যে কোনও মানুষের কাছে সময়ই সবচেয়ে বড় শিক্ষক। ২০১৬ শেষ। ২০১৭ বাকি। পেরিয়ে আসা ৩৬৫টি দিন কিন্তু বিফলে যায়নি। সাফল্য-ব্যর্থতা, হাসিকান্নার অভিজ্ঞতা দিয়ে বিগত বছরটি এমন কিছু শিখিয়ে গিয়েছে, যা থেকে আগামী বছরের পাথেয় মিলবে।
আমরা কয়েকজন বিশিষ্ট মহিলা উদ্যোগীর সঙ্গে কথা বলে জেনেছি, ২০১৬ থেকে কী শিক্ষা লাভ করেছেন ওঁরা। ওঁরা সেইসঙ্গে জানিয়েছেন, ২০১৭ সাল নিয়ে কী কী পরিকল্পনা রয়েছে তাঁদের। বিগত একটি বছরের অভিজ্ঞতা থেকে আগামীদিনে ওঁরা কী কী রদবদল ঘটাতে চাইছেন, বলেছেন সে প্রসঙ্গেও।
অর্পিতা গণেশ, প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও, বাটারকাপস
২০১৬ যা শেখাল
প্রথমত দেখতে পেলাম ফান্ড জোগাড় করাটা সোজা কাজ নয়। এছাড়াও দেখলাম সব সময়েই আগামী ৬ মাসের পরিকল্পনা আগাম করে ফেলাটাই হবে বুদ্ধিমানের মতো কাজ।
২০১৭-তে যা দেখতে চাই
আমি সব সময়েই মনে করি, পুরুষ ও মহিলা উদ্যোগীদের একইরকম চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করতে হয়। ব্যবসার ক্ষেত্রে অনেক কিছুই বলার আছে। যেমন, জিএসটি-তে আমরা কতটা উপকৃত হতে পারব, সে সম্পর্কেও আমি নিশ্চিত নই।
অদিতি চৌরাশিয়া, সহ-প্রতিষ্ঠাতা, ইঞ্জিনিয়ার বাবু
২০১৬ যা শেখাল
কখনও আশা ছাড়তে নেই। পজিটিভ থিঙ্কিংয়ের কোনও বিকল্প হয় না। স্টার্ট আপে সব সময়েই ওঠাপড়া থাকে। তবে এটাকে চ্যালেঞ্জ হিসাবে নেওয়া উচিত।
২০১৭-সালে যা দেখতে চাই
স্টার্ট আপ ইকোসিস্টেমকে বিশ্বাস করতে হবে মেয়েরাও পারেন। মেয়েদের ওপর পরিবার পরিকল্পনার দায়িত্ব সঁপে না দিয়ে কিংবা বিবাহিত জীবনকে তাঁদের সর্বস্ব না দেথিয়ে - স্টার্ট আপের বিকাশের পক্ষে লাভদায়ক পরিকল্পনাগুলিও তাঁদের দিয়ে করানো যেতে পারে। মেয়েরা কাজটা সাফল্যের সঙ্গেই করবেন।
দীপা সুব্রহ্মমনিয়াম, প্রতিষ্ঠাতা ও ক্রিয়েটিভ হেড, গ্যালারি ডি আর্টস
২০১৬ থেকে যা শিখছি
মোদি সরকার বিমুদ্রাকরণ ঘটিয়ে একটা বেশ বড়সড় বোমা ফাটালেন। দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়তে নেমে প্রধানমন্ত্রী ক্যাশলেস অর্থনীতি গড়ে তুলতে চাইছেন। এর প্রভাব পড়েছে ছোটমাপের উদ্যোগীদের কাজকারবারে। বিক্রিবাট্টা অনেকটাই কমে গিয়েছে। আমি যে বিরাট শিক্ষাটা পেয়েছি তা হল, কিছুই স্থায়ী নয়।
২০১৭-সালে যা দেখতে চাই
২০১৬-২০১৭ সালের বাজেটে মেয়েদের পক্ষে ইতিবাচক অনেক কিছুই রয়েছে। তবে আমার মনে হয়, নির্দিষ্ট সময় অন্তর পরীক্ষা করে দেখা উচিত বাজেটের ওই প্রস্তাবগুলি মেয়েদের ক্ষেত্রে কতদূর পর্যন্ত বাস্তবোচিত ফল দিচ্ছে।
হনসা সিনহা, সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও ডিরেক্টর, জেনেসিস কনসাল্টিং প্রাইভেট লিমিটেড অ্যান্ড ক্রিয়েটিভ ইমপ্রিন্টস এলএলপি
২০১৬ যা শেখাল
অনেক ঝুঁকি নিতে হয়েছে ২০১৬-তে। নতুন উদ্যোগে নামা, নতুন কর্মী নিয়োগের মতো ঝুঁকিপূর্ণ একটার পর একটা পরিকল্পনা বাস্তবায়িত করা হয়েছে। তবে এই ঝুঁকিগুলি নিলেও আশা আছে, আমরা ব্যর্থ হব না।
