জিম এখন কালচার। হাতে বেলি ফুলের মালা জড়ানো, পায়রা ওড়ানো বাবু কালচারের থেকে ঢের গুণ ভালো। টোপলা ভুঁড়ির বাঙালি এখন অ্যাবস কনসাস। শরীর ভালো রাখার, দেখতে ভালো থাকার তাগিদটা বাঙালি পুরুষদের মধ্যে গত দু দশকে হুহু করে বেড়েছে। খেলাধুলো তো ছিলই আসনও ছিল কিন্তু শরীরের বাড়তি মেদ ঝরানোর কৌশলটা আয়ত্ত ছিল না। জিমের দৌলতে সেটা এখন জলবৎ তরলম।
হাতের ডানায় উল্কি করতে ভালো পেশি দরকার। ছাপ্পান্ন ইঞ্চির বুকের ছাতির দেশে এতো হওয়ারই ছিল। কিন্তু ভালো জিম পাওয়া সোজা কাজ নয়। কেননা, এখন অলিতে গলিতে গজিয়ে উঠেছে জিম। ভাবটা এমন সবাই সব জানেন। এলো পাথারি কসরত করতে গেলে কপালে দুঃখ আছে। তারপর জিম মানে তো শুধু শরীর চর্চাই নয়, প্রয়োজন শরীরের আহারও। এসব নিয়েই কথা হচ্ছিল কলকাতার দুই উদ্যোগপতি এবং জিম প্রতিষ্ঠাতা রণদীপ মৈত্র এবং তাঁর বিজনেস পার্টনার ঋষভ গুপ্তর সঙ্গে। ওদের জিমের নাম এন্ডোরফিন্স কারেক্টিভ এক্সারসাইজ স্টুডিও। এখন অনেকেই জানেন ওদের জিমের কথা। সম্প্রতি আলিপুরে যেখানে গোল্ডস জিম ছিল সেখানেই রণদীপ এন্ডোরফিন্সের নতুন শাখা খুলেছেন। যাই হোক, যে কথায় ছিলাম রণদীপ বলছিলেন, যত সময় যাচ্ছে আরও আধুনিক হয়ে উঠছে জিম গুলি। পুরনো জিমে যারা শরীরচর্চা করতেন তারা এখন ওদের জিমের মত আধুনিক জিমকেই বেছে নিচ্ছেন। কারণ অনেক বেশি বিজ্ঞানসম্মত কৌশলে শারীরিক কসরত করানোর চেষ্টা করানো হয়। কার শরীরে ঠিক কী ধরণের পেশির গঠন প্রয়োজন সেটা বুঝেই এন্ডোরফিন্স কসরত করায়। অবশ্য কোনও কোনও ক্লায়েন্ট শারীরিক কসরতের পেছনে যুক্তি বুঝতে পারেন না। সেক্ষেত্রে অন্যভাবে ট্রেনিং করাতে হয়। বছরভর।
জিম নয় এন্ডোরফিন্সকে এক্সারসাইজ কারেক্টিভ স্টুডিও বলেন রণদীপ। সাড়ে আট হাজার স্কোয়ারফিটের জিম তিনটি জোনে ভাগ করা, ঠাসাঠাসির প্রশ্নই নেই। খোলামেলা জায়গা, ওয়েট, ক্যাবেলসের ইচ্ছেমত ব্যবহার, যত খুশি জায়গাজুড়ে হাত পা ছড়িয়ে এক্সারসাইজ করে যান, এই কমফোর্ট দেন ওরা।
শুধু কসরত করানো নয়, সঙ্গে ওরা শেখান কীভাবে সুস্থ শরীরের জন্য লাইফ স্টাইল পাল্টে ফেলতে হয়। বলেন হেড কোচ বিনীত গোয়েল। এন্ডোরফিন্সের ইউএসপি হল, শরীরের নানা লুকোনো অস্বস্তি বের করে আনে। ধরা যাক আপনি ভালো করে হাঁটু মুড়তে পারেন না। তার কারণ হয়ত, পায়ের শক্ত পেশী। যার ফলে পায়ে ব্যথা হতে পারে। এন্ডোরফিন্সের নানা ধরণের এক্সারসাইজে এতটাই ফিট থাকা যায় যে, তাকের উঁচু মাথা থেকে কৌটো পেড়ে নিতে অসুবিধা হবে না প্রবীণদেরও, চ্যালেঞ্জ রণদীপদের।
বয়সের গণ্ডিতে বাধা নেই জিম। ৮ থেকে ৮০ সব বয়সীরা আসেন ওদের কাছে। ৮১ বছর বয়সী এক সদস্য রয়েছেন ওদেরই জিমে। বাচ্চাকে ছোটবেলা থেকে ফিট রাখতে ৬ বছরেই জিমে নিয়ে এসেছেন তাদের বাবা-মায়েরা। এর নাম বলা উচিত স্বাস্থ্য-সংস্কৃতি। ঋষভ এসব দেখে শুনে দারুণ চার্জড। বলছেন আরও শাখা খোলা দরকার।
ওদের জিমেই আছে প্রোটিন বিস্ট্রো কাফে। ফাস্টফুডের জঙ্গলে হেল্থি ফুড পাওয়াই দুষ্কর। এখানে সবই স্বাস্থ্যকর। তার থেকেও বড় কথা, হাড় খাটুনি জিমের পর গ্রিলড চিকেন আর চকোলেট প্রোটিনশেক হলে আর কী চাই?