ফাঁকা পড়ে আছে ভিখিরিদের প্রাসাদ

ফাঁকা পড়ে আছে ভিখিরিদের প্রাসাদ

Thursday July 14, 2016,

2 min Read

নাম? রামকৃষ্ণ। উপাধি? ভিখিরি। তোমরা কোন জাতি? সরিসৃপ। কেজরিওয়াল সরকারের লামপুর প্রকল্প প্রসঙ্গে মনে পড়ে গেল তৃপ্তি মিত্রের সংলাপ। চলুন আলাপ করি এরকম রামকৃষ্ণদের সঙ্গে।

image


দিল্লি সরকার লামপুর প্রকল্পে প্রতি বছর পাঁচ কোটি টাকা ঢালছেন। উত্তর দিল্লির প্রান্তে শিল্পাঞ্চল নারেলা। ভিক্ষাবৃত্তি করেন যাঁরা সেইসব মানুষদের জন্য এখানে সত্তরটি ঘরের একটি সরকারি আবাসন আছে। ফান্ড মূলত খরচ হয় ১১ জন কর্মীর মাইনে এবং রান্না খাওয়ার সরঞ্জামে। কিন্তু মজার বিষয় কোনও ভিখিরি এই আবাসনে থাকেন না। রেকর্ড অনুসারে কোনও ভিখিরিকে ২০১৬ তে এখানে পাঠানোও হয়নি। শেষবার এই আবাসনটি ব্যবহৃত হয়েছিল, কমনওয়েলথ গেমসের সময়। তখন মুখ্যমন্ত্রী শিলা দীক্ষিত একটি পরিচ্ছন্নতা অভিযান শুরু করেছিলেন।

Bombay Prevention of Begging Act, 1959-এর আওতায় রাজধানী শহরে ভিক্ষাবৃত্তি অপরাধ। প্রায়ই পুলিশ আর সমাজ সংস্কারক অধিকর্তারা ভিক্ষুকদের রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে যান। Kingsway Camp-এ ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে তাঁদের হাজির করা হয়। তবে বেশিরভাগ সময় যথাযথ প্রমাণের অভাবে তাঁরা ছাড়া পেয়ে যান। জনৈক সমাজ সংস্কারক অধিকর্তা জানালেন যেহেতু কোনও পুনর্বাসন প্রকল্প নেই তাই ফেরত পাঠানোর পর, নিজেদের জীবিকাতেই ওঁরা খুশি।

অরবিন্দ সিং একজন রান্নার লোক। ভিক্ষুক নন। কিন্তু তাঁকে ভিখিরি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। গত তিনমাস এই ষাট বছরের বৃদ্ধ লামপুর আবাসনের একমাত্র বাসিন্দা। শীঘ্রই তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হবে। এখানে তিনি রাজার হালে থাকেন। তিনজন কেয়ার টেকার তাঁর খেয়াল রাখেন। বিনামূল্যে অরবিন্দবাবু এখানে বাস করছেন। খাদ্য, বস্ত্র, ওষুধ, প্রসাধনসামগ্রী সব পাচ্ছেন। তাঁর ঘরে কুলার, টিভি, খাট, ঠাকুর রাখার ছোট্ট মন্দির সব আছে। প্রতিদিন তাঁকে এককিলো দুধ আর ফল খেতে দেওয়া হয়।

ম্যাজিস্ট্রেট অরবিন্দবাবুকে ঘর ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছেন। তবে অরবিন্দ সিং ম্যাজিস্ট্রেটকে তাঁকে লামপুরে পাঠানোর অনুরোধ করেন। ম্যাজিস্ট্রেট তাঁকে দয়া করেছেন। প্রথমবার ২০১৪ সালের জানুয়ারিতে তিনি লামপুর আবাসনে আসেন। ছাড়া পাওয়ার ছমাসের ভিতর তাঁকে আবার ভিক্ষাবৃত্তির অপরাধে ধরা হয়। তাঁর ইচ্ছা জীবনের শেষ দিনগুলি তিনি এখানেই কাটিয়ে দেবেন।

অরবিন্দ একা নন। এখানকার নিয়ন্ত্রক শিব নারায়ণ সিং জানিয়েছেন,আরেক ভিক্ষুক রাজেশ ওখানে দীর্ঘ ষোলো বছর আছেন। ওর বাবা মিরাট পুলিশে ছিলেন। রাজেশ তবুও এখানে ফিরে ফিরে আসেন। একতলা লামপুর আবাসনটি বাইশ একর জমির ওপর দাঁড়িয়ে আছে। কমপাউন্ডে পাঁচটি বাগান এবং Foreigners Detention Centre আছে। যদিও বাগানগুলি পরিচর্যা পায়না। চল্লিশ জন বিদেশী থাকেন যাঁদের বেশিরভাগ আফ্রিকান আর পাকিস্তানি। এই আবাসনে drug de-addiction centre-ও আছে।