ড্রপ আউটদের জন্যে 'এসো কিছু করি'

ড্রপ আউটদের জন্যে 'এসো কিছু করি'

Saturday March 26, 2016,

2 min Read

পবন দাস। সৌমিত্র হালদার। ত্রিদিব রায়। বাসুদেব ঘোষ। গৌরী সাহা। সঙ্গীতা কুণ্ডু। এদের মধ্যে প্রচুর মিল। এরা প্রত্যেকেই অভাবী পরিবারের সন্তান। কারও বাবা প্রান্তিক কৃষক, কেউ ইটভাটার কর্মী, কেউ খবরের কাগজ বিক্রি করেন। কিন্তু স্বপ্ন দেখতে ভোলেননি। চরম প্রতিকূলতার মধ্যেও মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিকে নম্বরের পাহাড় গড়েছেন। পাহাড়ে ওঠার পর শৃঙ্গজয়ের হাতছানি ছিল সবার সমানে। কিন্তু বাস্তবের জমিতে দাঁড়ালে সেখান থেকে আর উঁচুতে তাকানো নয়, সামনে শুধুই অনন্ত খাদ অপেক্ষা করছিল। অর্থের কারণে তাদের গড্ডালিকা প্রবাহে নামতে দেননি কয়েকজন নাছোড় যোদ্ধা। যারা পবন, সৌমিত্র, ত্রিদিব, গৌরীদের পাশে থেকে বলেছে তোমরা এগিয়ে চল। আমরা পাশে আছি। পাশে থাকার প্ল্যাটফর্মের নাম ‘এসো কিছু করি’।

image


নিজেরাই উদাহরণ

মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিকে বহু কৃতী অর্থ এবং ঠি‌কমতো গাইডেন্সের অভাবে বেশি দূর এগোতে পারেন না। এই বিষয়টাই নাড়া দিয়েছিল আবীরা ঘোষ, দীপাঞ্জন মুখোপাধ্যায়,ঋতুপর্ণা চট্টোপাধ্যায়দের। সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইট ‘অরকুট’-এ এই ব্যাপারে তারা একটি পেজও খুলেছিলেন। নাম দিয়েছিলেন ‘এসো কিছু করি’। স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সদস্যরা খোঁজখবর নিয়ে দেখেছিলেন মাধ্যমিকের পর এরাজ্যে সবথেকে বেশি স্কুলছুটের প্রবণতা বাড়ে। দশম মান পেরোলে মোবাইল বা টিভি সারানো বা ছেলে ছোটখাটো মুদির দোকান করে দিতে পারলেই বাবাদের কাছে সেটা নিশ্চিন্তের মনে হত। আশি-নব্বই শতাংশ পাওয়া ছেলেও ক্লাস এইট পাশ আর একজনের মতো জীবন শেষ করে দিক এটা চাইছিলেন না ‘এসো কিছু করি’-র সদস্যরা। তারা অন্তর্জালের বাইরে বেরিয়ে ময়দানে নেমে কাজটা শুরু করেন। সময়টা ছিল ২০০৭ এর ফেব্রুয়ারি মাস। পশ্চিম মেদিনীপুরের ঘাটাল হোক বা হুগলির হরিপাল, কিংবা পূর্ব মেদিনীপুরের ভগবানপুর। সম্ভাবনাময়দের কাছে পৌঁছে যেতেন টিমের সদস্যরা। তাদের নগদ অর্থ বাদ দিয়ে পড়াশোনার সবরকমভাবে সাহায্য শুরু করে ‘এসো কিছু করি’। বইপত্র, ব্যাগ, ক্যালকুলেটর থেকে শুরু করে কলেজে ভর্তির খবর, টিউশন। সমস্ত কিছু বুঝে নিয়েছিল ‘এসো কিছু করি’-র সদস্যরা। একেবারে অভিভাবকের মতো। মাধ্যমিক উত্তীর্ণ ছেলেমেয়েদের জন্য তৈরি হয় ‘সোপান’ নামের প্ল্যাটফর্ম। আর উচ্চ মাধ্যমিকদের জন্য ‘মেধা’। সোপান এবং মেধার ভরসায় গত ১০ বছরে প্রায় ২৫০ কুঁড়ি এখন ফুল হিসাবে ফুটেছে। সংস্থার ভাইস প্রেসিডেন্ট আবীরা ঘোষের কথায়, ‘‘আমাদে অর্থ ও লোকবলের অভাব। তবুও এমন অস্বচ্ছলতার মধ্যেও ওদের স্বপ্ন দেখলে মন ভরে যায়।’’

image


১৫ জন স্বেচ্ছাসেবক আর কয়েকজন শুভানুধ্যায়ী। এদের নিয়েই এক দশকের পথে ‘এসো কিছু করি’। কোনও সংস্থার থেকে দান বা সরকারি অনুদান নয়, একেবারে নিজেদের মতো করে এগোতে চাইছে এই সংস্থা। আবীরার মনে করেন এভাবে যাতে আরও অনেকে তাদের পাশে আসেন তাহলে হয়তো আরও অনেক পবন, সৌমিত্রদের স্বপ্ন বাস্তবায়িত হবে।