কলকাতায় প্রোগ্রামিং সংস্কৃতি আনতে অনুরাগের CodeBlix

কলকাতায় প্রোগ্রামিং সংস্কৃতি আনতে অনুরাগের CodeBlix

Friday March 18, 2016,

3 min Read

কথায় বলে কালচার শক। কোডিং শব্দটা শুনলেই যেভাবে আঁতকে ওঠেন কলকাতার কম্পিউটার সায়েন্স জানা ছেলে মেয়েরা তাতে মনে হয় কলকাতার এই কালচার শকটা দরকার। ছোটমাঝারি হাজার একটা স্টার্ট আপ গজিয়ে উঠছে কলকাতায়। বেঙ্গালুরু চেন্নাইয়ের সঙ্গে পাল্লা দেওয়ার জায়গায় না পৌঁছলেও কলকাতার অগ্রগতি বেশ ভালো। শুধু যে পেটুক বাঙালির পছন্দের ফুড স্টার্টআপ, বা আঁতুকি মানুষের জন্যে হেল্থ স্টার্টআপই ক্লিক করছে তা নয়। গজিয়ে উঠেছে অনেক টেক স্টার্টআপও। উদ্যোগীদের অধিকাংশই ইঞ্জিনিয়ারিং এর ছাত্র। এই প্রতিযোগিতার বাজারে যারা প্রযুক্তিতে চোস্ত তাঁরাই এগোচ্ছেন। শুধু স্টার্টআপ তৈরির জন্যেই নয় চাকরি পেতেও প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজে তুখোড় হওয়া জরুরি। কিন্তু প্রথাগত ইঞ্জিনিয়রিং কলেজে অত্যাধুনিক হওয়ার তুখোড় হওয়ার অবকাশ কম। 

আর সেই কথা মাথায় রেখেই অনুরাগ প্রজাপত তৈরি করেছেন তাঁর স্টার্টআপ কোড ব্লিক্স। ভালো নাম, ব্লিক্স ভেঞ্চার প্রাইভেট লিমিটেড। তাদের টার্গেট অডিয়েন্স মূলত এই রাজ্যের ইঞ্জিনিয়ারিং ক‌লেজের পড়ুয়ারা। ঠিকানা কলকাতা।

image


মূলত অনুরাগ প্রজাপতের মস্তিষ্কপ্রসূত এই উদ্যোগ। অনুরাগের সঙ্গে রয়েছেন অন্য চারজন সহযোগী। ওঁরা হলেন ভরত সিং, দীপক কুনওয়ার, শেখ মনজার আলম ও দেবাশিস হালদার। অনুরাগ নিজে সংস্থার চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার বা সিইও।

সম্প্রতি ব্লিক্স ভেঞ্চার প্রাইভেট লিমিটেডের জন্ম হয়েছে। কী কাজ করছে ব্লিক্স ভেঞ্চার, তা জানালেন অনুরাগ। সায়েন্স সিটির মিনি থিয়েটারে সেদিন চলছিল ব্লিক্স ভেঞ্চারের কনফারেন্স। ব্যস্ত ছিলেন অনুরাগ। প্রায় গোটা ‌ত্রিশেক ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের পড়ুয়ারা যোগ দিয়েছিলেন কনফারেন্সে। অনুরাগ জানালেন, এই রাজ্যের যে সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রযুক্তি বিষয়ক পঠনপাঠন হয়, সেখানে একটা জিনিসের বড়়ই অভাব। সেটা হল যথাযথ প্রোগ্রামিং কালচার না থাকা।

অনুরাগ নিজেও ইঞ্জিনিয়ার। তাঁরও পঠনপাঠনও এই রাজ্যেই। অনুরাগ বললেন, কলেজে যথাযথ প্রোগ্রামিং কালচার না থাকায় যেটা হয় তা হল, পড়ুয়ারা যথেষ্ট দক্ষতাসম্পন্ন হয়ে উঠতে পারেন না। পরে প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়েন। এই পরিস্থিতি থেকে ছাত্রছাত্রীদের উদ্ধার করার লক্ষ্যেই ব্লিক্স ভেঞ্চার কাজ করছে। আর এই কাজে ব্লিক্স ভেঞ্চার সহযোগী হিসাবে পাশে পেয়েছে ক্যাম্পাসকর্মা নামে আর একটি স্টার্ট আপ সং্স্থাকে। এক্ষেত্রে ক্যাম্পাসকর্মার ভূমিকা হল বিভিন্ন ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজগুলিকে এক ছাতার নীচে নিয়ে আসা। তারপর ব্লিক্স ভেঞ্চারের মাধ্যমে ছাত্রছাত্রীদের প্রোগ্রামিং কালচার সম্পর্কে অবহিত করানো।

