কফিপানের আসর থেকে যাত্রা শুরু 'ডেকোগ্রাফি'-র

কফিপানের আসর থেকে যাত্রা শুরু 'ডেকোগ্রাফি'-র

Wednesday September 16, 2015,

3 min Read

কফি খেতে খেতে আড্ডা মারাই ছিল উদ্দেশ্য। আর সেই আড্ডা থেকেই উঠে এল দারুন এক পরিকল্পনা। গৃহসজ্জার উপকরণের পসরা সাজিয়ে হাজির হল 'ডেকোগ্রাফি'। শুরুটা হয়েছিল খুব ছোটভাবেই। তবে, সাড়া মিলেছিল ভালো। সেখান থেকেই এই ব্যবসাকে ই-কমার্স প্লাটফর্মে বড় করার পরিকল্পনা। তবে 'ডেকোগ্রাফি'-র প্রতিষ্ঠাত্রী দুই বান্ধবী করিশ্মা শাহ এবং নিশি ওঝা কারওরই ব্যবসা সম্পর্কে কোনও অভিজ্ঞতা ছিল না। পড়াশুনো শেষ করে দুজনেই তখন নিজেদের কেরিয়ার গড়ার কথা ভাবছেন। কেউই ভাবতে পারেননি, নিছকই গল্পের ছলে করা একটি পরিকল্পনা থেকে তাঁরা হয়ে উঠবেন উদ্যোগপতি। 

এখনও পর্যন্ত 'ডেকোগ্রাফি'-র যাত্রাপথ বেশ মসৃণ। প্রতি দু'মাস অন্তর তাঁদের কালেকশনে নতুন নতুন জিনিস যোগ করেন করিশ্মা এবং নিশি। ক্রেতাদের পছন্দ অনুযায়ী জিনিস রাখেন তাঁরা। অনেক সময় গ্রাহকেরা তাঁদের পছন্দ অনুযায়ী অর্ডার পাঠালে একেবারে নতুনভাবে জিনিস বানিয়েও দেওয়া হয় তাঁদের জন্য। দামেও কম, আবার ঘর সাজানোর পাশাপাশি অন্য কাজেও ব্যবহার করা যাবে, এমন জিনিসই তৈরি করে 'ডেকোগ্রাফি'। এখনও পর্যন্ত শুধুমাত্র অনলাইনেই পাওয়া যায় এই সংস্থার জিনিস। তবে খুব শীঘ্রই মুম্বই-তে একটি 'রিটেল স্টোর' খুলতে চলেছেন করিশ্মারা।

করিশ্মার কাহিনী

মুম্বই শহরের একটি সাধারণ পরিবারে জন্ম করিশ্মা শাহ-র। বাবা ব্যবসায়ী, মা গৃহবধূ। স্কুলের পর 'ফিন্যান্স' নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্টের পড়তে যান করিশ্মা। একবছর অডিটর হিসেবে কাজও করেন। এরপর Masters in International Management Entrepreneurship পড়তে যুক্তরাজ্যে পাড়ি। পড়াশুনো শেষ করে মুম্বই ফিরে আসেন তিনি। ফরাসি ভাষা পড়তে এবং পড়াতে শুরু করেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে থাকাকালীন 'মাস মিডিয়া' নিয়ে ৬ মাসের একটি কোর্স করেছিলেন করিশ্মা। সেখানেই তাঁর সঙ্গে প্রথমবার আলাপ হয় নিশি ওঝার।

