কোটি টাকার চাকরি ছেড়ে উদ্যোগপতি হলেন ‘হ্যালো কারি’র রাজু ভূপতি

কোটি টাকার চাকরি ছেড়ে উদ্যোগপতি হলেন ‘হ্যালো কারি’র রাজু ভূপতি

Sunday May 15, 2016,

3 min Read

কিছুদিন আগে পর্যন্ত তাঁর পরিচয় ছিল CSC এর মত নামকরা মাল্টিন্যাশানাল কোম্পানির ভাইস প্রেসিডেন্ট। অর্থ, যশ, সম্মান, প্রতিপত্তি – অভাব ছিলোনা কোনও কিছুরই। গড়পড়তা মানুষের স্বপ্ন পূরণের সমস্ত উপকরণই ছিল হাতের তালুবন্দী। কিন্তু একজন গড়পড়তা মানুষ এবং একজন জিনিয়াসের মধ্যে তফাৎ একটাই, আর তা হল ক্রমাগত নতুন নতুন স্বপ্ন দেখা ও সেই স্বপ্নকে ধাওয়া করে তাকে বাস্তবায়িত করা ও নিজের প্যাশানকে ছুঁয়ে ফেলা। আর তাই রাজুও তিন কোটি টাকা মাইনের চাকরী ছেড়ে আজ নিজের নবতম স্বপ্ন “হ্যালো কারি” নিয়ে নেমে পড়েছেন ভারতের বাজারে। স্বপ্ন দেখছেন একদিন ‘হ্যালো কারি’ হয়ে উঠবে ম্যাকডোনাল্ডস এর মত গ্লোবাল ব্র্যান্ড।

image


রাজু ভূপতির এই অভূতপূর্ব স্বপ্নযাত্রার শুরুয়াত অন্ধ্রপ্রদেশের ছোট্ট শহর আমলাপুরম থেকে। বাবা ছিলেন বিখ্যাত ডাক্তার এবং একজন আধ্যাত্মিক মানুষ। অজস্র মানুষকে ডাক্তারি করে সুস্থ করে তুলেছেন, কিন্তু কখনও কারুর থেকে এক পয়সা নেননি। সারা দিন সারা বছর বাড়িতে লেগে থাকতো অজস্র মানুষের ভিড়। হাজার একটা কর্মকাণ্ডে মশগুল হয়ে থাকতেন তিনি। আর এই এতো বিবিধ কর্মকাণ্ড ও বিভিন্ন অচেনা অজানা মানুষের ভিড়ে ছোট্ট রাজু নাগাল পেত না তার বাবার। কিন্তু বাবার প্রতি মানুষের এই সম্ভ্রম ও ভালোবাসা ছোট্ট রাজুর মন কে নাড়া দিয়ে যায়। সে ভাবে বড় হয়ে বাবার মতই হতে হবে। আর সেই ডাক্তার হবার বাসনা নিয়েই বিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা শুরু করে তিনি, ভর্তি হন কলেজে। কিন্তু একের পর এক বাধা, বিঘ্ন ও ভাগ্যের পরিহাসের শিকার হয়ে অবশেষে তাঁকে ডাক্তার হবার আশা ত্যাগ করে এমএসসি’র ডিগ্রী নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয়। এরপর তিনি আইটি তে একটি ডিগ্রী করে এক প্রতিবেশীর অফিসে চাকরীতে ঢোকেন। বেতন মাত্র এক হাজার টাকা। একজন এমএসসি ডিগ্রিধারী হওয়া স্বত্বেও এত কম বেতনের চাকরী করতে হচ্ছিল বলে রাজুকে ঘিরে ধরছিল তীব্র হীনমন্যতা বোধ। কিন্তু মাইনে হাতে পাওয়ার সময় তিনি দেখলেন যে বস তাঁর কাজে খুশী হয়ে তাকে দেড় হাজার টাকা বেতন দিয়েছেন। এই ঘটনায় রাজু পুনরায় নিজের আত্মবিশ্বাস ফিরে পেলেন এবং নতুন উদ্যমে কাজ শুরু করলেন।

এই শুরু। এরপর আত্মবিশ্বাস ও কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে রাজুর ক্রমাগত উপরে ওঠার পালা। বড় বড় কোম্পানির ম্যানেজার থেকে প্রিন্সিপ্যাল কনসাল্টেন্ট হয়ে অ্যাসিস্টান্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট। এইভাবেই সাত আট বছর চুটিয়ে কাজ করে অবশেষে কোম্পানির হয়ে রাজু গিয়ে পৌঁছলেন আমেরিকায়। প্রথম বার তাড়াতাড়ি ফিরে এলেও দ্বিতীয়বার গিয়ে বেশ জমিয়ে বসলেন। এবং বেশ কিছুদিন কাজ সেখানে থেকে কাজ করার পর অবশেষে আবার কোম্পানির ডাকে দেশে ফিরে এলেন ভাইস প্রেসিডেন্ট হয়ে। কিন্তু আইটির দুনিয়ায় তথা নিজের কেরিয়ারে এই চরমতম সাফল্যও কোথায় যেন রাজুর জীবনে পরিপূর্ণতা এনে দিচ্ছিলনা। “অর্থ নয়, কীর্তি নয়, সচ্ছলতা নয়”, রাজু ভূপতির যেন আরও বড় কিছু করার আছে। নিজের আইডেন্টিটির খোঁজ রাজুকে শান্তিতে থাকতে দিচ্ছিল না। অন্যের কাছে চাকুরী করে সারাটা জীবন না কাটিয়ে নিজের জন্য নিজে থেকে কিছু করার বাসনা তাকে প্রতি পদে পদে তাড়িয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছিল।

আর সেই তাড়না থেকেই ঘনিষ্ঠ বন্ধু সন্দীপের সঙ্গে তিনি ফুড ইন্ডাস্ট্রিতে পা রাখলেন। শুরুটা খুব একটা শক্ত মনে হচ্ছিলনা। ৫ টাকায় ইডলি বানিয়ে ৫০ টাকায় বিক্রি, ৪৫ টাকা লাভ। কিন্তু কেবল অর্থ উপার্জনের জন্য তো এতো টাকা মাইনের চাকরি ছেড়ে তিনি ব্যবসায় নামেননি। তাই তিনি নতুন কিছু করার লক্ষ্যে ‘টেকআওয়ে চেইন’ চালু করলেন এবং এরপর ক্রমে হোম ডেলিভারি সিস্টেম, যা রাজুর মতে পৃথিবীর প্রথম ইন্ডিয়ান ফাস্ট ফুড হোম ডেলিভারি। শুরু হল ‘হ্যালো কারি’র পথ চলা। হায়দ্রাবাদের একটি ছোট্ট গ্যারেজ ঘরে যার জন্ম সেই কোম্পানি আজ হায়দ্রাবাদ সহ সমগ্র দক্ষিণ ভারতে এক নম্বর ফুড চেন হিসাবে নাম করেছে। আর এই ‘স্টার্ট আপ’ এর মাধ্যমে রাজু ভূপতি ছুঁতে চান তাঁর স্বপ্ন কে। ‘হ্যালো কারি’ হল প্রথম ভারতীয় ফুড ব্র্যান্ড যা ম্যাকডোনাল্ডস এর মত গোটা বিশ্বজুড়ে ব্যবসা করার স্বপ্ন দেখে। আর সেই স্বপ্নের পথেই এক পা এক পা করে এগিয়ে চলেছে হ্যালো কারি, আর এগিয়ে চলেছেন রাজু ভূপতি।