বিদেশে তামিল ‘বিপ্লব’ ঘটিয়েছে herotalkies.com

বিদেশে তামিল ‘বিপ্লব’ ঘটিয়েছে herotalkies.com

Friday December 18, 2015,

3 min Read

উইকেন্ডে সিনেমা দেখা বেশিরভাগ ভারতীয়েরই ফেভারিট টাইমপাস। বিশেষ করে প্রবাসী ভারতীয়দের নস্টালজিক হয়ে ওঠার আদর্শ উপকরণ রয়েছে এই রিল লাইফে।তা সত্ত্বেও বিদেশের মাটিতে বলিউড ‌নিয়ে প্রযোজক-ডিস্ট্রিবিউটারদের যতটা মাতামাতি করতে দেখা যায়, তার কানাকড়িও নজরে পড়ে না দক্ষিণী ছবির জন্য। ফলে আঞ্চলিক ভাষার ছবিগুলি সেভাবে মুক্তি পায় না আমেরিকা, ব্রিটেনের মতো দেশেও। খারাপ প্রিন্টের পাইরেটেড ছবি দেখেই সন্তুষ্ট থাকতে হত তাঁদের। এখান থেকেই হিরো টকিজ ডট কমের ভাবনা এসেছিল ভিএস প্রদীপের মাথায়।

কীভাবে এই ভাবনার জন্ম

তখন হায়দরাবাদের নামী বিজনেস স্কুল ইন্ডিয়ান স্কুল অফ বিজনেস-এ এমবিএ পড়ছিলেন প্রদীপ। একবার উইকেন্ডে তামিল সিনেমা থুপ্পাক্কি দেখার খুব শখ হল। কিন্তু দর্শকদের মনে তেমন দাগ কাটতে না পারায় এক সপ্তাহের মধ্যেই সিনেমাটি চলে যায় হল থেকে। ফলে প্রদীপকে তাঁর ইচ্ছাপূরণ করতে হল পাইরেটেড ছবি দেখে।কিন্তু আইনি পথে্ অনলাইনে সিনেমা দেখার বিকল্প থাকলে তো এমন খারাপ অভিজ্ঞতা হত না তাঁর? সেই ভাবনাই ছিল হিরোটকিজ ডট কম সৃষ্টির প্রথম বীজ।

শুরুর সেই দিনগুলি

‘টকিজ’ শব্দের সঙ্গে ভারতীয় সিনেমার অনেক স্মৃতিই বিজড়িত।কারণ অতীতে একাধিক সিনেমা হলের নাম ছিল ‘টকিজ’। সেই নস্টালজিয়াকে উস্কে দিতে প্রদীপ তাঁর সাইটটির নাম রাখলেন হিরোটকিজ ডট কম।তামিল সিনেমার প্রথম আইনসম্মত অনলাইন সাইট।

image


২০১৪ সালের ১০ জুলাই পরিচালক কে বালাচন্দর এবং থানু‍ উদ্বোধন করেন সাইটটি।অনলাইনে প্রথম ছবি ছিল আরিমানামবি। সাইটের হোম পেজে বড় বড় অক্ষরে লেখা “ ১০৮০ এইচডি এবং ৫.১ সারাউন্ড সাউন্ডের সম্পূর্ণ আইনসম্মত তামিল সিনে্মার সাইট ”।

বিজনেস মডেল

প্রথমে ‘পে পার ভিউ’ মডেলে ব্যবসা শুরু করেছিলেন প্রদীপ।কিন্তু তাতে খুব একটা লাভ হচ্ছিল না। পরে সাবস্ক্রিপশনের ব্যবস্থা করা হল।দ্রুত বাড়তে থাকল গ্রাহক।

দুঃখের বিষয়, এমন একটি পরিষেবার সুবিধা নিতে পারলেন না ভারতের সিনেমাপ্রেমীরা। কারণ এই সাইটটি শুধু বিদেশেই ব্যবহারযোগ্য। এতদিন আমেরিকা, ইংল্যান্ড ও কানাডায় বসে যে সমস্ত সিনেমা দেখার কথা ভাবতেই পারতেন না প্রবাসীরা, এবার সেইসমস্ত তামিল সিনেমার লাইব্রেরি উন্মুক্ত হয়ে গেল তাঁদের সামনে। মাউজের এক ক্লিকে।

সাবস্ক্রিপশন মডেলে পা রাখার ৪ মাসের মধ্যে হিরোটকিজ-এর গ্রাহকসংখ্যা ৪৫০০ ছুঁল।৩৬টি দেশ মিলিয়ে এক লাফে ৩০০% বৃদ্ধি হল ব্যবসার। আমেরিকা, ইংল্যান্ড, কানাডা বড় বাজার হলেও ইরাক, চিলি এবং নাইজেরিয়াতেও জনপ্রিয় হল এই সাইট।“ তামিল সিনেমায় এভাবে ডিজিটাল বিপ্লব ঘটাতে পেরে আমরা অত্যন্ত খুশি।” , বলছিলেন প্রদীপ।

থিয়েটারে মুক্তি পাওয়ার তিন থেকে চার সপ্তাহের মধ্যে হিরোটকিজ-এর লাইব্রেরিতে চলে আসে সিনেমা। তামিল সিনেমার সবথেকে বড় লাইব্রেরি হিসেবে এই সাইটকে গড়ে তোলাই লক্ষ্য প্রদীপের।“ নতুন সিনেমাগুলিকে সরাসরি সিনেমাপ্রেমীদের বাড়ির হোম থিয়েটারে পৌঁছে দিয়ে আমরা ডিস্ট্রিবিউশনের বেড়াজাল টপকেছি।”,বলছিলেন প্রদীপ।

image


কিন্তু একজন সিইও হিসেবে তাঁর কাছে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ পাইরেটেড সাইট থেকে গ্রাহকদের আইনসম্মত সাইটে অভ্যস্ত করে তোলা। হিরোটকিজ‍ এর সবথেকে বড় প্লাস পয়েন্ট এর গুণমান। প্রদীপের দাবি, “ একবার যে গ্রাহকরা আমাদের সাইটে সিনেমা দেখেছেন তাঁরা আর কখনও পাইরেটেড সাইটে ফিরে ‌যাননি।”

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা

হিরোটকিজের পাইপলাইনে বেশ কিছু পরিকল্পনা রয়েছে। ইতিমধ্যেই বিপুল সংখ্যক গ্রাহক দেখে ভারত ও প্রবাসী ব্যবসায়ীরা বিনিয়োগের ইচ্ছাপ্রকাশ করেছেন।তামিল ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি দিয়ে যেই উদ্যোগের সূচনা, ধীরে ধীরে তাতে অন্যান্য দক্ষিণী ভাষার ছবিও অন্তর্ভুক্ত করার চিন্তাভাবনা করছেন প্রদীপ।এর মাধ্যমে বিদেশে বসবাসকারী আরও ৩০ লক্ষ ভারতীয় পরিবারকে কাছে টানাই লক্ষ্য তাঁর। অন্যান্য স্টার্টআপদের জন্য কী টোটকা দেবেন? জবাবে প্রদীপ বললেন, কোনও গ্রেট আইডিয়া থাকলে দ্রুত তাকে বাস্তব রূপ দিতে ঝাঁপান। আফটার অল এখন দুনিয়া ডট কম।

লেখক তৌসিফ আলম, অনুবাদ শিল্পী চক্রবর্তী