ম্যাক্সের মিশন আপনারা এগিয়ে এলেই পসিবল

ভারতের ধুলো না মেখেই ভারতের প্রেমে পড়ে গিয়েছিলেন ম্যাক্স মুলার। তার শদুয়েক বছর পর ভারতের পথে পথে ঘুরে বেড়াচ্ছেন আরেক জার্মান যুবক। নাম ম্যাক্স চন্দ্রা। ভালবেসে ফেলেছেন এই দেশের ধুলো কাদা আর মানুষকে।

ম্যাক্সের মিশন আপনারা এগিয়ে এলেই পসিবল

Saturday August 22, 2015,

3 min Read

image


৬ হাজার ১৮৬ কিলোমিটার। পশ্চিম থেকে পূর্ব। দক্ষিণ থেকে উত্তর। পিঠে কুড়ি কিলোর বস্তা নিয়ে ২৫৬ দিনে পায়ে হেঁটে প্রায় গোটা ভারত চষে ফেলেছেন ম্যাক্স চন্দ্রা। চলার পথে আহত হয়েছেন। কেটে ছড়ে গেছে। একেক সময় এতো যন্ত্রণা হয়েছে মনে হয়েছে মারাই পড়বেন। তবু হাঁটা থামাননি। আর হাঁটতে হাঁটতেই টের পেয়েছেন ভারতের নিহীত সত্যি। এই দেশের শিশু আর মহিলারা দিনের পর দিন, মাসের পর মাস, বছরের পর বছর, খালি পায়ে মাইলের পর মাইল হাঁটেন। শুধু জলের জন্য। মাথায় কুড়ি কিলোর কলসি নিয়ে হাতে পাঁচ দশ কিলোর জ্যারিক্যান নিয়ে দূর দূর থেকে জল বয়ে আনে। ম্যাক্স নিজের যন্ত্রণা দিয়ে ওঁদের যন্ত্রণা টের পান। আর তাই লেগে পড়েছেন ওদের যন্ত্রণা লাঘব করার ব্রতে। তাঁর সীমিত সাধ্যে ইতিমধ্যেই গ্রামের মহিলাদের ৪০ টি ওয়াটার হুইল কিনে দিয়েছেন ম্যাক্স।

কিন্তু সেটা প্রয়োজনের তুলনায় ভীষণই কম। তাই সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে অনুদান সংগ্রহ করতে শুরু করেছেন ম্যাক্স। কম করে ১৪০ টি জলচক্র বা ওয়াটার হুইল বিলি করতে চান। তার খরচ তুলতেই অনুদান সংগ্রহের কাজ করছেন ম্যাক্স।

ম্যাক্সের দেওয়া জলচক্র  পেয়ে মুক্তির স্বাদ পাচ্ছেন মহিলারা

ম্যাক্সের দেওয়া জলচক্র পেয়ে মুক্তির স্বাদ পাচ্ছেন মহিলারা


ম্যাক্সের জন্ম জার্মানীতে, মা ভারতীয় বাবা জার্মান। জীবনের অধিকাংশ সময়টাই কাটিয়েছেন ব্রিটেনে। ২০০৫ এ একটি কোম্পানির সিইও হিসাবে প্রথমবার ভারত আসেন। ম্যাক্সের মা বেঙ্গালুরুর মেয়ে। সেখানেই তিন পুরুষের ভিটে। 

লন্ডনে প্রায় পনের বছর কাটিয়েছেন। কিন্তু‌‌ ভারতের টান অনুভব করায় লন্ডনের চাকরি ছেড়ে চলে এসেছেন ভারতে। প্রথমে গোয়ায় থাকতে শুরু করেন। সিদ্ধান্ত নেন ভারতের দৈর্ঘ্য এবং প্রস্থে ২০,০০০ কিলোমিটার পদযাত্রা করবেন।

ভারতীয় ঐতিহ্যের টানে এরকম পদযাত্রাই তিনি করতে চেয়েছিলেন।

গড়ে তোলেন ‘One Step at a Time Charitable Foundation’। মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহন করে এই সংস্থা। ভারতের হতদরিদ্র মানুষের পাশে দাঁড়াতে তহবিল তৈরির কাজে মগ্ন ম্যাক্স। 

পদযাত্রার প্রথম ধাপ শুরু হয় গোয়া থেকে চেন্নাই। দীর্ঘ ১,৮৭৫ কিলোমিটারের এই যাত্রাপথ কর্নাটক, কেরালা থেকে তামিলনাডু হয়ে ৭০ দিনে শেষ করেন তিনি। প্রতি ছয় পদযাত্রার পর ম্যাক্স দু’মাসের জন্য বিশ্রাম নেন। তাঁর পরবর্তী কঠিন পদযাত্রার আগে পর্যন্ত তিনি তাঁর সেবামুলক কাজগুলির বিষয়ে নতুন পরিকল্পনা এবং চিন্তা ভাবনাগুলিতে মনোযোগ দেন। 

তাঁর প্রথম পদযাত্রার সাফল্যের পর তিনি গোয়া, কর্নাটক, কেরালা এবং তামিলনাডুতে তাঁর পরিকল্পনাগুলিকে এক এক করে রূপ দিতে শুরু করেন। কর্নাটকের কারওয়ারে মূক এবং বধিরদের একটি স্কুলে আসবাব বিলি করেন, উত্তর গোয়ায় প্রচীন বুনন শিল্পের পুনরুজ্জীবনের প্রক্রিয়া শুরু করতে উদ্যোগ নেন। ব্যাঙ্গালোরের শহরতলীর একটি অনাথ আশ্রমের শিশুদের জন্য শয্যার ব্যবস্থা করেন। সাইক্লোন-পীড়িত তামিলনাডুর কুদলোর শহরের দক্ষিণে থানেতে স্থানীয় জেলেদের গ্রামে খাদ্য এবং পানীয় জলের ত্রাণ পৌঁছে দেন। কেরালায় যুবকদের জন্য একটি কলাকেন্দ্র স্থাপন করে আসেন। তাঁর একক প্রচেষ্টার পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন স্থানীয় মানুষেরাই। তাঁরাই বিভিন্ন সময় ম্যাক্সকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসেন। সাহায্য জোগাড় করতে সবরকম উপায়ই নিচ্ছেন। যেমন এবার জলচক্রের জন্য অনুদান চাইছেন সোশ্যাল মিডিয়ায়।

    Share on
    close