রঘুরাম রাজনের অধ্যাপক আজ কপর্দকহীন

রঘুরাম রাজনের অধ্যাপক আজ কপর্দকহীন

Monday September 12, 2016,

2 min Read

এখন সম্বল বলতে পরনে হাঁটুর ওপর তোলা কাপড়, লুঙ্গি নয়, ধুতি নয়, বড় গামছার মত দেখতে সুতির চাদরের মত একটা কিছু। সচরাচর খালি গায়ে ঘুরে বেড়ান। তিন জোড়া জামা আর একটা লজঝড়ে সাইকেল ছাড়া আর কিছুই নেই। থুড়ি নেই কেন বলছি! এই ভদ্রলোকের সঙ্গে আস্ত গ্রাম আছে। মধ্যপ্রদেশের কোচামু। সাড়ে সাতশ মানুষ। আইআইটি দিল্লির একটা ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ডিগ্রি আছে। বিটেকের, এমটেকের। ১৯৭১-৭৩ হাউস্টনের রাইস ইউনিভার্সিটিতে গবেষণা করেছেন। সেখানে চাকরি করেছেন বছর দেড়েক। দেশে ফিরে আইআইটি দিল্লিতে অধ্যাপনা করেছেন। তাঁর ছাত্রদের একজন রঘুরাম রাজন। ৯০ এর দশকে মধ্যপ্রদেশের প্রত্যন্ত বেতুল, হোসাঙ্গাবাদ জেলার আদিবাসী গ্রামে এসেছিলেন আদিবাসী শ্রমিক সংগঠনের নেতা হিসেবে। তার পর আর ফিরে যাননি। হাউস্টন ইউনিভার্সিটির পিএচডি অলোক সাগর গত ৩২ বছর ধরে এই সব গ্রামের মানুষের সঙ্গে মিলে মিশে গিয়েছেন।

image


এখন ওই লজঝড়ে সাইকেলে চরেই আইআইটি দিল্লির প্রাক্তন এই প্রফেসার মাইলের পর মাইল পাড়ি দেন। এলাকায় গাছ লাগিয়ে বেড়ান। আদিবাসীদের জীবনের অঙ্গ হয়ে তিনি এখন বিদ্যুৎ থেকে বিচ্ছিন্ন। কম্পিউটার, ইন্টারনেট মোবাইল ফোন সমস্ত রকম প্রগতি থেকে বিচ্ছিন্ন। বরং বলা ভালো তিনি সমস্তরকম তথাকথিত প্রগতিকে প্রত্যাখ্যান করেছেন যে প্রগতির অংশীদার এই নিরন্ন মানুষগুলো নন।

এই ৩২ বছরে পঞ্চাশ হাজারেরও বেশি গাছ লাগিয়েছেন। আদিবাসী সমাজের ছেলেমেয়েদের লেখা পড়া শেখানোর চেষ্টা করেছেন। ক্ষুন্নিবৃত্তির জন্যে কৃষি কাজে হাত লাগিয়েছেন। স্মৃতিভ্রংশ মানুষের মত করে নয়, স্ব নির্বাচিত একটি জীবনের সন্ধানে অলোক সাগর অতিবাহিত করেছেন তাঁর জীবনের অনন্য অমূল্য সময়।

এও কি এক বৈরাগ্য! প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন এটা বৈরাগ্য কিনা জানি না তবে এটা সংঘর্ষ। আত্মীয় বন্ধু পরিজন সবাই একসময় ভুল বুঝেছেন অলোককে। মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে প্রিয়জনেরা। কিন্তু অপর দিকে গোটা গ্রাম এগিয়ে এসেছে এই বহিরাগতকে আপন করে নিতে। গত ২৬ বছর এক আদিবাসী শ্রমিক পরিবারের সঙ্গে থাকেন তিনি। এমন ঘর যেখানে দরজা পর্যন্ত নেই। মজার ব্যাপার হল, মধ্যপ্রদেশের পিছিয়ে পড়া জেলা বেতুলের মানুষ অলোকের হকিকত জানলেও স্থানীয় প্রশাসনের কিছুই জানা ছিল না। সম্প্রতি স্থানীয় নির্বাচনের আগে সরকারি আধিকারিকদের নজরে পড়ে। সন্দেহ হয়। আদিবাসীদের মধ্যে মিশে থাকা এমন মানুষ দেখে আঁতকে ওঠে প্রশাসন। থানায় ডেকে নিয়ে যায়। সেখানে জিজ্ঞাসাবাদ চলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা। সত্যিকারের পরিচয় পেয়ে সন্দেহ আরও বাড়ে। জেলা শাসক তাঁর ডিগ্রির কাগজ, দিল্লি আইআইটিতে চাকরি করার দলিল পরীক্ষা করতে পাঠান। সে সব দলিল দস্তাবেজ সঠিক প্রমাণিত হওয়ার পর লজ্জায় মাথা কাটা যায় জেলা প্রশাসনের। মিডিয়ায় খবর রটে।

জানা গেল, অলোক সাগরের কাছে একটা উন্নত পৃথিবী গড়ার মডেল আছে। দিল্লি আইআইটির প্রাক্তন এই অধ্যাপক রাইস বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃতী গবেষক ডক্টর অলোক সাগরের সেই সুন্দর পৃথিবীর স্বপ্নে দরিদ্র মানুষই ক্ষমতার কেন্দ্রে। তাঁর দাবি তাঁর এই তত্ত্বের ওপর ভর করেই আদিবাসী পিছিয়ে থাকা মানুষের, শ্রমিকের শোষণ মুক্তি সম্ভব।