কর্পোরেট অভিজ্ঞতা নিয়ে কৃষিকাজে বাংলার রুবি

কর্পোরেট অভিজ্ঞতা নিয়ে কৃষিকাজে বাংলার রুবি

Monday September 14, 2015,

3 min Read

২০১৩ সালে পরিবারের সঙ্গে ছুটি কাটাতে কয়েকদিনের আন্দামান সফর। সেটাই আপাদমস্তক বদলে দিয়েছিল জীবনের প্রতি রুবি রায়ের দৃষ্টিভঙ্গি। শুধুমাত্র ছুটি কাটানোর পরিকল্পনাই ছিল রুবির। তবে শেষ মুহূর্তে সেই ইচ্ছেয় জল ঢেলে দিল অফিসের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের একটি নির্দেশ। অনিচ্ছাসত্ত্বেও কলকাতা থেকে অফিসের ল্যাপটপ সঙ্গে করেই আন্দামান যেতে বাধ্য হলেন। ফলে ঠিক যে আশঙ্কা করছিলেন তাই সত্যি হল। পরিবারের অন্য সদস্যরা যখন আন্দামানের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করে কাটালেন, সেই সময়টাই রুবি ব্যস্ত থাকলেন অফিসের কাজে। এতদিন ধরে করা ছুটি কাটানোর সমস্ত পরিকল্পনা মাটি হল। তবে রুবিও সিদ্ধান্ত নিলেন, আর নয়। যেমন ভাবা, তেমন কাজ। ফিরে এসেই সটান পদত্যাগপত্র নিয়ে হাজির হলেন দফতরে। অফিসের সকলের অনুরোধ উপেক্ষা করে একটি নামি সংস্থার মার্কেটিং লিডারের চাকরি ছেড়ে দিলেন রুবি রায়।

image


শুরু হল রুবির জীবনের নতুন অধ্যায়। মাস দুয়েক ঘুরে বেড়িয়ে, বন্ধুদের সঙ্গে এবং সর্বোপরি নিজের সঙ্গে সময় কাটিয়ে ভালোই লাগলো। তারপরই শুরু হল অস্বস্তি। কাজ না করে হাঁপিয়ে উঠেছিলেন রুবি। তবে চাকরি করবেন না বলে স্থির করে ফেলেছিলেন। তাই বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সঙ্গে যুক্ত হলেন। সমাজের পিছিয়ে পড়া ছেলেমেয়েদের পড়াতে শুরু করলেন। অংশ নিলেন বিভিন্ন স্বাস্থ্য সচেতনতা শিবিরেও।

এই সময় স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ডিআরসিএসসি-র সংস্পর্শে আসেন রুবি। জৈব পদ্ধতিতে কৃষিকাজের গুরুত্ব এবং তার উপেযাগীতা সম্পর্কে কৃষকদের সচেতন করার কাজই করে থাকে এই সংস্থা। যেসব কৃষক এই পদ্ধতিতে কাজ করতে চান তাদের সহায়তাও করে ডিআরসিএসসি। পুরো বিষয়টা জানার পর আগ্রহ জন্মায়। এই সংস্থার সঙ্গে কাজ করতে শুরু করে দেন। এই কাজ করতে করতেই আধুনিক উদ্যানপালন এবং জৈব পদ্ধতিতে কৃষিকাজ সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করলেন রুবি রায়। 

'সংস্থার সদস্যদের সঙ্গে এই কাজেই পুরুলিয়া গিয়েছিলাম। জানতে পারলাম কীভাবে ভূমিক্ষয় এবং বৃক্ষচ্ছেদনের ফলে ধীরে ধীরে এখানকার মাটি অনুর্বর হয়ে উঠেছে। কী করে এই জেলাকে চাষাবাদের উপযোগী করে তোলা যায় সেবিষয়ে ভাবনাচিন্তা শুরু হল। এই মালভূমি এলাকায় ধাপ কেটে কেটে কৃষিকাজ অর্থাৎ স্টেপ কাল্টিভেশনের কাজ শুরু করলেন ওরা। তিনটি ধাপে প্রাকৃতিক জলাধার বানিয়ে সেখান থেকে কৃষিকাজের প্রয়োজনীয় জল সরবরাহের ব্যবস্থাও করা হল। এই পরিকল্পনা পুরোপুরি সফল হয়েছিল। কৃষকরা সেখানে সম্পূর্ণ জৈব পদ্ধতিতে ফসল ও শস্য চাষ করতে শুরু করেন। 

তখন থেকেই পুরুলিয়া জেলার কৃষকদের সঙ্গে একপ্রকার আত্মীয়তার সম্পর্ক হয়ে গিয়েছিল তাঁর। রুবি জানতে পারেন ওখানকার কৃষকরা প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত সবজি এবং শস্য উৎপাদন করছেন। অনেক ক্ষেত্রেই সেগুলি বিক্রি করতে না পারায় তাঁদের ক্ষতি হচ্ছিল। আর তখনই তাঁর মাথায় আসে কলকাতার বাজারে এই সবজি এবং ফসল বিক্রির কথা। প্রথমদিকে মাত্র ছ'জন গ্রাহক পেয়েছিলেন রুবি। সেই সংখ্যা এখন বাড়তে বাড়তে দুশো ছাড়িয়েছে। তাঁরা প্রত্যেকেই এখন সপ্তাহের শুরুতে প্রয়োজন অনুযায়ী রুবি রায়ের কাছে তালিকা পাঠান। রুবি সেই তালিকা পাঠিয়ে দেন কৃষকদের কাছে। একদিনের মধ্যেই তাজা সবজি এবং শস্য পৌঁছে যায় কলকাতায়। জনা ছয়েক ডেলিভারি বয় সেই জিনিস নিয়ে পৌঁছে যান ক্রেতাদের কাছে। কখনও কখনও জিনিস বাড়তি হলে তা অন্য জায়গাতেও বিক্রি করেন রুবি।

image


কর্পোরেট দুনিয়ায়, বিশেষত মার্কেটিং-এর ক্ষেত্রে ১২ বছরের অভিজ্ঞতা রয়েছে রুবির। সেই অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়েই এবার কৃষিকাজ এবং প্রযুক্তির মেলবন্ধন ঘটাতে তৎপর তিনি। সব ঠিক থাকলে আর কিছুদিনের মধ্যেই বাজারে নিজের ব্র্যান্ড আনতে চলেছেন রুবি রায়। তবে তাঁর সবচেয়ে বড় তৃপ্তির জায়গা, এখন তিনি নিজের মতো করেই দিন কাটাতে পারেন। অফিসের ল্যাপটপ আর তাতে কোনও বাধা নয়।