আভিজাত্যই প্রিয়াকে আলাদা করেছে

আভিজাত্যই প্রিয়াকে আলাদা করেছে

Friday August 21, 2015,

3 min Read

image


শিরোনামে থাকতে যারা মরিয়া তাদের দলে তিনি নেই। অথচ তাঁর আভিজাত্য, রুচি, প্রতিভা আর বাণিজ্যিক উদ্ভাবনি ক্ষমতাই তাঁকে বারবার শিরোনামে তুলে এনেছে। তিনি প্রিয়া সচদেব। ফ্যাশান বিশ্বে অত্যন্ত পরিচিত নাম। ফ্যাশান যাঁরা ভালোবাসেন তাঁদের জন্য ই কমার্স সাইট খুলেছেন প্রিয়া। আছে রিটেল আউটলেটও।

ছোটবেলা থেকেই ফ্যাশান তাঁকে টানত। পোশাকের প্রতি এই টানেরই প্রতিফলন ঘটে তাঁর ওয়েবসাইটে। মূলত দামী ভালো ব্ৰ্যান্ডের ফ্যাশানদুরস্ত পোশাক তাঁর ওয়েবসাইটে গুরুত্বপূর্ণ জায়গা করে নিয়েছে। তবে শুরুটা ঠিক এভাবে করেননি প্রিয়া। প্রথমে গড়ে তুলেছিলেন তাঁর রিটেল আউটলেট Kitsch। যেখানে একই ছাদের নিচে নামিদামি ব্র্যান্ডের নানা পোশাকের সম্ভার রয়েছে। ক্রমেই, সরাসরি বিপণনের পাশাপাশি অনলাইনে বিপণনের কৌশল নেন প্রিয়া। গড়ে তোলেন rocknshop। তাঁর মতে, সময়ের চাহিদা মেনেই Kitsch-এর সম্প্রসারণে মন দেন। কেননা তিনি জানেন, এদেশে খুচরো ব্যবসার ভবিষ্যৎটাই লুকিয়ে রয়েছে অনলাইনে। 

পরিসংখ্যান বলছে, ২০০৯-এ দেশে অনলাইনে প্রায় চব্বিশ হাজার তিনশো কুড়ি কোটি টাকার কেনাকাটা হয়েছে। ২০১৩-য় যা বেড়ে দাঁড়ায় আশি হাজার ছশো চল্লিশ কোটি টাকায়। ই-ব্যবসার এই বৃদ্ধির বহর-ই বলে দেয় মানুষ এখন অনলাইনে কেনাকাটার ওপর কতটা নির্ভরশীল। পছন্দের পোশাক থেকে বৈদ্যুতিন সরঞ্জাম, এমনকি এখন জমি থেকে ফ্ল্যাটও অনলাইনে বিক্রিবাট্টা হয়। ইউনিভার্সিটি কলেজ অফ লন্ডনের প্রাক্তনী প্রিয়া সচদেব তাই মন দিয়েছেন তাঁর নিজস্ব ই বিপণি rocknshop এ।

লক্ষ্য স্থির রেখে প্রতি মুহূর্তে কিছু না কিছু শেখার তাগিদটাই তাঁকে এগিয়ে নিয়ে যায়। এই শেখার তাগিদটাই তাঁর ক্ষিদে বহু গুণ বাড়িয়ে দেয়। অনলাইনে একসঙ্গে একগুচ্ছ নামিদামি ব্র্যান্ডের সঙ্গে কাজ করাটা তাঁর ক্ষেত্রে কখনও সমস্যার হয়ে দাঁড়ায়নি। এজন্য তাঁর রিটেল আউটলেট Kitsch এর ভূমিকাকে গুরুত্ব দিতে চান। অফলাইনে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের কর্তাদের সঙ্গে নিরন্তর সম্পর্ক রাখায় দু তরফেই পারস্পরিক আস্থার জায়গাটা তৈরি হয়েছে। যার জেরে অনলাইনে তাদের ব্র্যান্ডের বিপণনে কখনওই আপত্তি জানায়নি ওই সংস্থাগুলি। প্রিয়ার দাবি বেশিরভাগ বুটিক-ই চটকদারি পোশাকের ডিজাইনে বিশ্বাসী। ফরমায়েসি পোশাক-আসাক তৈরিতেই তারা বেশি গুরুত্ব দেন। তুলনায় আভিজাত্য থেকে বনেদিয়ানা সবেতেই ‘rocknshop.com’ মৌলিকত্বের দাবিদার।

তবে প্রিয়া একা নন। এই কর্মযজ্ঞে শরিক তাঁর বোন চারু সচদেবও। দুজনে একসঙ্গে কাজ করলেও, দু জনেরই কাজের জায়গা পৃথক। চারু মুলত Kitsch-এর প্রতিদিনের কাজকর্মের খেয়াল রাখেন। সেখানে ‘rocknshop.com’-এর নতুন নতুন উদ্ভাবনী কৌশল স্থির করা থেকে সামগ্রিক পরিচালনার দায়ভার প্রিয়ার কাঁধে।

নিজের সংস্থায় কর্মী নিয়োগের বিষয়েও অত্যন্ত সতর্ক থাকেন প্রিয়া। মুলত আত্মবিশ্বাসী, প্রচলিত ধ্যান ধারনার বাইরে চিন্তাভাবনা করা যুবক-যুবতীরাই কর্মী হিসেবে প্রিয়ার বেশি পছন্দের। এই কর্মীদের দিনভর পরিশ্রমকেই ‘rocknshop.com’ এর সাফল্যের অন্যতম রহস্য বলে মনে করেন তিনি।

Kitsch খোলার আগে প্রিয়া বোস্টনে ইনভেস্টমেন্ট ব্যাঙ্কার হিসেবে কাজ করেছেন। মডেলিং, অভিনয়ের পাশাপাশি কাজ করেছেন পারিবারিক অটোমোবাইল ব্যবসাতেও। শুরুর দিকে প্রতিটি নতুন সংস্থাকে যেমন নানা বাধা বিপত্তি পেরোতে হয়, প্রিয়ার ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। তবে কোনও চ্যালেঞ্জের মুখেই দমে যাননি তিনি। তাঁর মতে চ্যালেঞ্জটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। সেই চ্যালেঞ্জকে জয় করার মত নিজের ওপর আস্থা রাখাটাই জরুরি।

জীবনে বহু সাফল্যের মুখ দেখলেও, আজও প্রিয়া সচদেব স্বপ্ন দেখেন। মহিলা শিল্পদ্যোগীদের তাঁর পরামর্শ, ‘স্বপ্ন দেখতে ভুলবেন না। আর সেইসঙ্গে স্বপ্নকে সার্থক করার বিশ্বাসটুকু নিজের ওপর রাখুন। আত্মবিশ্বাস আর উদ্যোগের মিশেলে, স্বপ্ন একদিন পৃথিবীর আলো দেখবেই।’