২০১৭-সালে যা দেখতে চাই
সরকার, মিডিয়া ইতিমধ্যে এমন কিছু উদ্যোগ নিয়েছে - যা মহিলা উদ্যোগীদের পক্ষে মঙ্গলের। এক্ষেত্রে অনেক সহায়ক প্রকল্পও চালু করা হয়েছে। এখন দেখতে হবে, মাটির কাছাকাছি থাকা মেয়েরাও যাতে এই প্রকল্পগুলির থেকে সুবিধা পেতে পারেন।
নিধি আগরওয়াল, প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও, কারিয়া
২০১৬-তে যা শিখেছি
গত বছরে বহু চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি পড়েছি। তার মোকাবিলাও করেছি। সবচেয়ে বড় কথা আমরা চ্যালেঞ্জগুলিকে সাফল্যের চেহারা দিতে পেরেছি।
২০১৭-সালে যা দেখতে চাই
সহজভাবে চিন্তা করাটাই হল ভিত্তি। সেটা নিরাপদও। কিন্ত সহজ চিন্তা না করতে পারাটাই একটা গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা।
নিধি বালা, প্রতিষ্ঠাতা, তানজেব
কোনও পদক্ষেপ নেওয়ার আগে ভাববেন না সেটি ছোট না বড়। বরং, যা করছেন সেটা খুব ভালোবেসে করুন। সেইসঙ্গে নেগেটিভ চিন্তাভাবনা একেবারেই করবেন না।
২০১৭ সালে যা দেখতে চাই
মহিলা উদ্যোগীদের এখন সহায়তা দরকার। একজন মহিলা উদ্যোগী সহায়ক হিসাবে আর একজন মহিলা উদ্যোগীকে পাশে পেলে সেটা কাজের পক্ষে ভালো হয়।
প্রাচী গর্গ, লেখিকা ও প্রতিষ্ঠাতা, ঘুমোফিরো
২০১৬ থেকে যা শিখেছি
মন খোলা রেখে কাজ করুন। ঝুঁকি নিতে দ্বিধা করবেন না।
২০১৭ সালে যা দেখতে চাই
এদেশে এমন বহু মঞ্চ রয়েছে যেখানে মহিলা উদ্যোগীরা নিজেদের চ্যালেঞ্জগুলি নিয়ে খোলামেলাভাবে আলোচনা করতে পারেন। এই ফোরামগুলিকে ক্রাউড ফান্ডিংয়ের কাজে লাগানো উচিত।
পরিমালা হরিপ্রসাদ, সিনিয়র ইউএক্স আর্কিটেক্ট, অ্যামাডিয়াস সফটওয়্যার ল্যাবস
২০১৬ থেকে যা শিখেছি
গত বছরে আমরা নিজেদের লড়াইটা লড়লাম। অনেকেই আমাদের পাশে থেকেছেন। যুদ্ধ নানারকমই থাকে। তবে কোন যুদ্ধটা লড়বেন আগেভাগে সেটাই ঠিক করে নিতে হবে।
২০১৭-সালে যা দেখতে চাই
পুরুষ ও মহিলাদের একযোগে কাজ করা উচিত। মহিলাদের চ্যালে্ঞ্জগুলির মোকাবিলায় তাঁরা পুরুষদের পাশে পেলে কাজটা সহজ হয়। কেননা শুধুমাত্র মেয়েরা দল পাকিয়ে কাজ করতে গেলে বাস্তবে সেটা পরনিন্দার আসরে পরিণত হয়।
সাম্মি গাম্ভীর, প্রতিষ্ঠাতা, ডিগিভেশন
২০১৬ থেকে যা শিখেছি
আমার পক্ষে ২০১৬ সালটা বেশ ভালোই ছিল। জীবনের সঙ্গে ব্যালেন্স রেখে কাজ করতে পেরেছি।
২০১৭-তে যা দেখতে চাই
মহিলা উদ্যোগীদের আলাদা করে রাথার কোনও মানে হয় না। এই পরিস্থিতিও পাল্টাতে চলেছে।
টিনা গর্গ. সিইও, পিঙ্ক লেমোনেড
২০১৬ থেকে যা শিখেছি
কীভাবে ভালো নেত্রী হতে হয়, সেটা শিখেছি গত একটি বছরে। সংস্থার বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে মানসিকতাও পাল্টাবে।
২০১৭-তে যা দেখতে চাই
