জার্মানির সাথে গাঁটছড়া বেঁধে এগোচ্ছে কর্ণাটক

জার্মানির সাথে গাঁটছড়া বেঁধে এগোচ্ছে কর্ণাটক

Friday February 05, 2016,

3 min Read

ইউরোপের সপ্তম বৃহত্তম দেশের সাথে কর্ণাটকের ব্যবসায়িক সম্পর্ক বেশ বহুদিনের। তথ্য অনুযায়ী ভারতের আমদানি অংশীদার হিসাবে জার্মানি এখন অষ্টম স্থানে আছে এবং ভারত প্রায় ৭.৭ বিলিয়ন ডলারের পণ্য সেদেশে রপ্তানি করে প্রতিবছর। আর দুদেশের এই আন্তর্জাতিক সম্পর্ককে আরও শক্ত জমি দেওয়ার জন্যই ‘ইনভেস্ট কর্ণাটক ২০১৬’ মঞ্চকে বেছে নিয়েছেন কর্ণাটক সরকার।

image


ইন্দো – জার্মান চেম্বার অফ কমার্সের প্রেসিডেন্ট Hubert Reilard এর মতে এখন কর্ণাটকে Bosch, Siemens এর মতো বড় বড় প্রায় আটখানা জার্মান কোম্পানি তাদের ব্যবসা করছে বেশ লাভজনক ভাবে। তিনি বলছিলেন কেন কর্ণাটক জার্মানদের জন্য পয়মন্ত। আসলে জার্মান সংস্থাগুলোর নিজস্ব বৃদ্ধির সাথে সাথে কর্ণাটক তাদের সর্বতোভাবে সাহায্য করেছে এশিয়ার বিভিন্ন দেশে ঠিকমতো ছড়িয়ে পড়ার জন্য। বিভিন্ন সংস্থা তাদের ব্যবসায়িক ভিত মজবুত করার একটা শক্ত কাঠামো হিসাবে কর্ণাটককে ব্যবহার করতে পেরেছে। তিনি আরও মনে করিয়ে দিয়েছেন যে ব্যাঙ্গালর কেন যেকোনো সংস্থার জন্য ব্যবসার মূলকেন্দ্র হিসাবে চিহ্নিত হয়। আসলে ইউরোপিয়ান বাজারে বেকারত্বের হার খুব বেশি আর তাই ইন্দো - জার্মান মিলিত প্রকল্পে কোন আবিষ্কার বা রিসার্চের ক্ষেত্রে জার্মানরা এই দেশটাকে একটা অন্যরকম জায়গা দেয় সবসময়। কর্ণাটক সঠিক একাডেমিক এবং স্কিল সাপোর্টের মাধ্যমে সেই সম্পর্ককে আরও মজবুত করেছে আর তার সবথেকে বড় প্রমাণ হল ইন্দো – জার্মান চেম্বার অফ কমার্সের মাধ্যমে দুদেশের মধ্যে প্রায় ষাট খানা মউ সাক্ষরিত হয়েছে শেষ কয়েক বছরে। ২০০৭ সালে জার্মানির বাভারিয়ার সাথে কর্ণাটকের একটা বাণিজ্যিক চুক্তি সাক্ষরিত হয় আর সেসময় থেকেই জার্মানির অর্থনৈতিক বাজারে কর্ণাটক একটা বড় নাম হিসাবে পরিচিত। এই পরিপ্রেক্ষিতে কিছু পরিসংখ্যান দেখে নেওয়া যাক –

• Adidas, BMW, MAN, Aallianz বা Siemens এর মতো সংস্থার সদর দপ্তর অবস্থিত বাভারিয়াতে। আর ২০১৩ সালে ভারতের মোট আমদানি ছিল ১.৪ বিলিয়ন ইউরো আর মোট রপ্তানির অঙ্কটা ছিল ৯৪৩ মিলিয়ন ইউরো। সংখ্যাটা বেশ চোখে লাগার মতই।

• বাভারিয়া জার্মানির দ্বিতীয় বৃহত্তম জায়গা যেখানে সবথেকে বেশি ভারতীয় বংশোদ্ভূতরা থাকে। প্রায় বারো হাজার ভারতীয় এই জার্মান স্টেটে থাকে। এর মধ্যে শুধু মিউনিখেই থাকে প্রায় ২৬০০ ভারতীয়।

