খালি পায়ে দৌড়ে দুনিয়া জয়ের স্বপ্ন দেখেন বিন্দু

খালি পায়ে দৌড়ে দুনিয়া জয়ের স্বপ্ন দেখেন বিন্দু

Wednesday August 19, 2015,

2 min Read

image


বিন্দু উপাধ্যায়। সাদামাঠা মেয়ে। বিশেষত্ব হল তিনি দৌড়ন। যে সে দৌড় নয়। খালি পায়ে ম্যারাথন। এভাবেই উইপ্রোর হাফ ম্যারাথনে দৌড়েছেন। আচমকা নয়। হাফ ম্যারাথনে দৌড়নোর আগে প্রায় একটানা সাত মাস খালি পায়ে দৌড়নোর অনুশীলন করেছেন বিন্দু। ভবিষ্যতেও একইভাবে দৌড়তে চান।

দৌড়োনর ইচ্ছাটা বিন্দুর নতুন নয়। আইআইটি মাদ্রাজে পড়াশোনার সময় তিনি সেখানকার পড়ুয়াদের ফরেস্ট গাম্পস নামে একটি দৌড়দলের অন্যতম শরিক ছিলেন। পরে এই দৌড়নোর ইচ্ছাটাই তাঁকে ভয়ানকভাবে পেয়ে বসে। সেখানেই নিজের ব্যক্তি ইচ্ছা-অনিচ্ছার গণ্ডি পেড়িয়ে আরও বড় করে ধরা দিতে থাকে দৌড়নোর ইচ্ছাটা। সেই থেকে নিজেকে অতিক্রম করে কোনও এক সুদূরের টানে আজও ছোটেন বিন্দু।

কলকাতা-মুম্বই সহ দেশের বিভিন্ন শহরে হাফ ম্যারাথন আয়োজিত হয়। কিন্তু বিন্দুর পছন্দের শহর বেঙ্গালুরু। এখানে বছরভর ছোটার ওপর নানান প্রশিক্ষণ শিবির সেখানে লেগেই থাকে। এই কারণেই শহরটা অন্য শহরের তুলনায় ব্যতিক্রমী করে ফেলে বলে মনে করেন বিন্দু। তবে ম্যারাথনেদৌড়নো অ্যাথলিট বলতে যা বোঝায়, বিন্দু তার ধারকাছ থেকেও যান না। এক্ষেত্রে খানিকটা স্থুলকায় চেহারার বিন্দুর স্বগতোক্তি, ছোটাটা শারিরীক আকৃতিরচাইতেও মনের জোরের ওপর অনেকটা নির্ভরশীল। দৌড়নোর জন্য সবসময় রোগাপাতলা হতে হবে, এমন তত্ত্বে তিনি বিশ্বাস রাখেন না।

ফরেস্ট গাম্পস, আইআইটি  মাদ্রাজ

ফরেস্ট গাম্পস, আইআইটি মাদ্রাজ


এভাবে ছুটতে ছুটতে এক নয়া লক্ষ্য পেয়ে যান বিন্দু। তামিলনাড়ুর দুস্থ ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার জন্য অর্থসাহায্য সংগ্রহ করাই তাঁর ছোটার অন্যতম লক্ষ্য হয়ে দাঁড়ায়। তাঁর মত, রাস্তার ধারে যে গরিব-দুস্থ শিশুরা সস্তার জিনিসপত্র বিক্রি করে, স্কুলে যেতে পারলে তারা শিক্ষায় আলোকিত হয়ে উঠতে পারে। এখন এইলক্ষ্যপূরণে ছুটে চলেন বিন্দু। ইতিমধ্যে তিনি ছেষট্টি হাজার পাঁচশো পঁচানব্বই টাকা অনুদান সংগ্রহ করেছেন। খুব শিগ্গিরই টাকার পরিমাণটা দেড় লক্ষে পৌঁছেযাবে বলে বিশ্বাস করেন তিনি। এসবেরই নেপথ্যে রয়েছে বেঙ্গালুরুর স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ইউরেকা চাইল্ড ফাউন্ডেশন। অনুদান হিসেব সংগৃহীত সব টাকাটাই এইসংস্থাকে দান করতে চলেছেন।

তবে নিজের স্বাস্থ্য নিয়ে বিন্দুর উদ্বেগের শুরুটা বেশ কিছুদিন আগে। যখন আচমকাই জানতে পারেন, তাঁর থাইরয়েডের সমস্যা রয়েছে।চিকিত্সকদের পরামর্শ মেনে সেইসময় ছোটা শুরু করেন বিন্দু। কিন্তু দুশো মিটার দৌড়তে গিয়েই তখন ক্লান্ত হয়ে পড়তেন তিনি। তবে থামেননি। একটানা দুবছর টানা প্রশিক্ষণ নেওয়ার পর তিনি ক্রমেই দৌড়নোর কৌশলটা রপ্ত করে ফেলেন। এখন একবার দৌড়তে শুরু করলে, কিলোমিটারের পর কিলোমিটার কখন পেরিয়ে যাচ্ছে, সেদিকে হুঁশ থাকে না বিন্দুর। নিজের অজান্তেই এই ছোটাকে কখন ভালবেসে ফেলেছেন জানেন না বিন্দু উপাধ্যায়। ছোটার স্বপ্ন আর সেইসঙ্গে পথশিশুদের শিক্ষার আলোয় আলোকিত করে তোলার স্বপ্ন আজ মিলেমিশে এক হয়ে গিয়েছে। এসবের প্রেক্ষিতেই বিন্দুর পরামর্শ ভাববেন না, পিছু ফিরে তাকানোরও প্রশ্ন শুধু একটু ছুটুন।