মাশরুমে চাষে দিশা দেখালেন প্রাঞ্জল

প্রতিবেশীর বলত ‘ওটা’ খেলে নাকি রোগ হয়। মৃত্যুও ঘনিয়ে আসতে পারে জীবনে। গাছের গায়ে বা ভিজে কাঠের ওপর ওই মাশরুমগুলোকে তবুও যত্ন করতেন তিনি। নিজে খেয়ে উপলব্ধি করেলন তার গুণাগুন। এরপর আর বসে থাকেননি। প্রতিবেশীদের বোঝালেন গাছের গায়ে ওই পুষ্টিকর খাবার আসলে মাশরুম। যা চাষ করলে বদলে যেতে পারে উত্তর-পূর্বের চাষিভাইদের জীবন। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সাহায্যে গরিব ছোট চাষি থেকে তাঁরাও হয়ে উঠতে পারেন উদ্যোগপতি। যাঁর দেখানো পথে পরবর্তীকালে নতুন দিশা পেল উত্তর-পূর্ব ভারত।মাশরুম চাষ করে অভাবী চাষিদের উদ্যোগপতি হওয়ার রাস্তা বাতলালেন প্রা্ঞ্জল বড়ুয়া।

মাশরুমে চাষে দিশা দেখালেন প্রাঞ্জল

Thursday September 17, 2015,

2 min Read

image


গুনে পুষ্টিকর, স্বাদেও ভরপুর। উত্তর-পূর্বের আবহাওয়ায় সহজেই বেড়ে ওঠে মাশরুম। বাজারে চাহিদাও প্রচুর। আন্তর্জাতিক খাদ্য উৎপাদনের নিরিখে প্রতি বছর মাশরুমের চাহিদা ২৫ শতাংশ বৃদ্ধি পায়। এত কিছু জানার পরও মাশরুম চাষে উৎসাহ দেখাচ্ছিলেন না উত্তর-পূর্বের চাষিরা। গুটিকয়েক লোক চাষ করলেও আশানুরুপ উৎপাদন হচ্ছিল না। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মাশরুম মরে যাচ্ছিল। শেষে মাশরুম চাষে নিজেই নামলেন প্রাঞ্জল। আধুনিক সার ও প্রযুক্তি ব্যবহার করে দেখিয়ে দিলেন ‘ইচ্ছে থাকলেই উপায় হয়।’


image


তবে মাশরুম উপাৎদনের হার বাড়লেও তৈরি হচ্ছিল বেশ কিছু সমস্যা। অনেক ক্ষেত্রেই উত্তর-পূর্বের চাষিরা মাশরুমের আশানুরুপ দাম পাচ্ছিলেন না। মাশরুম রফতানি শুরু না হওয়ায় কেবল নিজেদের বাজারে বিক্রি হচ্ছিল ছত্রাক। যার ফলে বাইরে সেভাবে প্রচার পাচ্ছিল না মাশরুম চাষ। পরিস্থিতি বুঝতে পেরে ২০০৪ সালে ‘মাশরুম ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন’ গড়লেন প্রাঞ্জল বড়ুয়া। লক্ষ্য ছিল গরিব চাষিদের মাশরুমের উপযুক্ত দাম পাইয়ে দেওয়া। যা করতে গিয়ে ‘Land to Lab’ নামে জমি থেকে গবেষণাগার নীতি নিলেন তিনি। চাষিভাইদের বোঝালেন, কীভাবে চাষ করলে সহজে উন্নত মানের মাশরুম উৎপাদন করা সম্ভব। যার ফল হাতেনাতে পেলেন চাষিরা। দ্রুত সংস্থার অঙ্গ হয়ে গরিব চাষি থেকে ব্যবসায়ী হয়ে ওঠলেন তাঁরা। অরুণাচল প্রদেশ, অসম, মেঘালয় ও নাগাল্যান্ডে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ল মাশরুম উদ্যোগপতিদের পসার।

এক সময় চাষাবাদের গবেষেণায় গোটা একটা গবেষণাগার গড়ে তুললেন প্রাঞ্জল। এই গবেষণাগারেরর উদ্দেশ্য ছিল সস্তায় প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার উৎপন্ন করা। বর্তমানে এই গবেষণাগার‌ থেকে দিনে হাজার প্যাকেট মাছ বা শামুকের ডিম প্রস্তুত করা হয়। এছাড়াও মরসুমের জন্য বসে না থেকে বছরভর মাশরুম তৈরি করতে চাইছেন প্রাঞ্জলবাবু। সে কারণে গবেষণাগারে ‘ঝিনুক মাশরুম’ উৎপন্নের কথাও ভাবা হচ্ছে। ইতিমধ্যেই ‘মাশরুম ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন’ বা এমডিএফ উত্তর-পূর্বর ৮০০ গ্রাম ও ৩৭টি জেলায় ২০হাজার প্রশিক্ষিত চাষি নিয়োগ করেছে এই সংস্থা। এছাড়াও ৬০০ উদ্যোগপতি মাশরুম চাষে পুঁজি বিনিয়োগ করেছেন।

ভবিষ্যতে সব মাশরুমচাষিকে এক ছাতার তলায় আনার চেষ্টা চালাচ্ছেন প্রাঞ্জলবাবু। ইতিমধ্যেই তাঁর মাশরুম ফেডারেশনে ১২০০ চাষি নাম নথিভুক্ত করেছেন। তাঁর লক্ষ্য, ২০১৮ সালের মধ্যে আরও হাজার গ্রাম ফেডারেশেনর অন্তর্ভুক্ত করার। তবেই চাষিদের কাছে কম বিনিয়োগে মুনাফা খুঁজে দেওয়া সম্ভব বলে তিনি মনে করেন। এদিকে, প্রাঞ্জলবাবুর পরামর্শে উপকৃত হয়ে বেজায় খুশি প্রতিবেশীরা। মাশরুম চাষ সম্পর্কে প্রশ্ন করলেই তাঁরা বলছেন ‘‘রেখেছিলেম যারে অবহেলায়, তার লাগি আজ ধনের দোলায়।’’