ধানের তুষকে কাজে লাগাচ্ছে ব্রিজডটস

ধানের তুষকে কাজে লাগাচ্ছে ব্রিজডটস

Monday October 05, 2015,

4 min Read

মাঝেমধ্যেই নতুন প্রযুক্তি সম্পর্কিত রিসার্চ ও ডেভেলপমেন্টের জন্য প্রফেসর, বিজ্ঞানীদের কাছে গিয়ে থাকে বিভিন্ন সংস্থা।কিন্তু মনের মতো রেজাল্ট পায় না সংস্থাগুলি। চাহিদা ও প্রোডাক্টের মধ্যে একটা ফাঁক রয়ে যায়। ইন্ডাস্ট্রি ও অ্যাকাডেমিয়ার মধ্যে সেই ফাঁক ভরাট করতেই গড়ে উঠেছে টেকনোলজি রিসার্চ স্টার্টআপ Bridgedots. ২০১১ সালে সংস্থাটি গড়ে তোলেন IIT, BHU-এর দুই পাশআউট তন্ময় পান্ডিয়া এবং নিখর জৈন। বড়-বড় শিল্পসংস্থা যে সব টেকনিক্যাল সমস্যার মুখোমুখি হয় তার সমাধানে প্রযুক্তিগত সহায়তা দিয়ে থাকে ব্রিজডটস। এ কাজে অবশ্য বিজ্ঞানী-প্রফেসরদের সাহায্য নিয়ে থাকেন তন্ময়রা।

ব্রিজডটসের কাজের মূল ক্ষেত্র হচ্ছে পলিমার, কেমিক্যালস, অ্যাডভান্সড মেটিরিয়ালস ও বর্জ্য। এই সব ক্ষেত্রে টেকনিক্যাল সমস্যার জায়গাগুলি খুঁজে বার করে প্রযুক্তিগত সহায়তা দেওয়ার চেষ্টা করে ব্রিজডটস। এ কাজে পরামর্শদাতা হিসাবে সহায়তা নেওয়া হয় প্রফেসর বা বিজ্ঞানীদের। পরামর্শের বিনিময়ে অবশ্য তাঁদের টাকা দিয়ে থাকে ব্রিজডটস। কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের বি টেক তন্ময়ের একটি গ্লোবাল প্রকিউরমেন্ট কনসালটেন্সিতে কাজ করার অভিজ্ঞতা ছিল। সেই অভিজ্ঞতাই তিনি কাজে লাগাচ্ছেন তাঁর স্টার্টআপে।


তন্ময় পান্ডিয়া

তন্ময় পান্ডিয়া


গোড়ার কথা

IIT BHU, বারাণসীতে ব্রিজডটসের সূত্রপাত। সিড ফান্ডিং হিসাবে ইনস্টিটিউট থেকে মিলেছিল ১৪ লক্ষ টাকা। বর্তমানে সংস্থার দুটি অফিস এবং একটি ল্যাব রয়েছে। দুটি অফিসের একটি নয়ডা এবং অন্যটি ইনকিউবেশন সেন্টার বারাণসীতেই। শুধু ভারত নয়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্য ও অস্ট্রেলিয়াতেও পরিষেবা দিয়ে থাকে এই সংস্থা। গত চার বছরে বর্জ্য পদার্থ, কেমিক্যালস, অ্যাডভান্সড কোটিংস, কনস্ট্রাকশন কেমিক্যালস, কসমেটিকস ক্ষেত্রে ১০টি প্রোডাক্ট ডেভেলপ করেছে ব্রিজডটস। বর্তমানে সংস্থা R & D সহায়তা দিয়ে থাকে আটটি সংস্থাকে। ব্রিজডটসের টিম অবশ্য খুব বড় নয়। সবমিলিয়ে ৬ জন সদস্য। অধিকাংশই IIT থেকে উঠে আসা। প্রযুক্তিকে প্রি-কমার্শিয়াল স্কেলে ডেভেলপ করে সংস্থা। এরপর তার বাণিজ্যিক ব্যবহারের জন্য ক্লায়েন্টের হাতে তুলে দেওয়া হয়। কোনও একটি বিশেষ প্রযুক্তিগত প্রকল্পের জন্য ৩০০ থেকে ১০০০ ঘণ্টা কাজ করতে হয়। যার জন্য খরচ পড়ে ৩ থেকে ১০ লক্ষ টাকা।

