স্তনের ক্যান্সারে আক্রান্তদের পাশে ২০ বছরের হিতৈষিণী

স্তনের ক্যান্সারে আক্রান্তদের পাশে ২০ বছরের হিতৈষিণী

Sunday March 20, 2016,

3 min Read

স্তনের ক্যান্সারে আক্রান্ত মেয়েরা কলকাতা শহরে বসে এমন এক অভাবনীয় লড়াই লড়ছেন যে, তা যে কোনও লড়াইয়ের দৃষ্টান্ত হতে পারে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দেওয়া খতিয়ান অনুসারে, ভারতে প্রতি বছর দেড় লক্ষ মহিলা নতুন করে স্তনের ক্যান্সার বা ব্রেস্ট ক্যান্সারে আক্রান্ত হন। তাছাড়াও, সারা পৃথিবীতে বহু মেয়ে ব্রেস্ট ক্যান্সারের শিকার। তবে পশ্চিমী দেশগুলির তুলনায় স্তনের ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা ভারতের ক্ষেত্রে প্রায় দ্বিগুণ হতে চলেছে‌। কারণ, সচেতনতার অভাব। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২৬ সালের মধ্যে এই অসুখে আক্রান্তের সংখ্যা ০.১৫ মিলিয়ন থেকে বেড়ে দাঁড়াবে ০.২৩ মিলিয়নে।

image


এই পরিস্থিতিতে ব্রেস্ট ক্যান্সার প্রতিরোধ ও সচেতনতা নিয়ে কাজ করছে হিতৈষিণী নামে‌ একটি সংগঠন। সংগঠনের প্রতিষ্ঠাত্রী বিজয়া মুখোপাধ্যায় নিজেও একজ‌ন আক্রান্ত। কলকাতায় চিত্তরঞ্জন ন্যাশনাল ইন্সটিটিউটের একটি ঘরে চলছে হৈতিষিণীর অফিস। প্রতি সপ্তাহের সোম ‌ও বৃহস্পতিবার বেলা দুটো থেকে চারটে পর্যন্ত খোলা থাকে কার্যালয়। কলকাতা শহর তো বটেই, কাউন্সেলিং কিংবা দরকারি পরামর্শের জন্যে দূরদূরান্ত থেকে রোগী ও তাঁর পরিজনরা এখানে আসেন। এছাড়া, হৈতিষিণীর সদস্যারা ঠাকুরপুকুরের ক্যান্সার সেন্টার ওয়েলফেয়ার হোম অ্যান্ড রিসার্চ ইন্সটিটিউটে প্রতি সপ্তাহের শুক্রবার বেলা বারোটা থেকে দুটো পর্যন্ত বসেন। সেখানে একইরকমভাবে প্রয়োজনীয় সহায়তা করে থাকেন রোগিণী ও তাঁর পরিজনদের।

হিতৈষিণীর প্রতিষ্ঠাত্রী বিজয়া মুখোপাধ্যায় বললেন, কিছু কিছু ক্ষেত্রে ব্রেস্ট ক্যান্সার পুরুষদেরও হয়। তবে তা নগণ্য সংখ্যা। সাধারণভাবে মেয়েরাই এই ক্যান্সারে আক্রান্ত হন। একটি মেয়ের বুকে অস্ত্রোপচারের অর্থ অনেক কিছুই। নারীদেহে স্তনের মত স্পর্শকাতর অঙ্গ ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়া মানে স্বভাবতই মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়া। যদিও আক্রান্ত হওয়ার প্রথমদিকে ধরা পড়লে অনেকক্ষেত্রেই অস্ত্রোপচারের দরকার পড়ে না। সেক্ষেত্রে আমাদের সংগঠনের তরফে আক্রান্ত মেয়েটিকে কাউন্সেলিংয়ের মাধ্যমে সহায়তা করা হয়ে থাকে। তাতে প্রাথমিক ভয়টা কাটানো যায়।

