পারভেজের ‘হাতযশে’ ছানির সমস্যা ভুলছে অসম

সরকারি চিকিৎসাকেন্দ্র রয়েছে। নেই ছানি অপারেশনের সুযোগ। অত্যাধিক ব্যয়সাপেক্ষ হওয়ায় বেসরকারি হাসপাতালে যেতে চান না গ্রামের গরিব মানুষজন। ছানি না কাটিয়ে এক প্রকার অন্ধ হয়েই জীবন কাটাচ্ছিলেন তাঁরা। অসমের গরিব মানুষের এই দুর্দশা দেখে এগিয়ে এলেন এক চিকিৎসক। রাজ্যে সাধ্যের মধ্যে চোখের চিকিৎসার পথ দেখালেন পারভেজ উবের। গড়লেন ‘ইআরসি আই কেয়ার’।

পারভেজের ‘হাতযশে’ ছানির সমস্যা ভুলছে অসম

Sunday September 20, 2015,

2 min Read

image


২০০৭ সালের কথা। স্নাতক ডিগ্রি লাভ করে জোরহাটের সরকারি হাসপাতালে যোগ দেন পারভেজ। দেখেন, চক্ষুরোগীর সংখ্যাই হাসপাতালে বেশি। যাদের মধ্যে অধিকাংশেরই চোখে ছানি পড়েছে। অনেকের আবার দৃষ্টি ক্ষমতা প্রায় লোপ পেয়েছে। রোগীদের সকলের মধ্যে একটা বিষয় ‘কমন’। এরা সকলেই অত্যধিক খরচের ভয়ে চোখের চিকিৎসা করাতে পারছিলেন না। বিষয়টি নাড়া দেয় পারভেজকে। হাসপাতালে কাজের সঙ্গে সঙ্গে এই সমস্যা্ থেকে পরিত্রাণের উপায় খুঁজতে থাকেন তিনি। তিন বছরের মাথায় সমাধান পেয়ে যান। সাধ্যের মধ্যে চোখের চিকিৎসা করাতে গড়ে তোলেন একটি সমাজকল্যাণ সংস্থা। ২০১৩ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে পথ চলা শুরু হয় ‘ইআরসি আই কেয়ার’-এর। অঙ্কুর ক্যাপিটাল, এনোভেন্ট ইনভেস্টমেন্ট হোল্ডিং ও আরও দুই সংস্থা পুঁজি ঢালে ‘আই কেয়ার’-এ। মাত্র দু’বছরের মধ্যেই হামাগুড়ি থেকে দৌড়ানো শিখে যায় এই সংস্থা। ইতিমধ্যেই অসমে তিনটি চক্ষু চিকিৎসাকেন্দ্র খুলেছে পারভেজের সংস্থা। জোরহাট, বরখোলা ও নাকাসিবাড়িতে রয়েছে এই কেন্দ্র। এই সেন্টারগুলির দেখভালের জন্য ২২ জন সদস্য রয়েছেন। এছাড়াও ৪০ জন অস্থায়ী কর্মী সংস্থার বিভিন্ন কাজে নিযুক্ত হয়েছেন।

মূলত, পুরো কর্মকাণ্ড চালাতে জেলার সদরে প্রধান কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এই কেন্দ্রগুলিতে চোখের অস্ত্রোপচারের সুবিধা রয়েছে। গ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ন্যূনতম চোখের চিকিৎসার সুবিধার্থে রয়েছে ‘স্যাটেলাইট সেন্টার’-এর ব্যবস্থা। প্রধান কেন্দ্রের সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হয়েছে এই সেন্টারগুলিকে। এছাড়াও চোখ ভালো রাখার উপায় বাতলাতে একটি চলমান চক্ষু চিকিৎসাকেন্দ্ররও ব্যবস্থা করেছে ‘আই কেয়ার’। প্রতি মাসে জেলায় জেলায় (১৫-২০) টি শিবিরের আয়োজন করে এই ‘মোবাইল ভ্যান’। প্রত্যন্ত গ্রামের মানুষকে বিনামূল্যে চোখ পরীক্ষা ও ওষুধ দেওয়া হয় এই শিবিরে।


image


স্বল্প ব্যয়ে উন্নত পরিষেবা পাওয়ায় এরই মধ্যে গ্রামবাসীদের সুনাম ছড়িয়েছে ‘ইআরসি’। মাত্র ৫০ টাকায় চোখ পরীক্ষা করা হয় এই সংস্থায়। চশমার দাম শুরু হয় ৯৯ টাকা থেকে। ছানি অস্ত্রোপচারের জন্য লাগে তিন হাজার পাঁচশো টাকা। যা এখন অনেক চক্ষুরোগীর মুখে হাসি ফুটিয়েছে। সামাজিক উদ্যোগের মাধ্যমেও যে এরকম একটা সংস্থা খোলা যায় তা দেখে অবাক হয়েছেন অনেকেই। তবে এ বিষয়ে পারভেজের ইচ্ছাশক্তিকেই বাহবা দিচ্ছেন অসমের মানুষ। ইতিমধ্যেই এই সংস্থার উন্নত পরিষেবার স্বীকৃতি স্বরূপ পেয়েছে ‘স্পার্ক দ্য রাইস’ ও ‘সংকল্প’ পুরস্কার।

পরিসংখ্যান বলছে, দেশের ১৮ শতাংশ ছানি রোগীই অসমের। আপাতত এই বিপুল সংখ্যক রোগীকে দিশা দেখানোই পারভেজের লক্ষ্য। তবে আগামী দিনে আরও বেশি সংখ্যক মানুষকে ‘ইআরসি আই কেয়ার’-এর পরিষেবা দিতে চান তিনি। সে কারণে সংস্থার প্রযুক্তির ওপর আরও নজর দিচ্ছেন। ভাবা হচ্ছে আরও বেশ চলমান চক্ষু পরীক্ষাকেন্দ্রের বিষয়টিও।