ক্যাপ্টেন জ্যাক স্প্যারোর পাঁচটি স্টার্টআপ টিপ্‌স

ক্যাপ্টেন জ্যাক স্প্যারোর পাঁচটি স্টার্টআপ টিপ্‌স

Wednesday January 06, 2016,

3 min Read

নতুন কিছু শুরু করার অনুভূতি উত্তেজক। নিজের কল্পনা, উদ্ভাবনী শক্তির সাথে প্রয়োগের মিশেল ঘটাতে পারার অভিজ্ঞতা রীতিমত রোমাঞ্চকর। তবে সবরকম শুরুয়াতি উদ্যোগের ক্ষেত্রেই মূলধনের পরিমাণ হয় সীমিত এবং হাতে সময়ও থাকে খুব কম। সমুদ্রের উত্তাল জলরাশি ঠেলে কোনো নিরাপদ তটের খোঁজে এগিয়ে চলার সময় ব্ল্যাক পার্ল জাহাজের অদ্ভূতুড়ে নাবিক ক্যাপ্টেন জ্যাক স্প্যারোর যেরকম অনুভূতি হয়, শুরুয়াতি উদ্যোক্তাদের অভিজ্ঞতাও বোধহয় তার থেকে খুব একটা আলাদা কিছু নয়। যাত্রা শুরু গোড়ার বছরগুলিতে মনোবল অটুট রাখার জন্য, মানচিত্রে অপ্রদর্শিত কোনো সমুদ্রপথে যাত্রা করার জন্য, বা ক্র্যাকেনদের হত্যা করে গুপ্তধনের খোঁজ চালানো কিংবা আরো অন্যান্য উত্তেজক সামুদ্রিক অ্যাডভেঞ্চারের ক্ষেত্রে কুখ্যাত জলদস্যু জ্যাক স্প্যারোর উপদেশ যতোটা প্রয়োজনীয় হতে পারে, এখানে শুরুয়াতি উদ্যোক্তাদের জন্য দেওয়া হল তেমনই কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ।

image


১) আপনার ‘ক্র্যাকেন’ (ক্র্যাকেন – অর্থাৎ সমস্যা, যেগুলির সমাধান করতে হবে) কারা, সেটা জানার চেষ্টা করুন -

কোনো বিশ্বমানের পণ্য/পরিষেবা গড়ে তোলার আগে উপভোক্তাদের সমস্যাটা ঠিক কি, তাঁরা কি চাইছেন, সেটা ভালোভাবে জানার চেষ্টা করাটা হল প্রাথমিক কাজ।

যেগুলিকে বোঝার জন্য আপনাকে মনোযোগী হতে হবে ও যথাযথ শ্রম দিতে হবে, তা হল –

  • সমস্যার মূল ও সমস্যার ব্যাপ্তি (এটা আপনাকে নিজের পরিস্থিতিকে সম্যক বুঝতে সাহায্য করবে)
  • কোন অংশ সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে (বাজার এবং নিজের সম্ভাব্য উপভোক্তামহল)
  • উপভোক্তার মূল সমস্যার জায়গা (নিজের পণ্য তথা পরিষেবাকে সমস্যা উদ্দেশ করার উপযুক্ত হিসাবে গড়ে তুলতে হবে)
  • সমস্যার জন্য কি পরিমাণ আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে(যাতে আপনি নিজের পণ্য/পরিষেবার সঠিক মূল্য স্থির করতে পারেন)

২) কি চান আপনি ভাঙা কম্পাস?

বেশিরভাগ শুরুয়াতি উদ্যোগের পথ চলা আরম্ভ হয় অভিনব কোনো পরিকল্পনার উপর ভিত্তি করে। এমন পরিকল্পনা, যা তার নিজের সময়ের চেয়ে অনেক বেশি এগিয়ে থাকা।

প্রথমে অনেকেই আপনাকে নিয়ে হাসি তামাশা করবে এবং আপনার স্বপ্নকে উদ্ভট, পাগলের প্রলাপও বলবে।

