ভেন্ডারে জেরবার হবেন না, আলপিন থেকে প্রিন্টার মিলবে জোফিওতে

ভেন্ডারে জেরবার হবেন না, আলপিন থেকে প্রিন্টার মিলবে জোফিওতে

Sunday November 22, 2015,

5 min Read


বাপ, ঠাকুর্দা এমনকী তারও আগে থেকে পারিবারিক ব্যবসা। ব্যবসায়ী পরিবারের সন্তান ব্যবসায়ী হবেন, এমন একরকম আন্দাজ করাই যায়। অভিষেক কামানি হলেনও তাই। দ্য জুরি গ্রুপ গ্লোবালের ভারতের ব্যবসা দেখতেন। জুরি হোটেল জুরি গ্রুপেরই অংশ। কিন্তু পৈত্রিক ব্যবসাকে আঁকড়ে বসে থাকার পাত্র নন অভিষেক। ২০১৩র জানুয়ারিতে অনলাইন ব্যবসায় পা রাখেন। অফিস সাপ্লাই ই-কমার্স পোর্টাল জোফিও গড়ে ফেলেন। এটা হল একটা ই-কমার্স ভেঞ্চার, যা মূলত একটা অফিসে স্টেশনারি থেকে নানা রকম মেশিনপত্র, আসবাব, প্যান্ট্রির জিনিসপত্র সরবরাহ করে। অনলাইন, ইমেল বা ফোনেও অর্ডার করা যায় । স্টার্টআপ, ছোট শিল্প, মাঝারি শিল্প এবং বড় কর্পোরেশনগুলির প্রয়োজন মেটানোই লক্ষ্য জোফিওর।

image


ইয়োরস্টোরির সঙ্গে এক সাক্ষাৎপর্বে অভিষেক জানালেন, কীভাবে নানা জায়গায় হোটেল, অফিস নিয়ে প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী হয়েও ইন্টারনেট ব্যবসার দিকে ঝুঁকে পড়লেন।

ইয়োরস্টোরিঃ ব্যবসায়ী পরিবার থেকে আসার ফলেই কী উদ্যোক্তা হওয়া প্রথম পছন্দের ছিল?

অভিষেক কামানিঃ ঠিক কবে উদ্যোক্তা হওয়ার বাসনা মনে জেগেছিল এখন আর মনেও নেই। গুজরাতি উদ্যোগপতির ঘরে বড় হওয়া মানে, চাকরির মানসিকতা নিয়ে বড় হওয়া যায় না। মনে রাখতে হবে, যদি ছোট ব্যবসাও হয়, তবু সেটা নিয়েই থাকতে হবে। চারদিকে ব্যবসার সম্ভাবনা দেখে দেখেই বড় হতে হয়। আমি একজন হোটেল ব্যবসায়ী, তার মানে এই নয় যে আমাকে সারা জীবন ওই নিয়ে পড়ে থাকতে হবে। আপনি দেখবেন, বেশিরভাগ গুজরাতি পরিবার যে ব্যবসা ইতিমধ্যে করছে, তার বিপরীত হলেও সবসময় নতুন কিছু করার চেষ্টা করছে। যখন ছোট ছিলাম, ভাবতাম আইনজীবী অথবা পেশাদার গলফার অথবা অন্য কিছু হব। কিন্তু যখন কলেজে পড়তাম, তখন মনে হল, আমার পারিবারিক ব্যবসাই ঠিক আছে। আমি জানতাম ওইখানেই আমার আসল শক্তি লুকিয়ে আছে। ১৪ বছর বয়স থেকে আমি আর ভাই পারিবারিক ব্যবসায় হাত লাগাতাম। ব্যবসাটা ততদিনে আমার চেনা হয়ে গিয়েছে। স্নাতক করার পরই পাকাপাকিভাবে তাতেই ঢুকে পড়ি।

image


ইয়োরস্টোরিঃ ব্যবসায়িক পরিবার থেকে আসায় লড়াইটা কি অনেক সহজ ছিল?