ব্লিক্স ভেঞ্চারের অন্য এক কর্তা শেখ মনজির আলম জানালেন, কয়েক বছর আগে ক্যাম্পাসকর্মার কৰ্ণধার রহিত গুপ্তা ভারতে প্রথম ইন্টারকলেজ সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইট তৈরি করেন। যার মাধ্যমে বিভিন্ন কলেজের পড়ুয়ারা কলেজগুলির অভ্যন্তরীণ কাজকর্ম সম্পর্কে জানতে পারছেন। ব্লিক্স ভেঞ্চার প্রধানত প্রোগ্রামিং কালচার তৈরি করার জন্য নানা সময়ে বিভিন্ন ইভেন্টের আয়োজক। যে সমস্ত ছেলেমেয়ে প্রযুক্তি নিয়ে পঠনপাঠন করছেন তাঁদের ভিতর প্রোগ্রামিং কালচার তৈরি করে তাঁদের আইআইটি-র মতো প্রিমিয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজগুলির পড়ুয়াদের সমকক্ষ করে গড়ে তোলার কাজটি করছে ব্লিক্স ভেঞ্চার। এজন্য ব্লিক্স ভেঞ্চার বছরভর কনফারেন্স করে ক্লাস নেওয়ার কাজটি চালাবে।

কোডব্লিক্স হল ব্লিক্স ভেঞ্চারের প্রথম প্রোডাক্ট। অনুরাগ দাবি করলেন, বিভিন্ন ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ পড়ুয়ারা ছাড়াও ডেভলপাররা অথবা নিয়োগকারী সংস্থাগুলি কোডব্লিক্স ব্যবহার করে আরও বেশি আত্মবিশ্বাস লাভ করতে পারেন।‌ আদতে কোডব্লিক্স কী, তা জানতে চাইলে অনুরাগ বলেন, কো‌ডব্লিক্স আসলে অনলাইন স্কিল অ্যাসেসমেন্ট টুল। যা ব্যবহার করতে পারেন পরীক্ষকরা কিংবা নিয়োগকারী সংস্থাগুলিও। তাছাড়া কোডব্লিক্স ব্যবহার করতে পারেন সফটওয়্যার পেশাদাররাও।

তরুণ প্রজন্মের মানুষ অনুরাগ জানালেন, ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার সময় তিনি নিজে যে সমস্যাগুলির মুখে পড়েছিলেন, পরবর্তী সময়ে পড়ুয়ারা যাতে সেই বাধা সহজে কাটিয়ে উঠতে পারেন, সেই উদ্দেশ্যই তাঁকে একটি কোম্পানি গড়ার সাহস জুগিয়েছে। এখন সাড়া মিলছে ভালোই। সত্যিই তাই! সায়েন্স সিটি অডিটোরিয়ামের মিনি থিয়েটারের বেশিরভাগ আসনই সেদিন পূর্ণ ছিল। কোডব্লিক্সের ক্লাস করছিলেন বিভি‌ন্ন ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের প্রায় ২৫০-৩০০জন পড়ুয়া। ওঁরা জানালেন, এধরনের ওয়ার্কশপ তাঁদের পেশাদা‌রি হতে সহায়তা করবে। দক্ষতাও বাড়াবে। তাছাড়া, কোডব্লিক্স বিষয়টিও সহজপাচ্য।

অনুরাগ ও তাঁর অন্য সতীর্থরা আরও এগিয়ে যেতে চান। ছাত্রছাত্রীদের কাছ থেকে ভালো সাড়া পাওয়ার অন্তর থেকেও আরও কাজের প্রেরণা পাচ্ছেন ওঁরা। কোডব্লিক্সের মতো প্রোগ্রামিং কালচার পড়ুয়াদের কাছে জনপ্রিয় হওয়ার পরে ব্লিক্স ভেঞ্চারের পরবর্তী লক্ষ্য সম্পর্কে জানতে চাইলে আগেভাগে অনুরাগ তা ভাঙতে চাননি। তবে তিনি জানিয়েছেন, প্রযুক্তি সম্পর্কিত কিছু প্রশ্নের ঠিকঠাক উত্তর দেওয়া মানেই কিন্তু সফটওয়্যার ল্যাঙ্গুয়েজ স্কিল তৈরি হয় না। বরং, সফটওয়্যার ল্যাঙ্গুয়েজ স্কিল বলতে নির্দিষ্টভাবে কোডিং টেস্টকে বোঝায়। সেই লক্ষ্যেই আরও পরিণত হচ্ছে অনুরাগ ও তাঁর ব্লিক্স ভেঞ্চার।