করিশ্মা শাহ

করিশ্মা শাহ


দীর্ঘদিন সেভাবে যোগাযোগ না থাকলেও মুম্বই ফিরে অন্য কয়েকজন বন্ধুর মাধ্যমে ফের নিশির সঙ্গে দেখা। নিশি তাঁর এক বন্ধুকে ফরাসি ভাষা শিখতে করিশ্মার কাছে পাঠান। ঘটনাচক্রে সেই বন্ধুর বাড়িতে ইন্টিরিয়ার ডিজাইনিংয়ের কাজ করছিলেন নিশি। সেখানেই ঘনঘন দেখা হতে থাকে দুই বান্ধবীর। তখনই তাঁরা বুঝতে পারেন, নতুন একটি ঘর সাজাতে গেলে কত রকমের জিনিস দরকার হতে পারে। কফিশপে আড্ডা মারতে মারতে একদিন এইসব জিনিসপত্র নিয়ে কথা বলতে বলতেই দুজনে ভাবলেন, 'এইসব জিনিসপত্র বিক্রি করতে শুরু করলে কেমন হয়? ব্যস, আর একটু ভাবনাচিন্তা করতেই দুজনে মিলে ডেকোগ্রাফি তৈরি করে ফেললাম', বললেন করিশ্মা।

পরিচালক থেকে উদ্যোগপতি: নিশির সফর

মাস মিডিয়া কোর্স করার পর বালাজি টেলিফিল্মস-এ ইন্টার্ন হিসেবে কাজ শুরু করেন নিশি ওঝা। সেখান থেকে পদোন্নতি হতে হতে ক্রিয়েটিভ হেড। এরপর ওই প্রযোজনা সংস্থার বহু নামকরা ধারাবিহক পরিচালনা করেছেন নিশি। তবে নিজের কাজে কখনওই খুব একটা সন্তুষ্ট হতে পারেন নি। সবসময় নিজে থেকে কিছু করার ইচ্ছে তাড়া করে বেড়াচ্ছিল। অফিসের এক সিনিয়রের উপদেশ শুনে ইন্টিরিয়র ডিজাইনারের কাজ করতে শুরু করেন। তবে হাতেকলমে এবিষয়ে কোনও শিক্ষা বা অভিজ্ঞতা, কোনওটাই তাঁর ছিল না।

নিশি ওঝা

নিশি ওঝা


'আমি আর করিশ্মা দুজনেই নিজে থেকে কোনও সংস্থা গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখতাম। আর সেই স্বপ্নই আমাদের দুজনকে একসঙ্গে কাজ করতে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছিল', জানালেন নিশি। তাঁর মতে, দুজনে কাজ করার অনেক সুবিধা। একজনের দুর্বলতাই আর একজনের শক্তি হয়ে উঠতে পারে। এখন ডেকোগ্রাফির অপারেশন্‌স আর ম্যানেজমেন্টের দিকটা দেখেন করিশ্মা। আর নিজের সৃজনশীল ভাবনাচিন্তাকে কাজে লাগিয়ে নতুন নতুন জিনিসপত্র বাজারে আনার দায়িত্ব নিশির উপর।

প্রথমদিকে বেশ কিছু সমস্যার মুখে পড়তে হয়েছিল বছর আঠাশের এই দুই তরুণীকে। কাঁচামাল জোগাড় থেকে সরবরাহ, নতুন বিক্রেতা খুঁজে বের করা - এসবই ছিল বেশ কঠিন। করিশ্মার মনে পড়ে,'কফিশপে মাথায় আসা পরিকল্পনা থেকে এভাবে কাজ শুরু করা, প্রথমদিকে বাড়িতে বসেই কাজ করা, তারপর নিজেদের ছোট্ট একটা অফিস তৈরি করা। প্রথম ৬-৮ মাস আমাদের কেউ সেভাবে গুরুত্বই দেননি। অনেকেই ভাবছিলেন আমরা বিয়ে করার আগে কিছু সময় নষ্ট করছি মাত্র'। তবে নিশি এবং করিশ্মা দুজনেই জানেন, আজ আর তাঁদের সম্পর্কে কেউ একথা ভাবে না। ই-কমার্সের ক্ষেত্রে নতুন পথের দিশারি 'ডেকোগ্রাফি' এখন সকলের মনে নিজের জায়গা করে নিয়েছে।