অভিষেক কামানিঃ উলটো দিকের ঘাস সবসময় একটু বেশিই সবুজ হয়। কিন্তু নিজের দিকটাই আমার পছন্দ। যদি নতুন উদ্যোক্তা হন, তাহলে সাফল্যের ক্ষেত্রে পারিবারিক বা সামজিক চাপ থাকে না। কিন্তু পারিবারিক এবং ইতিমধ্যে সফল ব্যবসায় যদি পা রাখেন, তাহলে সেই সাফল্যের ব্যরোমিটার আপনাকে সবসময় পিছু করবে। আমিও যদি নবীন উদ্যোক্তা হতাম তাহলে জোফিও শুরু করতে পারতাম না। জোফিও শুরু করার অন্যতম কারণ পেছনে জুরির ভরসা ছিল। জুরি থেকে আমি যা শিখেছি, জোফিওতে সেই আত্মবিশ্বাসই কাজে লেগেছে। কেন আমি নিজের দিকটাই পছন্দ করি, তার আরেকটা কারণ হল, পরিবার আমাকে সবসময় স্বাধীনতা দিয়েছে। আমার বাবা, ঠাকুর্দা কখনই দেখতেন না জোফিও কেমন চলছে। তাঁরা সবসময় বলতেন, যেহেতু এটা আমার প্রথম ব্যবসা, তাই ডোবার চান্স ১০০ শতাংশ। তাতে কষ্ট পাওয়ার কোনও মানে নেই, কারণ ব্যবসায় ওঠাপড়া থাকবেই। তাই আমি যে সুবিধা পেয়েছি সেটা শুধু পারিবারিক ব্যবসায় থাকার ফলে নয়, ব্যবসায় ব্যর্থ হওয়ার অনুমতিও ছিল, কারণ ব্যবসায় ব্যর্থতা ঘটতেই পারে। আমি এবং আমার ভাই শিখেছি, ফেল করতে পার, কারণ সবাই পারফেক্ট নয়। তাই চেষ্টা করার পরও আমাদের সংস্থায় কেউ ব্যর্থ হলে, তাতে কিছু যায় আসে না।

ইয়োরস্টোরিঃ আপনার পরিবার সবসময় অফিস, দোকান করে সরাসরি ব্যবসা করছে? আপনি কখন এবং কেন অনলাইন ব্যবসায় এলেন?

অভিষেক কামানিঃ হঠাৎই হয়ে গেল সব। আমি আর ভাই অনেক দিন ধরে প্ল্যান করছিলাম। যখন বেঙ্গালুরুতে থাকতাম, স্টার্টআপ নিয়ে পেপারে পড়তাম। অনলাইনে নতুন নতুন অনেক ব্যবসা আসছিল। ডিজিটাল বাজারের ভবিষ্যৎও ভালোই মনে হচ্ছিল। আমরাও এই জায়গাটা ধরার কথা ভাবছিলাম। এমন কিছু একটা করতে চাইছিলাম যেটা দশ-কুড়ি বছর পরও টিকে থাকবে। আমরা ভাবতে বসলাম। অন্তত ২০টি বিষয় মাথায় আসছিল। শুধু ই-কমার্স নয়, আরও অনেক রকম অনলাইন আইডিয়া আসছিল। জুরির এক অভিজ্ঞতা থেকে অফিসের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সরবারাহ করার কথা ভাবি। একসময় আমরা দেখতাম অফিসের নানা জিনিসপত্র কীভাবে আসত। কাগজ পেন আসত একজায়গা থেকে, প্রিন্টার আর তার কালি আসত আরেক জায়গা থেকে। এভাবে নানা জিনিস নানা জায়গা থেকে আসত। তিনটে ভেন্ডর ছিল, তাদের সঙ্গে চুক্তিও বেশ অদ্ভুত ছিল। দাম বোঝা যেত না। সেটাই চোখ খুলে দিয়েছিল আমাদের। প্রোকিউরমেন্ট ডিপার্টমেন্টের কাছে জানতে চেয়েছিলাম, সব এক জায়গা থেকে পেলেও কেন তিনজন আলাদা লোকের কাছে যাচ্ছি। উত্তর ছিল, বহুজাতিক সংস্থার সঙ্গে ডিল করতে হয়। তাদের অত সময় নেই। বাজারে কী প্রয়োজন তার একটা পরিষ্কার ছবি দেখতে পেলাম। নানা সংস্থা অফিসের প্রয়োজনীয় জিনিস এভাবেই নানা জায়গা থেকে নিচ্ছে, অথচ সমস্যা মেটানোর কেউ নেই। তখন শুধু অফিস ইয়েস এবং আরও কয়েকটা ছোট ছোট পোর্টাল ছিল, এখন সেগুলিও বন্ধ হয়ে গিয়েছে।

ইয়োরস্টোরিঃ অফিস, দোকানের সরাসরি ব্যবসা থেকে অনলাইন, কোথায় পার্থক্য?

