নবান্নে ‘শতরূপা’-ই অন্নপূর্ণা, ডোমজুড়েও

নবান্নে ‘শতরূপা’-ই অন্নপূর্ণা, ডোমজুড়েও

Wednesday January 06, 2016,

3 min Read

এরা গুলাবি গ্যাঙ নন। এরা গ্যাঙ অব শতরূপা। একদল মহিলা ডোমজুড়ের অর্থনীতির খোল নলচে বদলে দেওয়ার মুরোদ রাখেন। কারা এরা? কীভাবে এলেন সাফল্যের এই পাহাড় চুড়োয়? তা নিয়ে বিস্তর আলোচনা হয়েছে। উত্থানের যে রহস্য আর পাঁচটা সাফল্যের কাহিনিতে, এখানেও তাই। সততা, পরিশ্রম আর অদম্য মনোবল। তবে ডোমজুড়ের শতরূপার লড়াই একশ রকম। জয়ও শতরূপে সামনে এসেছে। আর তা সম্ভব হয়েছে গ্রামের মেয়েদের টিম স্পিরিটের জন্যেই।

যেমন স্কুলের পোশাক তৈরি করছেন গ্রামের মেয়েরা। নিজেরাই যৌথভাবে আইসিডিএসে চাল, ডাল সরবরাহ করছেন। কয়েকজন আবার নিজের হাতের তৈরি খাবার বিক্রি করছেন মেলা, প্রদর্শনীতে। কেউ কেউ নিজস্ব স্বাদ পৌঁছে দিচ্ছেন নবান্নের চৌকাঠে। রাজ্যের প্রধান প্রশাসনিক ভবনের ক্যান্টিনের সিংহভাগ দায়িত্ব এখন ডোমজুড়ের শতরূপা মহাসংঘের সদস্যাদের। এই স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলারা অন্যের রসনাতৃপ্তি করে নিজেদের সংসারে স্বচ্ছলতা এনেছেন। শতরূপার ভরসাও আশার আলো দেখেছে ডোমজুড়।

image


একটা সময় ছিল ডোমজুড়ের সলপ, মাকড়দহ, মহিয়াড়ী, বাঁকড়া, রুদ্রপুর, পার্বতীপুরের বহু পরিবার দিন আনি দিন খাই অবস্থায় ছিল। স্বামীর একার রোজগারে সংসার চালাতে হিমসিম খেতে হত অর্ধাঙ্গিনীদের। কিন্তু কোন পথে নিজের পায়ে দাঁড়ানো যাবে তা নিয়ে কয়েক বছর আগেও দ্বিধায় ছিলেন এলাকার মহিলারা। ২০০২ সালে কয়েকজন উৎসাহী মিলে তৈরি করেন শতারূপা মহাসংঘ নামে এক স্বনির্ভর গোষ্ঠী। শুরুর দিকে ব্যাগ তৈরি, জামাকাপড় বানানো এসব দিয়ে ‌চলছিল। তাতে সাফল্যও আসে। সেই বিশ্বাসে ভর করে আরও ঝুঁকি নিয়ে নতুন পথ খুঁজতে থাকেন গোষ্ঠীর সদস্যরা।

image


পঞ্চায়েত ও প্রশাসনের সহযোগিতায় স্থানীয় কয়েকটি আইসিডিএস কেন্দ্রে গোষ্ঠীর মহিলারা খাবার সরবরাহের দায়িত্ব পান। আয়ের গন্ধ পেয়ে অনেকেই শতরূপা মহাসংঘের অধীন নানা ক্লাস্টার বা সমিতিতে নাম লেখান। এখন ওই মহাসংঘের সদস্যা সংখ্যা পৌঁছেছে সাড়ে পাঁচশোয়। এমনই এক গোষ্ঠীর কোষাধ্যক্ষা হিসাবে সাত বছর ছিলেন সুমিত্রা নস্কর। সুমিত্রাদেবীরা ঠিক করেন গোষ্ঠীরা মেয়েরা নানারকম মিষ্টি, খাবার তৈ‌রি করবে, তা বিক্রি করা হবে বিভিন্ন মেলা, প্রদর্শনীতে। এভাবেই তাদের যোগাযোগ হয় নবান্নে। তারপর শুধু এগিয়ে যাওয়ার কাহিনি।

নবান্নে এই মুহূর্তে শতরূপা মহাসংঘের পাঁচজন রয়েছেন। কেউ বাজার করেন, কেউ রান্না, কেউ পরিবেশন। এভাবে গোষ্ঠীর সদস্যরা ক্যান্টিন ভালভাবে চালাচ্ছেন। নবান্নের শুরু থেকেই ওই গোষ্ঠীর মেয়েরা দায়িত্বে আছেন। তবে প্রথমে তারা একটু সমস্যায় পড়েছিলেন। আগে যারা রাইটার্স বিল্ডিং-এ খাবার পরিবেশন করতেন তারা সহজে জায়গা ছাড়তে চাইছিলেন না। রান্নার স্বাদ এবং পরিষেবায় অনেককেই পিছনে ফেলে দিয়েছেন ওই মহিলারা। রান্না-বান্না করেও যে এগোনো যায় তা দেখিয়েছে ডোমজুড়ের শতরূপা। শুরুর দিকে কেউ কেউ তাদের বলেছিলেন এইসব কে খাবে, অন্য কিছু করলেই তো হত। এখন তারাই বুঝছেন চেষ্টা করলে হোম মিনিস্টাররা বাইরে গিয়েও হতাশ করেন না।

নাড়ু, মালপোয়া, পাটিসাপটার মতো ঘরোয়া মিষ্টি আছে, পাশাপাশি পান্তুয়া, রসগোল্লা, নানরকম সন্দেশের পদ বানান গোষ্ঠীর মহিলারা। কচুরি, আলুর দম তো রয়েইছে। তাদের নোনতা-মিষ্টির ব্যঞ্জন বাইরেও সফল। সবলা মেলা, সরস মেলার মতো স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মেলাগুলি থেকে ভালই রোজগার হয় গোষ্ঠীর মেয়েদের। সুমিত্রাদেবীর কথায়, ‘‘গোষ্ঠীর মাধ্যমে আমরা রোজগারের পথ পেয়েছি। অনেক পরিবারই ঘুরে দাঁড়িয়েছে।’’ শারীরিক কারণে গত বছর সমিতির সম্পাদকের পদ ছেড়েছেন সুমিত্রা নস্কর। তাঁর জায়গায় আসা ডোমজুড়ের ঝুমা দাসও মিশন এগিয়ে নিয়ে চলেছেন। সলপের ছায়া সাঁতরা, রেখা নস্কররাও বাড়ির মায়া কাটিয়ে এখন দিনরাত এক করে খাটেন। তারা বুঝতে পেরেছেন সংসারের একটু খুশি চাইলে, কিংবা ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ার সামাল দিতে হলে এভাবেই এগোতে হবে। গোষ্ঠীর অনেকেই বলেন নতুন করে সংসার দাঁড় করানোর স্বপ্ন শতরূপা মহাসংঘই দেখিয়েছে। সংসারে অবদান রাখতে পেরে তাদের আনন্দ আর ধরে না। মাস হাজার দেড়েক থেকে পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত আয় হয় গোষ্ঠীর সদস্যাদের। লাভের অঙ্কে সংসার চালানোর পাশাপাশি তহবিলে জমাও পড়ছে টাকা।