকে নোটিস বোর্ড। সিনেমার মাঝে দেখানো হয়, মেডিসিন বক্স কর্মসূচির স্লাইড শো। ধারাবাহিক প্রচারে কাজ হচ্ছে।’’ কলকাতা থেকে দূরে, প্রত্যন্ত এলাকায় ওষুধ পৌঁছে দেওয়ার জন্য বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সাহায্য নিচ্ছে পিইপিএল। যেমন বীরভূমে ‘‘বলাকা’’। দক্ষিণ দিনাজপুরে ‘‘সত্যজিৎ মঞ্চ’’। দক্ষিণ ২৪ পরগনায় আরআইএইচডি।

মাস কয়েক আগেও যে উদ্যোগকে তুলনা করা হত অঙ্কুরের সঙ্গে, এখন তাই ডালপালা মেলেছে। পশ্চিমবঙ্গ এবং ত্রিপুরার এগারোটি জায়গায় ছড়িয়েছে মেডিসিন বক্স। চলতি বছর দক্ষিণ ২৪ পরগনার ভাঙরে হঠাইৎ ভয়ঙ্কর রূপ নিয়েছিল জলবাহিত রোগ। মেডিসিন বক্স যেন সেখানে হাজির প্রদীপের দৈত্যের মতো। বীরভূমের লালমাটির গ্রাম কিংবা ত্রিপূরার শান্ত জনপদ... মেডিসিন বক্স হাতে দৈত্য ছুটে বেড়াচ্ছে। তবে পিইপিএল জানে, এটা সবে শুরু। পথে-প্রান্তে, গ্রামগঞ্জেছর রোগ যন্ত্রণা কাতর আরও হাজার-লক্ষ দীন দরিদ্র অপেয় রয়েছে। মেডিসিন বক্স তাদেরও বড্ড দরকার।