অভিষেক কামানিঃ সব ব্যবসাতেই চ্যালেঞ্জ আছে। একটু গভীরে গেলে দেখা যাবে, ব্যবসার ধরন আলাদা তবে, স্ট্রেটেজি কিন্তু এক। সবাই ভাবছে কীভাবে বিক্রি হবে? সংস্থার সংস্কৃতি কী হবে? এরপর কী কবর? এই জিনিসগুলি সব ব্যবসায় এক। জুরি হোটেলের থেকে জোফিওর ব্যবসা সহজ মনে হত। কারণ, হোটেলের ফাঁকা ঘরে আজ লোক না এলেই লস। কালকের বুক করা রুম দিতে পারব না। কিন্তু জোফিওতে স্টক থাকলে কালও বিক্রি হতে পারে।

ইয়োরস্টোরিঃ জোফিওতে কী কী সমস্যায় পড়েছেন?

অভিষেক কামানিঃ যখন ব্যবসা শুরু করি তখন অনেক সমস্যা বুঝতেই পারিনি। জানতাম না বাজারে নকল জিনিস বিক্রি হচ্ছে। সাধারণ ক্রেতা এইসব জানেনই না। অনেক জায়গা আছে যেখানে কম দামে অথচ ভালো জিনিস পাওয়া যায়। ৩০ মিনিটের মধ্যে কিছু চাইলে রাস্তায় নামতেই হবে। আমরা তেমন গ্রাহকের কথা ভাবছি না। বিভিন্ন ব্যবসায়ীক প্রতিষ্ঠান আগেভাগে অর্ডার দিয়ে জিনিপত্র কেনে, তারাই আমাদের লক্ষ্য।

ইয়োরস্টোরিঃ এখনও পর্যন্ত বাজারের প্রতিক্রিয়া কী? জোফিও নিয়ে কী স্বপ্ন?

অভিষেক কামানিঃ ভারতে অফিস সাপ্লাইয়ের এই বাজারে ২০ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ আছে। তাতে ই-কমার্সগুলির শেয়ার বেশ নগন্য। শুধু আমরা আর অফিস ইয়েস। এই বাজারের পাঁচ শতাংশ ধরতে পারলেই কোটি টাকার ব্যবসা। সারা জীবনের জন্য স্থায়ী ব্যবসা করতে গেলে সেটাই যথেষ্ট। এই অনলাইন ব্যবসায় এতটাই সুযোগ, যে আরও পাঁচ-ছটা সংস্থা এসে পড়লেও চিন্তার কিছু নেই।

এখনও পর্যন্ত ৫০০০ অর্ডার পেয়েছি আমরা। দিল্লি এবং বেঙ্গালুরু থেকে ১০০টি করে অর্ডার নিই প্রতিদিন। আগামী পাঁচ বছরে আরও ১২-১৫টি শহরে ঢুকে পড়তে চাই। বলতে পারি, আমাদের প্রথম পর্ব ভালোই কেটেছে। প্রথম বছর সাড়ে আট মাসেই টার্গেটে পৌঁছে যাই। বছর শেষে রেভিনিউ টার্গেটের দ্বিগুনে পৌঁছাতে চাই।

স্বাভাবিক ই-কমার্স ব্যবসার ব্যরোমিটারে আমাদের ব্যবসা মাপতে চাই না। ধীরে ধীরে এগোন পছন্দ করি। যে গতিতে এগোচ্ছি সেটাই ঠিক আছে। দু-পাঁচ বছরে বেরিয়ে যাওয়ার কোনও ভাবনা নেই। এটা একটা দীর্ঘকালীন ব্যবসা, প্রয়োজনে ১০-১৫ বছর লাগুক। জোফিও, একটা ভালো সংস্থা হয়ে ওঠা উচিত এবং নিজের শক্তিতেই টিকে থাকবে।

লেখক-কীর্তি পুনিয়া

অনুবাদ-তিয়াসা বিশ্বাস