বিজনেস মডেল

বিভিন্ন সংস্থাকে R & D সহায়তা দিয়ে থাকে ব্রিজডটস। যদিও সেটা তাদের মূল বিজনেস মডেল নয় বলেই জানাচ্ছেন তন্ময়। ক্লায়েন্টদের জন্য যেমন প্রযুক্তির উন্নয়ন ঘটানো হয়, ঠিক সেভাবেই সংস্থার নিজের জন্যও প্রযুক্তি নিয়ে কাজ হয়ে থাকে। আসলে এর পিছনে রয়েছে একটা ভাবনা। প্রযুক্তির উন্নয়ন ঘটিয়ে বাণিজ্যিকীকরণ। যা সব অর্থেই বিরাট অবদান রাখতে পারে বলে মনে করেন তন্ময়।

এমনই দুটি টেকনোলজি নিয়ে কাজ শুরু করেছিল ব্রিজডটস। প্রথমটি পৌর এলাকায় সলিড ওয়াষ্ট ট্রিটমেন্ট এবং অন্যটি চালের তুষ ছাই (Rice husk ash) থেকে সিলিকা বার করা। ব্রিজডটস প্রযুক্তির এমনই উন্নয়ন ঘটায় যে তুষ ছাই থেকে আরও ভালো মানের সিলিকা বের করা সম্ভব হয়। হাই ক্যালোরি এবং কম দামের জন্য এনার্জির ভাণ্ডার হিসাবে চালের তুষ ব্যবহার করা হয় বায়োমাস বেসড পাওয়ার প্ল্যান্টস এবং বয়লারে। কিন্তু ব্যবহার অতি সামান্যই। বিশ্বে প্রতি বছর চাল উৎপাদন হয় ৫০ কোটি টন। যা থেকে তুষ বের হয় ১০ কোটি টন। এই ১০ কোটি টন তুষের কিছুটা শক্তি উৎপাদনে ব্যবহৃত হলেও বাকিটা ভূমি ভরাটের কাজে বা খোলা জায়গায় ফেলে দেওয়া হয়। ফলে পরিবেশের ক্ষতি হয়।

এই অব্যবহৃত চালের তুষ থেকে সিলিকা বার করা গেলে বহুমুখী সুফল মিলবে। এনার্জি এফিসিয়েন্ট গ্রিন টায়ার তৈরির কাজে খুবই সহায়ক সিলিকা। এর ফলে গাড়িতে জ্বালানির সাশ্রয় হবে ৫ থেকে ৭ শতাংশ। সবথেকে বড় কথা পরিবেশ বাঁচবে। গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমণ কমাবে এই গ্রিন টায়ার। তন্ময় আরও বললেন, "আমাদের এই উন্নত উৎপাদন প্রযুক্তিতে এনার্জির কম ব্যবহার হবে এবং পরিবেশের লাভ হবে। এখন যেভাবে উৎপাদন চলে সেই তুলনায় আমাদের এই উৎপাদন প্রযুক্তি ১৫-২০ শতাংশ বেশি লাভদায়ক। বিশ্বের কয়েকটি সংস্থার মধ্যে আমাদের সংস্থাও রয়েছে যারা চালের তুষ থেকে গ্রিন সিলিকা বের করে। একটি নামজাদা টায়ার কোম্পানি এই গ্রিন সিলিকা পরীক্ষা করে ছাড়পত্রও দিয়েছে। আমরা এর পেটেন্টের জন্য আবেদনও জানিয়েছি"।

ব্রিজডটসের স্বীকৃতি

ভালো কাজের জন্য একাধিক স্বীকৃতি পেয়েছে তন্ময়-নিখরদের সংস্থা। এর মধ্যে রয়েছে DST-Lockheed Martin India Innovation Growth Program Award 2015. ভারত থেকে যে আটটি কোম্পানি

International Business Development by Global Commercialization Group of University of Texas থেকে ডাক পেয়েছে তার মধ্যে রয়েছে ব্রিজডটস। Global Cleantech Innovation Program 2015-এর মঞ্চেও সাধুবাদ পেয়েছে সংস্থা।

আগামীর লক্ষ্য

সংস্থার বার্ষিক বৃদ্ধির হার এখন ১০০ শতাংশের বেশি। আর চলতি অর্থবর্ষের শেষে লাভের খাতায় ৬০ লক্ষ টাকা জমা পড়বে বলেই সংস্থার আশা। আগামী তিন বছরে উৎপাদনের হার বাড়িয়ে ৭ হাজার টনে নিয়ে যেতে চায় সংস্থা এবং যার ফলে রেভিনিউ হবে প্রায় ৫০ কোটি টাকা। দৃঢ় গলায় একথাই জানালেন তন্ময়। দেশের প্রথম commercial-scale pilot plant তৈরির জন্য কয়েকটি লগ্নিকারী সংস্থার সঙ্গেও কথা চলছে ব্রিজডটসের।