স্বপ্নার বিবিয়ানা-য় মজেছে কলকাতা

স্বপ্নার বিবিয়ানা-য় মজেছে কলকাতা

Tuesday January 12, 2016,

3 min Read

স্বপ্না দাস। শ্বশুরবাড়ির পারিবারিক ব্যবসা রাঙাজবা আলতা সিঁদুর। জনপ্রিয় এই প্রসাধনীর ব্যবসায় চাইলেই তিনি যুক্ত হতে পারতেন। কিন্তু ইচ্ছে ছিল নিজের মতো কিছু করার। বছর ১৫ আগে নিজের শখেই বাড়িতে সালোয়ার পিস কিনে বিক্রি করতে শুরু করেন স্বপ্না। ক্রেতারা তাঁর পছন্দের প্রশংসা করলেও কোথায় বানাতে দেবেন তা নিয়ে দিশেহারা ছিলেন। “আমি নিজে তো পোশাক তৈরি করতে পারি না। তাই টেলার রেখে কিছু কাজ নিতে শুরু করলাম। ধীরে ধীরে বেঙ্গালুরু, হায়দরাবাদ, দিল্লি, মুম্বইতে প্রদর্শনী করলাম। কাজের চাহিদা বেড়ে গেল। মূলত অ্যাপ্লিক-এর কাজেই তখন স্পেশালিটি ছিল।”

image


বিবিয়ানার ভাবনাও এসেছিল আকস্মিক। “বরাবরই ফ্যাব ইন্ডিয়া পছন্দ ছিল আমার। কিন্তু মনে হত দামটা বড্ড চড়া। সময়টা ২০০৮-০৯ সাল। সেখান থেকেই বিবিয়ানার আইডিয়া এসেছিল। ঠিক করেছিলাম ফ্যাব ইন্ডিয়ার শোরুমের সামনেই হবে আমার বুটিক।” এর পরপরই হিন্দুস্থান পার্কে উদ্বোধন হল বিবিয়ানার। ডিজাইনার ব্লাউজই হয়ে উঠল তাঁর বুটিকের বিশেষত্ব। মূলত কাস্টমাইজড ডিজাইনিংয়ের কাজ করেন তিনি। বুটিকে কোনও ক্যাটালগ নেই। আসলে ক্যাটালগ রয়েছে স্বপ্নার মাথাতেই। এত বছরের অভিজ্ঞতা আর সৃজনশীলতা দিয়ে শাড়ির জন্য ব্লাউজের ডিজাইন বেছে দেন তিনি। একটি নয়, একাধিক বিকল্প থাকে । সেখান থেকে পছন্দসই ডিজাইন বেছে নেন ক্রেতারা। ডিজাইনার ব্লাউজের দামও সাধ্যের মধ্যে। দাম শুরু ৮৫০ টাকা থেকে, কাফ ফিটেড ব্লাউজ হলে দাম চড়বে ১১৫০ টাকায়।

ব্লাউজ বিশেষত্ব হলেও শাড়ির সম্ভারও নেহাত খারাপ নয়। খাদির শাড়িতে টেলিয়া কটন স্টাইলে ব্লক প্রিন্ট থেকে তসর, সিল্ক। দাম ১৮৫০ থেকে ১০,০০০ পর্যন্ত। মেকিং চার্জও আহামরি কিছু নয়। এছাড়াও রেডি টু ওয়্যারের মধ্যে রয়েছে স্কার্ট, পালাজো, কুর্তা, সালোয়ার কামিজ। রকমারি কটনের ব্যাগ, স্লিং, টোট, ক্লাচ—এসবও মিলছে ন্যায্য দামে।

স্বপ্না জানালেন, দিল্লি, মুম্বই, হায়দরাবাদ, বেঙ্গালুরু ছাড়া বেশ কিছু প্রবাসী ভারতীয় গ্রাহকও রয়েছে তাঁর। পাশাপাশি পাইকারি গ্রাহকদের চাহিদা মেটানোর জন্য কলকাতায় দুটি কারখানায় কাজ চলে। এরমধ্যে এমব্রয়ডারির কারখানাটি স্বপ্নার বাড়িতেই রয়েছে। ব্লাউজ, সালোয়ার তৈরি হয় বাঘাযতীনের কারখানায়।

একসময় মাত্র ১০ হাজার টাকা পুঁজি নিয়ে ব্যবসা শুরু করেছিলেন। আজ লাভের অঙ্ক লক্ষ ছাড়িয়েছে। তবে স্বপ্নার কথায়, এই ব্যবসাকে ১৫ বছর দিয়েছেন তিনি। এইটুকু প্রাপ্য তো তাঁর ছিলই। টলিউড, টেলিউডেও বিবিয়ানার ভালই জনপ্রিয়তা রয়েছে। যদিও তা নিয়ে বিশেষ কিছু জানাতে আগ্রহী নন স্বপ্না। তবে একটা মজার ঘটনা বললেন। একবার হিন্দুস্থান পার্কে ছবির শ্যুটিং করতে এসেছিলেন সুস্মিতা সেন। সেইসময় বিবিয়ানায় ঢুকেছিলেন তিনি। কিন্তু ভক্তদের ছবি তোলার হিড়িকে শেষ পর্যন্ত কিছু না কিনেই ফিরতে হয়েছিল তাঁকে।

অনেক গ্রাহকই তাঁকে বলেন, কোনওকিছুর জন্য সল্টলেকের বাইরে বেরোতে হয় না। শুধুমাত্র বিবিয়ানার জন্যই বেরোতে হয়। কিন্তু আপাতত বিবিয়ানার কোনও শাখা করার কোনও পরিকল্পনা নেই স্বপ্নার। কারণও রয়েছে যথেষ্ট। নিজের বুটিকের ক্যাটালগ যে তিনিই। আর সেটাই বিবিয়ানার ইউএসপি। তাই গুণগত মানের সঙ্গে কোনওভাবেই আপোষ করতে রাজি নন।

এক মেয়ে আর এক ছেলেকে নিয়েই সংসার স্বপ্নার। স্বামী মারা গিয়েছেন বছর চারেক আগে। কোনওদিনই শুধুমাত্র পারিবারিক ব্যবসার ওপর নির্ভরশীল হয়ে থাকতে চাননি স্বপ্না। নিজের আলাদা পরিচিতি গড়তে চেয়েছিলেন। সেই প্রচেষ্টায় আজ কিন্তু বেশ ভালোই সফল বিবিয়ানার মালকিন।