কিন্তু বন্ধু, পথ দেখাবার সঠিক কম্পাস যেহেতু আপনার কাছে আছে, তাই আপনি নিশ্চয়ই সফল হবেন। দুনিয়া হয়তো ভাববে যে আপনার কম্পাসখানা ভাঙা, এবং কখনোই সেটা উত্তরের দিশা দেখাতে পারবেনা। কিন্তু আপনাকে নিজেকে এটা জানতে হবে এবং বিশ্বাস করতে হবে যে আপনি যা চান, যেদিকে যেতে চান – এই কম্পাস আপনাকে সেদিকেই নিয়ে যাবে।

সংক্ষেপে বললে, নিজের কম্পাসের উপর আস্থা রাখুন। এটা আপনাকে নিরাশ করবেনা।

৩) ভাবনায় হন ব্যতিক্রমী –

আপনি যদি গতানুগতিক পথে চলেন, তাহলে ফলাফলও বাঁধা গতেরই পাবেন – সোজা কথা। আর আপনার স্বপ্ন যদি আকাশচুম্বী হয়, তাহলে তার জন্য আপনাকে বিশেষ কিছু কৌশল অবলম্বন করতে হবে।

সংস্থান সীমিত ও প্রতিকূলতা বিপুল হওয়ার কারণে, সৃজনশীলতার প্রয়োগই হল একজন শুরুয়াতি উদ্যোক্তার সবথেকে বড় সম্বল। তবে প্রতিষ্ঠিত, বৃহৎ সংস্থাগুলির সাথে প্রতিযোগিতাই আপনাকে বাধ্য করবে উদ্ভাবন করতে, সৃজনশীল হতে। এটা প্রমাণিত সত্য।

উইল টার্নার – এটা হয় পাগলামি, আর নয়তো প্রতিভা।

জ্যাক স্প্যারো – এই দুইয়ের প্রভেদ প্রায়শই যেভাবে লোপ পায়, সেটা লক্ষণীয়।

৪)ভবিষ্যতের প্রেক্ষিতে ভাবুন, আস্থা রাখুন। এটা মাথায় রাখাটা ভীষণ প্রয়োজন।

মনে পড়ে, কিভাবে জ্যাক স্প্যারোকে একা একটা দ্বীপে থাকতে হয়েছিল, কেবলমাত্র একটা জং ধরা তলোয়ার ও একটা কার্তুজ ভরা পিস্তল সম্বল করে? জ্যাক স্প্যারোর মত আপনাকেও আস্থা রাখতে হবে যে, হ্যাঁ – আমারও দিন আসবে।

ঠিক ওরই মত আপনাকেও কাজ করে যেতে হবে এবং অপেক্ষা করতে হবে নিজের সুযোগের জন্য।

আর হ্যাঁ, প্রতীক্ষিত সেই সুযোগ যখন আসবে, তখন সময় অপচয় না করে, নির্দ্বিধায়, আত্মবিশ্বাসের সাথে সেটার পূর্ণ সদ্ব্যবহার করতে হবে।

৫) সমস্ত ঐশ্বর্যই আয়ত্ত করার জন্য নয় -

একটা সতর্কবার্তা – সমস্তরকম ঐশ্বর্যর পিছনে ছুটে চলা উচিত নয়। অনেকসময়ই এটা খুব লোভনীয় হতে পারে। কিন্তু অভিশপ্ত সোনার দিকে হাত বাড়ানো উচিত নয়। লাভ করার আকাংখা ভালো। কিন্তু অন্ধভাবে স্বপ্নের পিছুধাওয়া করতে গিয়ে আমাদের পূর্ববর্তী অনেকেই বেছে নিয়েছে অনৈতিক ও বেআইনি পন্থা। আমরা কামনা করি যাতে আপনার উদ্যোগ নৈতিক দিক থেকে সঙ্গত হয়, এবং সুস্থায়ী হয়। মনে রাখবেন, যা পছন্দ সেটা করার স্বাধীনতা থাকলেও, জলদস্যুদেরও কিন্তু একটা বিধি মেনে চলতে হয়।

(Disclaimer: মতামত লেখকের ব্যক্তিগত)

লেখা – জয়নাথ জগদীশ, অনুবাদ – সন্মিত চ্যাটার্জী