কথায় বলে তেলেভাজা শিল্প। এতে শ্লেষ আছে। তেলেভাজার প্রতি এক ঔদাসীন্যও আছে। কিন্তু বাঙালির সন্ধে কি মুড়ি তেলেভাজা ছাড়া চলে! এই প্রশ্নে ইতিহাসের লম্বা টাইমফ্রেম জুড়ে তেলেভাজার জয়জয়কার। আচার্য প্রফুল্ল থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা সকলেই এককাট্টা। যারা এই তেলেভাজা শিল্পের প্রতি অনুগত তাদের জন্যে বলে রাখি এই কলকাতার বুকেই পাওয়া যায় মাত্র ২ টাকায় তেলেভাজা! আলুর চপ, ডালবড়া, সিঙ্গারা থেকে মালপোয়া, জিলিপি। আমহার্স্ট স্ট্রিটে ছোট্ট দোকানে। গত সতের আঠার বছর ধরে তেলেভাজা বিক্রি করছেন ভদ্রকের প্রফুল্ল নায়েক। প্রথমে দাম আরও কম ছিল। মাত্র এক টাকায় পাওয়া যেত। ২০১৩ সালে মাগ্যি গণ্ডার বাজার বলে তেলেভাজার দাম বাড়াতে বাধ্য হয়েছেন এই উদ্যোগপতি। এখন দাম দু টাকা। হরেক মাল দুটাকা। বলতেই পারেন কেমন তেলে ভাজা এসব? অম্বল হবে কি হবে না ইত্যাদি... তবে একথা একশ শতাংশ হলফ করে বলা যায় শহরের আর পাঁচটা দোকানে তেলেভাজা খেলে যদি ক্ষতি হয় তবে এখানেও তাই হবে। কিন্তু স্বাদে এত ভালো যে লোকে ভিড় জমিয়ে রাখে রোজ। দিনে রোজগার আড়াই থেকে তিন হাজার টাকা। তিনজন কর্মচারী। ভোর চারটেয় উনুন ধরান। রাত দশটায় চুল্লি নেভে। হাড়ভাঙা খাটুনি। নিজের দেশ গ্রাম ভুলে প্রফুল্ল এসেছেন কলকাতায়। কাজের সন্ধানে। এরকম ও একা নন, কলকাতার রাস্তায় রাস্তায় এরকম অনেক তেলেভাজার দোকান চলে। ওড়িশা, বিহার থেকে আসা উদ্যোগপতিদের ভিড়ে ঠাসা এই শহরে। উদ্যোগের অনুপ্রেরণা কম নাকি। জিজ্ঞেস করছিলাম তোমার ইউ এস পি কী! ক্লাস ফোর পাশ প্রফুল্ল বলছিলেন, অত শত জানি না, শুধু জানি, না ঠকিয়ে কম লাভ রেখে ব্যবসা করলে টাকাটা চোখে দেখা যাবে। দেশে দুটো পয়সা পাঠাতে পারব।