মহি্লা উদ্যোগীদের নিয়ে যে ইভেন্টগুলি আয়োজিত হয়ে থাকে সেখানে আরও ভালো বক্তাদের দেখতে চাইছি। সাধারণত স্টার্ট আপ ইভেন্টগুলিতে বরাবর একই বক্তারা বলে থাকেন। এর পরিবর্তন ঘটানো দরকার।
মেঘা সারোগী, প্রতিষ্ঠাতা স্টাইল ডট মি
২০১৬ যা শেখাল
ভালোবাসা নিয়ে কাজ করলে পৃখিবী পাল্টে দেওয়া সম্ভব বলে বিশ্বাস করি। আপনি যেভাবে চান তেমন ঘটানোও সম্ভব হবে।
২০১৭-তে যা দেখতে চাই
আমি বেশ কিছু লেখা পড়ে জানতে পারলাম, ভারতে কর্পোরেটে মহিলাদের অনুপাত ১৫ শতাংশ। আমি মনে করি, এটাই একমাত্র ক্ষেত্র যেখানে কিছু পরিবর্তন দেখতে পাব।
সুরভি দেওরা, প্রতিষ্ঠাতা, কেরিয়ারগাইড ডট কম
২০১৬ যা শেখাল
২০১৬ সালে অভূতপূর্বভাবে বেশ কিছু মহিলা উদ্যোগী উঠে এসেছেন। পৃথিবীর নানা দেশে রাষ্ট্র পরিচালনায় মহিলাদের উত্থান হয়েছে। এও এক নজির।
২০১৭-তে যা দেখতে চাই
মহিলা উদ্যোগীদের ওপর ওপর সহায়তা করা নয় – নতুন বছরে আমি মহিলা উদ্যোগীদের জন্যে একটা প্রকৃত সহযোগী ব্যবস্থা আশা করছি।
এলসা ডি সিলভা, প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও, সেফসিটি
২০১৬ তে যা শিখেছি
নিজের সংস্থাকে দাঁড় করাতে সময় লাগে। পরিকল্পনার জন্যে সময় দিন। উদ্ভাবনী চিন্তা করুন।
২০১৭-তে যা দেখতে চাই
স্টার্ট আপগুলির ফান্ডিং ও মেন্টরশিপে আরও ইতিবাচক পরিবর্তন দেখতে চাই।
মণীশা কাথোরিয়া, সহ-প্রতিষ্ঠাতা, উপদেষ্টা – কেইস হারবার টেকনোলজিস প্রাইভেট লিমিটেড
২০১৬ থেকে যা শিখেছি
একটা কথা মনে রাখবেন, নতুন কোনও ব্যবসায় নামলেও কিন্তু বর্তমানে আপনার যে গ্রাহক-গ্রাহিকারা রয়েছেন তাঁদের প্রতি অমনোযোগী হবেন না।
২০১৭-তে যা দেখতে চাই
২০১৬ সালে সরকারের তরফে কিছু সহায়ক উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। যেমন, নতুন বেশ কিছু ইনকিউবেশন সে্ন্টার গড়া হয়েছে। তবে যত সংখ্যক মহিলা উদ্যোগীর সহায়তা দরকার, সে তুলনায় এই উদ্যোগগুলি অপ্রতুলই।
বিদুষী দাগা, প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও, ক্লোনফিউচারা
২০১৬ যা শিখেছি
একজন উদ্যোগীর ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা নেওয়া উচিত। সফল হলেও সেক্ষেত্রে সাফল্য ধরে রাখাটা জরুরি।
২০১৭-তে যা দেখতে চাই
কবে সরকার ঠিকঠাক নীতি প্রণয়ন করবে, সেজন্য অপে্ক্ষা করে বসে থাকতে রাজি নই। আমার আকাঙ্ক্ষা, দূরদর্শিতা রয়েছে। ফলে আমি কাজটা শুরু করে দিতে চাই।
রাশি মেনডা, সিইও, জ্যাপিল
২০১৬ তে যা শিখেছি
সর্বদাই নিজের পায়ে দাঁড়ান। ক্রেতাদের চাহিদা বা প্রয়োজন মেটাতে গড়মসি করবেন না।
২০১৭ তে যা দেখতে চাই
বর্তমানে এদেশের ১৪ শতাংশ ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের কর্তৃত্ব মেয়েদের হাতে। কর্পোরেট সেক্টরে বর্তমানে মহিলা বস রয়েছেন ৮.০৬ মিলিয়ন। বেশিরভাগ মহিলাই ছোট সংস্থা পরিচালনা করছেন।
অনেক মেয়েই মনে করেন, ভারতে মহিলা রোল মডেল খুব কম। মহিলাদের উদ্যোগগুলির পাশে থাকার জন্যে আরও সহায়তা দরকার।
Share on