• বিভিন্ন চুক্তি অনুযায়ী প্রায় ৭০ টা ভারতীয় সংস্থা ইউরোপিয়ান ইউনিয়নে নিজদের ব্যবসা করার জন্য বাভারিয়াতে নিজেদের জায়গা করে নিয়েছে। TCS, WIPRO, L&T Infotech এর মতো বড় বড় নামও রয়েছে এই তালিকার অন্তর্ভুক্ত।


• বিভিন্ন ভারতীয় ইউনিভার্সিটির সাথে যৌথ উদ্যোগে বাভারিয়া প্রায় ত্রিশটা নতুন একাডেমিক প্রোগ্রাম চালু করেছে যার মধ্যে অন্যতম জার্মান ইন্ডিয়ান ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ, একেবারে নতুন একটা বিষয় যা HOF University তে পড়ান হয়।

• আবার উল্টোদিকে সমগ্র উপ মহাদেশে সাদা এল.ই.ডি লাইট এবং মোবাইল ফোনের এম.পি.থ্রি সফটওয়্যারের আবিষ্কারক সংস্থা Fraunhofer Society র একমাত্র অবস্থান আছে ব্যাঙ্গালরে। যারা বছরে প্রায় ২ বিলিয়ন ইউরোর কাছাকাছি তথ্য বিশ্লেষণে সাহায্য করে এবং প্রায় প্রতিদিন দুটো করে নতুন পেটেন্ট জমা করে।

• ২০১২ তে শুরুর সময় থেকে আজ পর্যন্ত প্রায় আট মিলিয়ন ইউরোর সংস্থান করেছে এই সংস্থা।

এসব ছাড়াও কর্ণাটক এবং বাভারিয়ার মধ্যে বেশ কিছু সাদৃশ্য অবশ্যই আছে যা এই দুই প্রদেশকে অনেকটা কাছাকাছি আসতে সাহায্য করেছে।

• তথ্য-প্রযুক্তি, বায়োটেকনোলজি বা মেডিকেল টেকনোলজির জন্য বাভারিয়া এবং কর্ণাটক দুজায়গাই সবথেকে আকর্ষণীয় বিনিয়োগের ক্ষেত্র। তাই বিভিন্ন প্রযুক্তির আদান প্রদান এবং বাণিজ্যিক সহায়তার মাধ্যমে তাঁরা নিজেদের বেশ সফলভাবে প্রকাশ করতে পেরেছে।

• নিজেদের জায়গা থেকে বাভারিয়া এবং কর্ণাটক দুজনেই পেটেন্ট চ্যাম্পিয়ন। বাভারিয়া যেখানে জার্মানির জন্য বছরে প্রায় ২৬.৪ শতাংশ পেটেন্ট চ্যাম্পিয়ন নিয়োগ করে সেখানে ব্যাঙ্গালর এদেশের সবথেকে বেশি আন্তর্জাতিক পেটেন্ট সরবরাহকারী জায়গা।

• স্টার্টআপের ক্ষেত্রেও দুজায়গার বেশ মিল লক্ষণীয়। বাভারিয়া যেখানে জার্মানির সবথেকে বেশি স্টার্টআপ সমৃদ্ধ এলাকা, সেখানে ব্যাঙ্গালরকে বলা হয়ে থাকে স্টার্টআপের জন্য ভারতীয় মক্কা। ওয়ার্ল্ড স্টার্টআপ ২০১৩ রিপোর্ট অনুযায়ী ভারতে যত নতুন উদ্যোগ আসছে তার প্রায় ৪১ শতাংশই আসছে এই জায়গা থেকে যা ভারতের অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতিতে একটা ভালো দিক।

• বাভারিয়া যেমন জার্মানির অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে প্রায় ২৫ শতাংশ ভ্যালু প্রদানকারী জায়গা। কারণ তথ্য-প্রযুক্তির ক্ষেত্রে এটাই হল জার্মানির সবথেকে বড় গন্তব্য তেমনি এর মধ্যে কোন দ্বিমত নেই যে বর্তমানে ব্যাঙ্গালর ভারতের তথ্য-প্রযুক্তির রাজধানী হিসাবে গণ্য হওয়ার যোগ্য স্থান অধিকার করে নিয়েছে।

( লেখা – তরুশ ভাল্লা, অনুবাদ – নভজিত গাঙ্গুলী )