নতুন উদ্যোক্তারা জেনে নিন রজতের KONCEPT

নতুন উদ্যোক্তারা জেনে নিন রজতের KONCEPT

Friday April 01, 2016,

3 min Read

বাঙালিরা কেন ব্যবসা বিমুখ? ব্যবসায় একচেটিয়া আধিপত্য কেন অবাঙালিদের? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে খুঁজতে পুরওদস্তুর কর্পোরেট সেক্টর থেকে জাম্প কাট কনসেপ্ট মার্কেটিংয়ে। নিজের ব্যবসা। বছর তিরিশের ঝকঝকে যুবক রজত দত্তের গল্পটা এরকমই।

image


বটানি অনার্স। তারপর ক্যাট কোয়ালিফাই করে গ্লোবসিনে এমবিএ। ২০০৭- এ HDFC ব্যাঙ্কের চাকরি পেয়ে যান রজত। ২০১০ নাগাদ পুরনো চাকরি ছেড়ে নতুন চাকরি। ডাবরে চলে আসেন। ভেতরে ভাবনার বীজটা অঙ্কুরিত হচ্ছিল এইচডিএফসি ব্যাঙ্কে চাকরির সময় থেকেই। কারেন্ট অ্যাকাউন্ট হ্যান্ডেল করতে গিয়ে নানা বিজনেস হাউসের ওনারদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ বাড়তে থাকে। তাঁদের বেশিরভাগই অবাঙালি। তখনই বিষয়টা নাড়া দেয় রজতকে। কর্পোরেটের নিশ্চিন্ত চাকরি ছেড়ে সাহস করে নেমে পড়লেন ব্যবসায়। গড়ে ফেলেন নিজের সংস্থা কনসেপ্ট মার্কেটিং।

‘ডাবরে কাজ করার সময় দেখেছি কর্পোরেট গিফটের বাজারটা অনেকটা বড়। একবার ঢুকে পড়তে পারলে আর পেছন ফিরে তাকাতে হবে না। ঠিক করলাম কর্পোরেট গিফট তৈরি করে বাজারে বিক্রি করব। বিরাট ঝুঁকি নিয়েছিলাম। ভেবেছিলাম, এমবিএ ডিগ্রিটা যখন আছে না খেয়ে মরব না। পাশে ছিলেন বাবা আর স্ত্রী। সবসময় সাহস যুগিয়ে গিয়েছেন’, শুরুর দিনগুলির কথা মনে করে বলছিলেন রজত।

বাবার কাছ থেকে নেওয়া মাত্র ১০ হাজার টাকা দিয়ে শুরু হয়েছিল রজতের কনসেপ্ট মার্কেটিং। কর্পোরেট গিফট মানে, অর্ডার অনুযায়ী টিশার্ট, ছাতা, ক্যালেন্ডার, ডায়েরি, পেনস্ট্যান্ড, কফিমাগ, পেপারওয়েট হরেক গিফট আইটেমের বরাতের জন্য প্রায় সারা শহর চষে বেড়াতে হত রজতকে। ঠোক্কর খেয়ে ফিরেও আসতে হয়েছে কত জায়গা থেকে। দমানো যায়নি এই তরুণ উদ্যোক্তাকে। পুরনো কাজের অভিজ্ঞতা আর যোগাযোগ, নিজের বন্ধুবান্ধবদের সহযোগিতায় ধীরে ধীরে পসার জমতে শুরু করে। প্রথম বছরেই টার্নওভার ৫ লক্ষ টাকা। বাজারে পরিচিতি বাড়তে থাকে। "Make KONCEPT.....Break Concept"-ধীরে ধীরে রজতের ব্র্যান্ডের নাম বাজারে পরিচিতি পেতে থাকে।

২০১২ থেকে চার বছরে রজতের কনসেপ্ট মার্কেটিংয়ের টার্নওভার দাঁড়িয়েছে ৪৩ লক্ষ টাকায়। লালাবাজারের মার্কেন্টাইল বিল্ডিংয়ে সংস্থার অফিসে ৩ জন কর্মীও কাজ করছেন। টাটা স্টিল, পিডিলাইট ইন্ডাসট্রিজ লিমিটেড, অ্যাটবার্ট ডেভিট ফার্মা থেকে শুরু করে মেটাল জাংশন সার্ভিসেস লিমিটেড, অ্যাক্সিস ব্যাঙ্কের মতো সংস্থা এখন রজতের ক্লায়েন্ট।

‘কোনও একটা জায়গা থেকে কাজটা শুরু করতে হবে। ঝুঁকি নিতে হবে। ব্যবসা না করলে কর্মসংস্থানের সুযোগ হবে কীভাবে? সঙ্গে পরিশ্রম আর আত্মবিশ্বাস। বারবার চেষ্টা করতে হবে। হাল ছাড়লে চলবে না। ফোনে হোক, সশরীরেগিয়ে হোক ক্লায়েন্টের কাছে পৌঁছাতে হবে, বারবার ফলোআপ করতে হবে। হবেই। তাহলেই হবে বাঙালির ব্যবসা।’ বলছিলেন আত্মবিশ্বাসী রজত।

প্রথাগত কর্পোরেট গিফটকে সঙ্গে রেখেও স্থানীয় কুটির শিল্পকে নিজের সংস্থার মাধ্যমে পরিচিতি দেওয়ার চেষ্টাও করছেন তিনি। নারকেল মালা থেকে তৈরি একধরনের পেপারওয়েট বাজারে নিয়ে এসেছে কনসেপ্ট মার্কেটিং। শুধু পেপারওয়েট নয়, আরও অনেক গিফট আইটেম রজত বাজারে নিয়ে এসেছেন যেগুলি কুটিরশিল্পের স্থানীয় কারিগররাই বানিয়ে দিচ্ছেন। পরিকাঠামো বা সুযোগের অভাবে যারা নিজেদের পন্য বাজারে আনতে পারছেন না তাদের নিজের সংস্থার মাধ্যমে পরিচিতি দিতে চান তরুণ তুর্কী। ‘আমার সীমিত সাধ্য। তার মধ্যেই চেষ্টা করছি আশেপাশে ছড়িয়ে থাকা কুটিরশিল্পগুলিকে কীভাবে বাজারে নিয়ে আসা আসা যায়। কীভাবে কারিগরদের পরিচিতি এবং রোজগারের সুযোগ তৈরি করে দেওয়া যায়’, বলেন রজত।

image


এ তো সবে শুরু। এখনও অনেকটা পথ যেতে হবে রজতকে, রজতের KONCEPT কে। মাঝে মাঝে যখন পেছনে ফিরে তাকান, উৎসাহ আরও দ্বিগুন বেড়ে যায়। পেছনে ফেলে আসা দিনগুলি থেকে সামনে এগিয়ে চলার রসদ খুঁজে পান। নবীন উদ্যোক্তাদের জন্য রজতের একটাই পরামর্শ, পরিশ্রম আর সাহসের কোনও বিকল্প নেই।