গল্প লিখে হিন্দি বইয়ের খরা কাটাচ্ছেন ডিপি

গল্প লিখে হিন্দি বইয়ের খরা কাটাচ্ছেন ডিপি

Thursday November 19, 2015,

5 min Read

টু স্টেটস, হাফ গার্লফ্রেন্ড, দ্য থ্রি মিসটেকস অব মাই লাইফ-ভারতীয় মধ্যবিত্ত যুসমাজে এই বইগুলি হটকেক। একটা বই শেষ হতেই অপেক্ষায় থাকে চেতন ভগত আবার কবে নতুন গল্প নিয়ে হাজির হচ্ছেন। ইংরেজিতে লেখা এই বইগুলি গোগ্রাসে গিলেছেন বই প্রেমিকরা। চেতন ভগত যখন দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন ঠিক তখন আরও এক যুবক নিভৃতে আরেকটা কাজ সারছিলেন। প্রায় চেতন ভগত স্টাইলে হিন্দিতে লিখে ফেললেন সিম্পলি পুট, টার্মস অ্যান্ড কন্ডিশন অ্যাপ্লাইয়ের মত বই। দিব্য প্রকাশ, ডিপি নামেই বেশি পরিচিত। চেতন ভগতের এই রমরমা বাজারেও ডিপি হিন্দিতে গল্প লেখার সাহস দেখিয়ে চমকে দিয়েছেন বই পাড়াকে।

image


অনেকটা চেতন ভগতের মতোই, ভারতীয় মধ্যবিত্তদের প্রতিদিনকার লড়াই, সহজ সরল ভাষায় কথোপকথনের ছাপ রয়েছে ডিপির বইগুলোতে। নিজের বইয়ের বাজার ধরতে দারুণভাবে ব্যবহার করেছেন ইউটিউবকে, যেগুলি এখন প্রায় ভাইরাল। ইওর স্টোরিকে জানালেন তাঁর উত্থানের গল্প।

বাবার বদলির চাকরি। তাই ঘুরে ঘুরে নানা জায়গায় তাঁর বেড়ে ওঠা। হারদই, শাহজাহানপুরের মতো ছোট ছোট শহরে ঘুরে বেশ মজায় ছেলেবেলা কেটেছে। হতে পারে সেখান থেকেই একটা প্রশ্ন তাঁর মনে তৈরি হয়েছে, কেন বেশিরভাগ ভারতীয় হিন্দি সাহিত্য পড়া বন্ধ করে দিয়েছেন? সম্ভবত এই প্রশ্নই তাঁকে সহজ ভাষায়, বিনোদনে ভরা হিন্দিতে বই লেখায় অনুপ্রেরণা যুগিয়েছে।

দিব্যর মনে আছে ক্লাস টুয়েলভে স্কুল ফিস দিতে হত মাসে ১.৮০ পয়সা। হিন্দি মিডিয়ামের স্কুলে পড়াশোনা করে লখনউতে আইআইটি কোচিং-এ যখন ভর্তি হলেন, সেটা ছিল একেবারে ভিন্ন একটা জগৎ। এক বছর সময় লেগেছিল গ্রুৎভাকর্ষণ (মাধ্যাকর্ষণের হিন্দি)থেকে গ্রাভিটি বুঝতে। বিএসসি বা বিকম পড়বেন না ঠিকই করে নিয়েছিলেন। এরপরই এল আইএএসের মতো প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় বসার প্রশ্ন। দিব্য এই পরীক্ষাও হিন্দিতেই দেবেন বলে তৈরি হন। ওই কটা মাস প্রচুর বই পড়েছিলেন। আর সারা জীবনের মতো একটা শিক্ষা পেয়েছিলেন, কারও সমালোচনা করতে নেই। ওই সময় একটানা একশোর বেশি বই পড়েছিলেন রজনীশ এবং বিবেকানন্দর ওপর। অবশেষে দিব্য যখন রুরকির ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে ভর্তি হন তখন থিয়েটারে উৎসাহ পান। তাঁর প্রথম হিন্দি নাটক ‘প্রগতি পে উতারো ভারত’ লেখেন। ঠিক করেন, প্রতিদিন অন্তত আড়াইশো পাতা করে পড়বেন। কলেজ পাশ করার পর কোনও চাকরি পাননি। তাই এমবিএ পড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। সুযোগ পেয়ে গেলেন পুনের সিমবায়োসিস ইনস্টিটিউট অব বিজনেস ম্যানেজমেন্টে। এরমধ্যে লাখনউর ছোট ছোট বিজনেস হাউসগুলির জন্য অ্যাড লেখা শুরু করেন। সেগুলি স্থানীয় হিন্দি কাগজে প্রকাশিতও হত। কিন্তু দিব্য কখনও ওই নিয়ে ব্যবসা করেননি। সেইসময় আবার নাটক লেখায় ফিরে যান। প্রথম সাফল্য আসে ‘আপকা ইয়েস্টারডে, হামারা টুমরো’ দিয়ে। নানা কলেজ থেকে ব্যাপক সাড়া পায় ওই নাটক। এরপর স্বল্প দৈঘ্য ছবি কবুলনামা লেখেন, যেখানে পিযুষ মিত্র অভিনয় করেছেন। মাত্র ১১ টাকায় ওই ছবিতে অভিনয় করতে রাজি হয়েছিলেন পিযুষ মিত্র।

image


এক খারাপ বসের পাল্লায় পড়ে প্রথম হিন্দি বই ‘টার্মস অ্যান্ড কন্ডিশন’ লিখে ফেলেন দিব্য। উইকএন্ডগুলোয় ১৪ রাইটিং সেশনে বই লেখা শেষ করেন। ‘ইংরেজি সাহিত্যের প্রেরণামূলক বই পড়া থেকে পাঠকদের খানিকটা স্বস্তি দিয়েছিল চেতন ভাগতের ইংরেজি বইগুলি। কিন্তু হিন্দিতে তেমন লেখা ছিল না বললেই চলে। ঠিক এই কারণে ছোটবেলায় হিন্দি কমিকস পড়ার পর একটু বড় হতেই ইংরেজি উপন্যাস পড়া শুরু করে ছেলেমেয়েরা। সাধারণ পাঠকদের জন্য হিন্দিতে জনপ্রিয় কোনও লেখা নেই’, নিজের বইয়ের পেছনে যুক্তি দেন ডিপি।

