বাংলার বন্যার্তদের পাশে একদল উদ্যোগী বাঙালি

বাংলার বন্যার্তদের পাশে একদল উদ্যোগী বাঙালি

Friday August 04, 2017,

2 min Read

সাম্প্রতিক ভারী বর্ষণে পশ্চিমবঙ্গের বিস্তীর্ণ এলাকা এখনও জলে ডুবে আছে। সাতাশ লক্ষ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। মৃতের সংখ্যা পঞ্চাশ ছুঁয়ে গেছে। ১৪টি জেলার ১০৫টি ব্লক বৃষ্টি থামার এক সপ্তাহ পার করেও জলের তলায়। দামোদরের জল ছাড়ায় পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। রাজ্য কেন্দ্র দ্বৈরথ, অকারণ রাজনীতির দড়ি টানাটানির মাঝে পড়ে বন্যার্ত মানুষের প্রাণ যায় যায় অবস্থা। এই পরিস্থিতিতে হাতের আস্তিন গুটিয়ে ত্রাণের কাজে লেগে পড়েছেন কলকাতার এক উদ্যোগপতি। কলকাতা থেকে কাক ভোরে বেরিয়ে যাচ্ছেন কখনও হুগলীর দিকে কখনও বাঁকুড়ার রাস্তায়। একা নন ওর সঙ্গে যাচ্ছেন আরও বেশ কয়েকজন উদ্যোগী মানুষ। সাত আটটা গাড়ি নিয়ে সকাল সাড়ে পাঁচটা ৬টার মধ্যে পৌঁছে যাচ্ছেন নির্ধারিত জায়গায়। নিয়মিত ত্রাণ পৌঁছে দেওয়ার কাজটা করছেন Global Entrepreneur of Bangla (GEB)-র প্রতিনিধি সমরেশ দাস। এবং ওর মতো আরও অনেকে। এই সব কাজের মানুষেরা কোনও সামাজিক সংগঠন, কোনও রাজনৈতিক দল, কোনও সরকারি সাহায্যের দিকে না তাকিয়ে নিজেরাই শুরু করে দিয়েছেন মানুষের জন্যে কাজ।

image


সমরেশ গত দিন যে গ্রামে গিয়েছিলেন সেখানকার কথা জানালেন, বলছিলেন ওই গ্রামে জলবন্দি হয়ে রয়েছেন কম করে বারোশ থেকে পনেরশ পরিবার। ওদের ওখানে, বিদ্যুৎ নেই। যোগাযোগ ব্যবস্থা বলতে কাঠের নৌকো। অধিকাংশ নৌকোর হাল খুবই খারাপ। নীচ দিয়ে জল ঢুকছে। কেউ একজন জল ছেঁচে ফেলছেন ক্রমাগত। 

সেই নৌকোয় করে চিড়ে, মুড়ি, গুড়, রান্না করা খাবার, জলের বোতল, জিও লিন, বিস্কুটের প্যাকেট, মোমবাতি, দেশলাই বাক্স আরও নানান প্রয়োজনীয় সামগ্রী পৌঁছে দিচ্ছেন ওরা। 

সম্প্রতি হাওড়া থেকে লন্ডন ব্রিজ পাড়ি দিয়ে ফিরেছেন এই ডাকাবুকো উদ্যোগপতি। ঝুঁকি নিতে চিরকালই এক পায়ে খাড়া। নিজে হুগলী জেলার প্রত্যন্ত গ্রামের ছেলে। বন্যা ওর কাছে কোনও নতুন বিষয় নয়। এর আগে বহুবার বন্যা দেখেছেন। মানুষের প্রয়োজনে ঝাঁপিয়ে পড়াটাও ওর চরিত্রের বিশেষ বৈশিষ্ট্য। ফলে প্রকৃতির সঙ্গে যুদ্ধেও মানবতার এই সেনানী দলবল নিয়ে হাজির।

আগেই বলেছি সমরেশ একা নন। এই লড়াই ওর একার সাধ্যও নয়। ওর সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়েছেন ওঁর অনেক উদ্যোগপতি বন্ধু। এই কাজে ক্রাউড ফান্ডিংয়ের ওপরেই ভরসা করছেন সমরেশ দাস। বাংলা ইওরস্টোরির কাছে ওর আবেদন ছিল আমাদের পাঠকরাও যেন এই জরুরি ত্রাণে ওর পাশে এসে দাঁড়ান। ধর্ম বর্ণ জাতি নির্বিশেষে সকলকেই দরকার এই কাজে, সকলে মিলেই আসুন মানুষের প্রাণ বাঁচানোর কাজে হাত লাগাই।

image


একটি পরিবারের যা চাহিদা সেই মত সামগ্রী কিনেও দেওয়া যেতে পারে এই ত্রাণ যাত্রীদলের কাছে জানালেন সমরেশ দাস। বলছিলেন ত্রাণ হিসেবে যা দেওয়া হচ্ছে একটি পরিবারের জন্যে তার খরচ মাত্র ১৪৫ টাকার আশপাশে। সবাই মিলে এগিয়ে এলে বেঁচে যাবেন বন্যার্ত মানুষ। গ্রামে গ্রামে চিকিৎসকের দল নিয়ে পৌঁছনরও ইচ্ছে আছে ওদের। কারণ বন্যা তো একা বন্যা নয় দোসর ডেঙ্গুও ইতিমধ্যেই প্রাণ নেওয়া শুরু করে দিয়েছে বাংলার গ্রামে গ্রামে।