ক্রিপ্টোকারেন্সি নিয়ে গোটা দুনিয়ায় প্রায় সমস্ত দেশের সরকারের ঘুম উড়েছে। ক্রিপ্টোকারেন্সিকে নিয়ন্ত্রণ করতে কী নীতি নেওয়া হবে তাই নিয়েই যত ভাবনা। মার্চ মাসে আর্জেন্টিনায় যে জি২০-র সামিট হওয়ার কথা সেখানে এই বিষয়ে গুরুত্বের সঙ্গে বিশদে আলোচনা হওয়ার কথা।
ভারতে হাজার দশেক ক্রিপ্টোকারেন্সি ব্যবহারকারীকে ইতিমধ্যেই ট্যাক্স নোটিস পাঠানো শুরু করেছে আয়কর বিভাগ। একটি সার্ভে রিপোর্ট বলছে গত সতের মাসে সাড়ে তিনশ কোটি মার্কিন ডলারের ক্রিপ্টো কারেন্সি লেনদেন হয়েছে শুধু ভারতেই। আয়কর দফতরের হিসেব অনুযায়ী টেক সেভি তরুণ বিনিয়োগকারী, নির্মাতা সংস্থার কর্তা ব্যক্তিরা এবং গহনা ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত ব্যবসায়ীরাই ভার্চুয়াল কারেন্সিতে বিনিয়োগ করছেন। মুম্বাই, দিল্লি, বেঙ্গালুরু এবং পুনের ৯টি বিটকয়েন এক্সচেঞ্জ থেকে সংগৃহীত তথ্যের ভিত্তিতে সমীক্ষার রিপোর্ট তৈরি করেছে আয়কর বিভাগ। বিটকয়েনে বিনিয়োগকে অনুৎসাহিত করতে একে পনজি স্কিমে বিনিয়োগের সঙ্গে তুলনা করে সরকারের তরফ থেকে প্রচার চালানো হচ্ছে। বলা হচ্ছে শত সতর্ক করা সত্ত্বেও বিনিয়োগকারীরা নিয়মিত বিটকয়েনে বিনিয়োগ করছেন। শুধু কি তাই, ভারত সরকারের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী লাখ দুয়েক নতুন বিনিয়োগকারী গজিয়ে উঠছে প্রতি মাসে।
আয়কর বিভাগের সাফ কথা, বিটকয়েন, ইথেরিয়াম কিংবা রিপলএর মত ক্রিপ্টোকারেন্সিতে কত বিনিয়োগ করা হয়েছে, কোথা থেকে এই টাকা এসেছে সবটাই বিনিয়োগকারীকে জানাতে হবে এবং লাভের ওপর কর দেওয়াটাও বাধ্যতামূলক। আয়কর দফতরের এক কর্তার বক্তব্যে এটা স্পষ্ট যে, বিনিয়োগকারীরা কখনওই তাদের ভার্চুয়াল কারেন্সিতে বিনিয়োগের কিংবা লেনদেনের কোনও হিসেব আয়কর বিভাগকে দেখান না। আর বিনিয়োগকারীদের এই গোপনীয়তার প্রবণতাতেই যতি চিহ্ন টানতে চাইছে সরকার।
গতবছর যেখানে বিটকয়েনের দাম বেড়েছি ১,৭০০ শতাংশ। এবং একটা বিটকয়েনের দাম উঠেছিল কুড়ি হাজার মার্কিন ডলারে। সেখানে বিনিয়োগকারীরা যদি তাদের আয় লুকিয়ে যেতে থাকেন তবে সেটা আয়কর ফাঁকিরই সামিল।
দক্ষিণ কোরিয়া দেশের অভ্যন্তরে ক্রিপ্টোকারেন্সি এক্সচেঞ্জ বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত শুনিয়ে দিয়েছে ইতিমধ্যেই। জাপান এবং চিনেও হুল্লোড় শুরু হয়েছে। অর্থ দফতর সূত্রে খবর ভারতেও নিয়ন্ত্রণের তোরজোড় শুরু হয়েছে। সংসদে রীতিমত বিল পাস করে ভার্চুয়াল কারেন্সিতে বিনিয়োগ রুখতে চাইছে মোদি সরকার।
বিটকয়েন এক্সচেঞ্জ জেবপের সূত্র জানাচ্ছে মাসে যেমন লাখ দুয়েক নতুন বিনিয়োগকারী গজিয়ে উঠছে ঠিক তেমনি প্রতি মাসে ট্রেড ভলিউমও আকাশ ছোঁয়া। শুধু বিটকয়েন নয় নানান ভার্চুয়াল কারেন্সিতে বিনিয়োগ এবং লেনদেন হচ্ছে মাসে প্রায় দুহাজর কোটি টাকার। তবে ক্রিপ্টোকারেন্সি এক্সচেঞ্জের প্রতিনিধিরা বলছেন ক্রিপ্টোকারেন্সিকে পনজি স্কিম হিসেবে দেখানোর চেষ্টাটা আদৌ মেনে নেওয়া যায় না। ফলে এই প্রশ্নে সরকারের নীতির সমালোচনায় মুখর হওয়ার জন্যে কোমর বাঁধছেন তাঁরাও।