পাবলিশার ধরার জন্য তেমন অভিজ্ঞতা ছিল না ডিপির। তাঁকে বলা হয়েছিল ৩০০ মতো কপি ছাপানো হবে, অথবা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বা লাইব্রেরিতে বই পাঠানোর ব্যবস্থা করতে হবে যাতে ছাপানোর খরচ উঠে আসে। যদিও দ্বিতীয় অপশনে দশ হাজার বই ছাপানোর প্রতিশ্রুতি মিলেছিল, কিন্তু পাঠক পাওয়া যাবে কিনা তার কোনও নিশ্চয়তা ছিল না। দিব্য নিজে ছাপানোর দায়িত্ব নিতে চাননি, কারণ কাঁড়ি টাকা খসে গেলেও ভালো মানের বই ছাপানো সহজ নয়। কঠিন দিনের এই লড়াইয়ে দিব্য নিজের ভাগ্যকেই ধন্যবাদ দেন শৈলেশের সঙ্গে যোগাযোগ হওয়ার জন্য। শৈলেশ হলেন, হিন্দি লেখায় যুবপ্রতিভার বিকাশে নীরব সৈনিক। শৈলেশ লেখকদের ব্লগ পড়েন নিয়মিত। অনেকের সঙ্গে নানা জায়গায় দেখা করেন। তাদের সঙ্গে যোগাযেগ রেখে বই ছাপানোর ব্যাপারে সাহায্যের হাত বাড়ান।

ইংরেজি কাগজের মতো হিন্দি কাগজগুলি বইয়ের রিভিউ করে না। এটাই হতাশ করেছিল তরুণ লেখককে। তাই ইউটিউবকে বইয়ের মার্কেটিংয়ের জন্য ব্যবহার করতে পেরে তিনি গর্বিত। ছোটে সে পাঙ্খ, ইটস রিংগিং এর মতো শর্টফিল্ম তৈরির পর নিজের সংস্থা মাস্টারস্ট্রোক এন্টারটেনমেন্ট প্রাইভেট লিমিটেডের রেজিস্ট্রেশন করান। বইয়ের জন্য ইউটিউবের প্রচারগুলিও তাঁর এই সংস্থাই প্রযোজনা করে। ‘গল্প বলার স্বাভাবিক ধরন এবং অপটু ফিল্মমেকারের হাতে ভিডিওগুলি ভাইরাল হয়ে গিয়েছিল’, বলেন দিব্য।

দিব্য মনে করেন, পুরওদমে লেখালেখিতে ঢুকে পড়ার জন্য এখনও আরও পাঁচ বছর সময় হাতে রয়েছে। সিনেমার স্ক্রিপ্ট লেখার পরিকল্পনা করছেন তিনি। এখনও পর্যন্ত টিভি সিরিয়াল না লেখার সিদ্ধান্তই নিয়েছেন। নতুন লেখদের প্রতি তাঁর উপদেশ, প্রচুর পড়তে হবে। যাকে খুব কাছ থেকে চেনেন, তাঁকে দিয়েই লেখার অভ্যেস হোক।

নিখিল সচন এবং আরও কয়েকজনের লেখার প্রশংসা করে দিব্য বলেন, ‘বিভিন্ন ধারার এবং পেশার মানুষের উচিত হিন্দিতে লেখা। না হলে ভাষার সঙ্গে যোগাযোগ হারিয়ে যাবে। আমাদের পাশে ঘটে চলা নানা ঘটনা, হতে পারে আমাদের আশেপাশেরই কোনও ছোট ঘটনা বা কোনও অপরাধ বা মজাদার কিছু, যা আমাদের ভালো লেগেছে, সুক্ষভাবে সেগুলি দেখা এবং সেটা নিয়ে গল্প লেখা,’। মজা করে দিব্য বলেন, নিজের বইয়ের প্রকাশে গিয়ে মাথা নীচু করে থাকেন হিন্দি লেখকরা। তিনি বলেন, এই লেখকরা বইয়ের প্রচারের সঙ্গে হিন্দুস্থান-পাকিস্তান দূরত্ব তৈরি করে রাখেন। ফলে বই সম্পর্কে বিরূপ ধারণা তৈরি হয়। তরুণ লেখকের মতে, বইও পণ্য এবং অন্যসব পণ্যের মতো বইয়েরও প্রচার দরকার। দিব্য বিশ্বাস করেন, ‘কিছু বুঝতে হলে লিখতে জানতে হবে’। খুব শিগগিরই দিব্যর নতুন বই প্রকাশিত হবে। তাতে ছোটদের জন্য পাঁচটি গল্প থাকবে। আমাদের শুভকামনা রইল দিব্যর জন্য।

লেখক-অলোক সোনি

অনুবাদক-তিয়াসা বিশ্বাস