সফল হওয়ার কোনও বয়স হয় না। কিন্তু ছাপ্পান্ন বছর বয়সে নতুন উদ্যমে কোনও চ্যালেঞ্জ নেওয়ার ঘটনা খুব একটা শোনাও যায় না। তার ওপর আপনি যদি হন একজন পাক্কা গৃহবধূ। কেউ কেউ থাকেন যাঁরা এই চ্যালেঞ্জ নেওয়াটাকেই উপভোগ করেন। আর ঝুঁকিটা নিতে পারেন বলেই সফলও হন। তেমনই একজন – বিজয় হলদিয়া। এক বছরেরও কম সময়ে যোধপুরের এই গৃহিণীর ফুড ব্লগের ফ্যান ফলোয়িং প্রায় সতেরো হাজার ছুঁই ছুঁই। যার বেশিরভাগই প্রবাসী ভারতীয়।
গত বছর অগাস্টে মার্কিন নিবাসী মেয়ের কাছে ঘুরতে গিয়েছিলেন বিজয় হলদিয়া। সেখানে তিনি অনুভব করেন রান্নাবান্নার জন্য প্রবাসী ভারতীয়রা বড় বেশি ইন্টারনেট নির্ভরশীল। শুধু প্রবাসই নয়, দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়া বহু নিউক্লিয়ার ফ্যামিলির মধ্যেও রয়েছে এই নেট নির্ভরতা। মায়ের এই উপলব্ধির কথা জানতে পেরে মেয়েই তাঁকে পরামর্শ দেন একটি খাবারের ব্লগ খোলার। আর এভাবেই জন্ম নেয় 'জায়কা কা তড়কা'।
একান্নবর্তী পরিবারে বড় হওয়া বিজয়ের, ছোটবেলা থেকেই রান্নার প্রতি ঝোঁক ছিল। রান্নাঘরে মাকে সাহায্য করতে গিয়ে সেই ঝোঁকটাই ভালবাসায় পরিণত হয়। ভালোবাসা এতটাই গাঢ় হয়ে ওঠে যে হোম সায়েন্স নিয়েই স্নাতক হন বিজয়। মশলার ব্যবসায় যুক্ত পরিবারে বিয়ে হওয়ায় মশলাপাতির মধ্যেই দিনরাত কাটাতে হত। এভাবেই ধীরে ধীরে দক্ষ রাঁধুনি হয়ে ওঠেন বিজয়। দীর্ঘ চার দশক ধরে নিরামিষ রান্নার এই অভিজ্ঞতাই নিজের ব্লগে উজাড় করে দিলেন এই রাজস্থানী মহিলা।
শুরু করেছিলেন দিনে একটা করে রেসিপি দিয়ে। কিন্তু আস্তে আস্তে চাহিদা এতটাই বেড়েছে যে এখন প্রতিদিন গড়ে চারটে করে রেসিপি তৈরি করতে হয় তাঁকে। কৌতূহল হতেই পারে, যে খাবারের ব্লগ বা রান্না শেখানোর ইউটিউব সহ একাধিক টিভি চ্যানেলও তো রয়েছে। সেখানে হরবখত দেশি-বিদিশি রান্না দেখানো হয়। তাহলে বিজয় হলদিয়ার ব্লগের হিট হওয়ার কারণ কী !
আসলে কোনও বাড়তি আড়ম্বর নয়, ঘরে থাকা সাধারণ কিছু উপকরণ আর খুব সাধারণ মশলাপাতি দিয়েই তাক লাগানো সব পদ তৈরি করেন এই মহিলা। তাওয়া সব্জি, কর্ন পনির, ভেজ ট্যাকোস, ক্রিস্পি ক্যাবেজ রোলের মতো লোভনীয় পদ রয়েছে তাঁর তালিকায়। ব্রেকফাস্ট থেকে ডিনার, লাঞ্চ, মিষ্টি, আইসক্রিম এমনকি বাচ্চাদের রেসিপি – বিভিন্ন ধরণের খাবার রেঁধে সকলকে শেখান বিজয় হলদিয়া। কুটনো কোটা থেকে রান্নাবান্না, সব তিনি একাই করেন। আর ছবি তোলা, ইন্টারনেটে আপলোড করার মতো প্রযুক্তিগত দিকগুলো তাঁর স্বামী দেখাশোনা করেন। ব্লগ দিয়ে রান্না শেয়ার করা শুরু করলেও এখন একটা ফেসবুক পেজ রয়েছে বিজয় হলদিয়ার। তার সদস্য সংখ্যা প্রায় সতেরো হাজারের কাছাকাছি।
প্রথমদিকে অনেকেই ভ্রু কুঁচকেছিলেন। বিজয় হলদিয়া মনে করেন, হয়তো অনেকেই চেনা জগতের বাইরে পা রাখতে পছন্দ করেন না, সেই কারণেই নতুন কিছুকে মেনে নিতে তাদের সমস্যা হয়। কিন্তু ধৈর্য ধরে নিজের পথে এগিয়ে গেলে সাফল্য আসবেই। প্রশংসা অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করে, কিন্তু সমালোচনাকে বেশি মূল্যবান বলে তিনি মনে করেন। সমালোচনাই হল তবেই ভুলত্রুটিগুলো শুধরে উৎকর্ষের দিকে যাওয়া যেতে পারে বলে তাঁর মত।
নিজের এই রানাবান্নার জগৎ নিয়ে অনেক স্বপ্ন রয়েছে বিজয় হলদিয়ার। আগামিদিনে রেস্তোরাঁ, ই-বুক, মোবাইল অ্যাপ চালু করে নিজের রেসিপিগুলোকে আরও জনপ্রিয় করে তুলতে চান তিনি। আর স্বপ্নপূরণের রাস্তায় তাঁর অস্ত্র, কাজের প্রতি নিষ্ঠা আর আরও কঠোর পরিশ্রম।