হিতৈষিণীর সম্পাদিকা নূপুর চক্রবর্তী জানালেন, ১৯৯৫ সালে হিতৈষিণী তৈরি হয়। ব্রেস্ট ক্যান্সারে আক্রান্ত মেয়েরা ছাড়াও বেশ কিছু স্বাভাবিক মহিলা, যাঁরা রোগটায় আক্রান্ত নন তাঁরাও সংগঠনের স্বেচ্ছাসেবিকা হিসাবে কাজ করছেন। সচেতনতা বৃদ্ধি করতে বছরভরই স্কুলকলেজে বা মেয়েদের বিভিন্ন সংগঠনে কর্মশালার আয়োজন করা হয়। আমরা মেয়েদের বলি, নির্দিষ্ট সময় অন্তর নিজের স্তন নিজেই পরীক্ষা করুন। বিপজ্জনক লক্ষ্ণণ দেখা গেলে একটুও সময় নষ্ট না করে ডাক্তারবাবুদের সঙ্গে যোগাযোগ করুন। কেননা প্রাথমিক অবস্থায় রোগ ধরা পড়লে বহুক্ষেত্রেই অস্ত্রোপচার এড়ানো যেতে পারে।

image


এর পাশাপাশি হৈতিষিণীর এখন যুক্ত হচ্ছে সমমনস্ক বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গে। জানা গেল, সাম্প্রতিক সময়ে হৈতিষিণী যৌথভাবে কাজ করছে রিচ ও রিকভারি ইন্টারন্যাশনাল ব্রেস্ট ক্যান্সার সাপোর্ট নেটওয়ার্কের সঙ্গে। এছাড়়াও, নয়াদিল্লির ক্যান্সার কেয়ার ইন্ডিয়ার সঙ্গেও যৌথভাবে কাজ করছেন ওঁ‌রা।

বিজয়াদেবী জানালেন, কলকাতায় এখন ব্রেস্ট ক্যান্সারের চিকিত্সার পরিকাঠামো ভালোই। তবে এই রোগের চিকিত্সা অত্যন্ত ব্যয়সাধ্য। গরিব মানুষের পক্ষে অনেক সময়ে তাই চিকিত্সা নেওয়া সম্ভব হয় না। এই পরিস্থিতিতে ব্রেস্ট ক্যান্সারে আক্রান্ত দরিদ্র মেয়েদের পাশে দাঁড়াচ্ছে হিতৈষিণী। চিকিত্সা সংক্রান্ত পরামর্শ দেওয়া ছাড়া তাঁদের আর্থিক সহায়তাও করা হয়।

১৯৯৫ সালে হিতৈষিণীর জন্মলগ্নে চিত্তরঞ্জন ন্যাশনাল ক্যান্সার ইন্সটিটিউটে সদস্যাদের বস‌বার কোনও জায়গা ছিল না। সংগঠনের প্রতিষ্ঠাত্রী বিজয়াদেবী বললেন, সেই সময় ইন্সটিটিউটের অধিকর্তা ছিলেন মহসুদ সিদ্দিকি। ওনাকে আমি হিতৈষিণীর মতো একটি সংগঠনের আবশ্যিকতা সম্পর্কে জানিয়েছিলাম। উত্তরে তিনি বলেন, ইন্সটিটিউটের ডাক্তারবাবুরা এব্যাপারে আপনার সঙ্গে সহমত হলে আপনি কাজ করার মতো একটি ঘর পেতে পারেন। সেইসময় কাজটায় আমি সফলই হয়েছিলাম।

বর্তমানে সংগঠনের সক্রিয় সদস্যা ৫০জন। সকলেই প্রায় মহিলা। হিতৈষিণীর ভাইস-প্রেসিডেন্ট দীপ্তি রায় জানালেন, তবে পুরুষদেরও সদস্য হতে আমাদের তরফে কোনও বাধা নেই।

image


প্রত্যেক বছর ন্যাশনাল ক্যান্সার অ্যাওয়ারনেস ডে-তে বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে থাকে হিতৈষিণী। একদিন যে সংগঠনের পথ চলা শুরু হয়েছিল চিত্তরঞ্জন ন্যাশনাল ক্যান্সার ইন্সসটিটিউটের ছোট্ট একটা ঘর থেকে, এখন সেই সংগঠনের কর্মকাণ্ড ছড়িয়ে পড়েছে এই রাজ্যের গ্রামেগঞ্জেও। দীপ্তিদেবী বললেন, আমরা বছরের নানান সময়ে গ্রামে গ্রামে কর্মশালার আয়োজন করে থাকি। এছাড়া, ধারাবাহিকভাবে মেয়েদের এটাই আমরা বোঝাচ্ছি যে, ভয় পাবেন না। আর পাঁচটা অসুখের মতো স্তনের ক্যান্সারও একটি অসুখ। সময়ে চিকিত্সা করালেই রোগ নিরাময় সম্ভব।