রুমঝুম রায়চৌধুরী। পেশায় একজন পরামর্শদাত্রী। আদতে নৃতাত্ত্বিক। বর্তমানে জম্মু ও কাশ্মীরের উন্নয়নের কাজে জম্মু-কাশ্মীর সরকারের সামাজিক উন্নয়ন প্রকল্পগুলিতে পরামর্শ দিচ্ছেন। শহরাঞ্চলের উন্নয়নের কাজ চলছে ওঁর পরামর্শে। রুমঝুমের আস্তানা এখন শ্রীনগর।
ভারতের পিছিয়ে পড়া রাজ্যগুলির ভিতর অন্যতম জম্মুকাশ্মীর। এখানে জঙ্গি আন্দোলনের জেরে বছরের পর বছর শিল্পায়ন হয়নি। জম্মু, কাশ্মীর ও লাদাখ ভৌগোলিকভাবে এই রাজ্যটিকে তিনভাগে ভাগ করা হয়ে থাকে। এখানকার ৮০ শতাংশ মানুষই কৃষিজীবী। বাসিন্দাদের আর্থিক অবস্থা ভাল নয়। রাজ্যে নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য থাকা সত্ত্বেও বহু মানুষ দারিদ্র সীমার নীচে বসবাস করেন। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তথা কেন্দ্রীয় সরকার জম্মু-কাশ্মীরের উন্নয়নে একাধিক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। ফলে, নতুন করে উন্নয়নের কাজ আরম্ভ হয়েছে।
রুমঝুম জানালেন, জম্মুকাশ্মীর সরকারও জোরকদমে উন্নয়নের কাজে নেমেছে। সেখানে এখন পানীয় জল প্রকল্প, নিকাশি ব্যবস্থা, নতুন নতুন ফ্লাইওভার তৈরির মতো একগুচ্ছ প্রকল্প রূপায়নের কাজ চলছে। জেন্ডার অ্যাকশন প্ল্যান কার্যকরী করার জন্য সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে দলনেত্রী হিসাবে কাজ করছেন রুমঝুম। এর আগে দেশের বাইরেও এধরনের কাজ করেছেন। বাংলাদেশ ও ইন্দোনেশিয়ায় করে আসা কাজ প্রসঙ্গে জানালেন, ওখানে মূলত পুনর্বাসনের কাজ করেছি। তাছাড়া, রেলওয়ে, সড়ক ইত্যাদি পরিকাঠামো উন্নয়নের কাজের সঙ্গেও যুক্ত থেকেছি।
কলকাতার মেয়ে রুমঝুম। বয়সকালে বিয়ে করার সময় পাননি। বরাবর কাজের মানুষ থাকতে গিয়ে সাত পাকে বাঁধা পড়ার জন্যে সময় দিতে পারেননি। এ কথা তিনি হাসতে হাসতে জানালেন।
এখন পরামর্শদাতা হিসাবে স্বাধীনভাবে কাজ করেন রুমঝুম। ১৯৯২ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অ্যানথ্রোপলজিতে পিএইচডি করেছেন। রুমঝুমের অভিজ্ঞতা এবং তাঁদের কাজের স্বীকৃতির তালিকাটা এতই লম্বা যে ফিরিস্তি শোনাবো না। তবে ওঁর কাজের স্বীকৃতির মোটামুটি একটা তালিকা পেশ করলে একঘেয়ে লাগবে না বলেই মনে হয়। বরং, রুমঝুমের বায়োডেটায় যে কোনও মেয়েকে উদ্বুদ্ধ করার মতো মালমশলা মজুত আছে।
এদেশের মেয়েরা বহু ক্ষেত্রেই পুরুষের তুলনায় পিছনের সারিতে রয়েছেন। বহু মেয়ে এ কথা মনে করে দীর্ঘশ্বাস ফেলেন আর ভাবেন, মেয়ে বলেই তিনি একা। পুরুষ হয়ে জন্মালে কিছু একটা করে দেখিয়ে দিতেন। কীভাবে সাধারণ মানুষের সমস্যার ভিতর ঢুকে পড়ে তাঁদেরকে সহায়তা করা যায় রুমঝুম তা মেয়ে হয়েই দেখিয়েছেন । আর একাজে তিনি প্রেরণা পান কোনও বিশেষ মানুষের কিংবা দেবতার থেকে নয়। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃতত্ত্বের বরাবরের কৃতী ছাত্রী রুমঝুম বলেন, আমাকে এগিয়ে যেতে সহায়তা করে আমার বিষয়।
প্রাইভেট কম্পানিতে সোশ্যাল সাইন্টিস্ট হিসাবে কাজ দিয়ে সূত্রপাত। রুমঝুম জানালেন, এরপরে বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা, শিল্প সংস্থা বা আন্তর্জাতিক সামাজিক সংগঠনের হয়ে প্রশিক্ষণ, কৌশল তৈরির ক্ষেত্র বা পরিকল্পনা এবং টিম ম্যানেজমেন্টের কাজ করছেন। প্রায় দেড় দশক ধরে রুমঝুম পেশায় একজন স্বাধীন পরামর্শদাত্রী।
এক্ষেত্রে আসলে কী পান, তা জানতে চাইলে রুমঝুম বলেন, মানুষের ভালোবাসা। অসংখ্য মানুষের ভালোবাসা আমার একক জীবনকে সমৃদ্ধ করেছে। বিশেষ কোনও ঘটনা বলছি না। অনেক ঘটনাই তো আছে। তবে, একথা ঠিক, স্মৃতি সততই সুখের।এদিকে মেয়েরা কর্মক্ষেত্রে অনেক সময় বৈষম্যের শিকার হন। কথাটা সত্যি হলেও পায়ের নীচে মেয়েরাও মাটি খুঁজে নিতে পারেন শুধুমাত্র শিক্ষার মাধ্যমে। এই কাজটিও জম্মু-কাশ্মীরে চলছে রুমঝুমের নেতৃত্বেই।
Related Stories
March 14, 2017
March 14, 2017
March 14, 2017
March 14, 2017
Stories by Arnab Dutta