শিশুমৃত্যু মোকাবিলায় দিশা দেখাচ্ছে কল্যাণীর বিদ্যাসাগর কলোনি

শিশুমৃত্যু মোকাবিলায় দিশা দেখাচ্ছে কল্যাণীর বিদ্যাসাগর কলোনি

Monday December 21, 2015,

3 min Read

ভারতে ডায়েরিয়ায় পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুর মৃত্যুর হার সারা বিশ্বের মধ্যে সবথেকে বেশি। ইউনিসেফের তথ্য বলছে, এ দেশে প্রতি বছর ১ লক্ষ ৮৮ হাজার শিশুর মৃত্যু হয় ডায়েরিয়ায়। দেশের ৪৩ শতাংশ শিশুই কমবেশি অপুষ্টিতে ভোগে। এর প্রধান কারণ অবশ্যই খোলা জায়গায় শৌচকর্ম । পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী কলকাতাতেও যেখানে এই দৃশ্য বিরল নয়, সেখানে নদীয়ার কল্যাণীর বিদ্যাসাগর কলোনি কামাল করে দেখিয়েছে। এখানকার বস্তি এলাকার বেশিরভাগ বাসিন্দাই বাংলাদেশি উদ্বাস্তু। বাড়ি টিনের চালের। কিন্তু শৌচাগার ঝাঁ চকচকে। একই ছবি পাশের কলোনি হরিজন পল্লিরও। কিন্তু বরাবর এমনটা ছিল না কলোনিগুলির চেহারা। একটি মৃত্যু আর স্থানীয় মানুষের সচেতনতা পুরো ছবিটাই বদলে দিয়েছে।

কল্যাণীর ৪ নং ওয়ার্ডের হরিজন পল্লির বাসিন্দা সূর্য বাঁশফোর। তাঁর ছয় বছরের ফুটফুটে মেয়ে যেদিন ডায়েরিয়ায় মারা গেল। সন্তান হারিয়ে দিশেহারা বাবার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়েছিল। আর অশনি সঙ্কেত দেখেছিলেন হরিজন পল্লির বাকি বাসিন্দারা।বস্তির কয়েকজন সচেতন ব্যক্তি বুঝেছিলেন, খোলা জায়গায় শৌচকর্ম এবং তার থেকে ছড়িয়ে পড়া মারণ জীবাণুই প্রাণ কেড়েছে শিশুটির। এভাবে চলতে থাকলে আরও অনেক মায়ের কোলই শূন্য হবে। কিন্তু বস্তির অর্ধশিক্ষিত নিরক্ষর মানুষগুলিকে কীকরে সচেতন করবেন, তা বুঝতে পারছিলেন না তাঁরা। শেষে নাটকের মাধ্যমে সচেতনতা প্রসারের উদ্যোগ নিলেন এলাকার মহিলারাই। রীতিমতো মঞ্চ বেঁধে সূ‌র্য বাঁশফোর পরিবারের ঘটনাকে তুলে ধরা হল। তার ফলও মিলল হাতেনাতে। ৩০০ টাকা খরচ করে বাড়িতে প্রথম টয়লেট বানালেন সূ‌র্যই। দেখাদেখি বস্তির অন্যান্য পরিবারও এগিয়ে এল। ধীরে ধীরে খোলা জায়গায় শৌচকর্ম ইতিহাস হয়ে গেল হরিজন পল্লিতে। তবে কাজল, সীমা বাঁশফোররা সেখানেই থেমে থাকেননি। ওয়ার্ডের অন্যান্য বস্তিতেও সচেতনতা প্রসার করেছেন তাঁরা।


image


২০০৬ সালে কল্যাণী পুরসভার তৎকালীন চেয়ারম্যান ড. শান্তনু ঝাঁ-এর আমন্ত্রণে কল্যাণীর বস্তি এলাকায় পা রেখেই সমস্যার গভীরতা আঁচ করেছিলেন সিএলটিএস ফাউন্ডেশনের সদস্যরা।পুরসভার সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে শুরু হয় সচেতনতা প্রসার।১৫০ টাকার টয়লেট প্যান দেওয়া হয়েছিল প্রত্যেক পরিবারকে। কয়েক বছরে কল্যাণী হয়ে ওঠে ওডিএফ বা ওপেন ডেফিকেশন ফ্রি এলাকা। ২০০৯ সালে রাষ্ট্রপতির কাছ থেকে স্বীকৃতিস্বরূপ পুরস্কারও পায়।

কল্যাণী পুরসভার এক নং ওয়ার্ডের বিদ্যাসাগর কলোনি পুর এলাকার প্রথম বস্তি যেটি পুরোপুরি ওপেন ডেফিকেশন ফ্রি বা ওডিএফ হয়েছিল। এলাকার বেশিরভাগ বাসিন্দাই বাংলাদেশি উদ্বাস্তু। তাঁদের বাড়ি কাঁচা হলেও বাথরুম পাকা সকলেরই। এদের কেউ কৃষক, কেউ মুড়ি বিক্রি করে সংসার চালান। তবু এটুকু বুঝেছেন যে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার কোনও বিকল্প নেই। এরজন্য সরকারি ভর্তুকিরও অপেক্ষা করেননি জগদীশ বিশ্বাস, অমর হালদাররা। আত্মীয়দের থেকে টাকা ধার করেই বাড়িতে শৌচালয় বানিয়ে ফেলেছেন।


image


ভারতের প্রতিবেশী রাষ্ট্র বাংলাদেশ এখন ৯৯% ওডিএফ। নেপালও তাই। অথচ ভারতে যেখানে শৌচালয় বানাতে কয়েকশো কোটি টাকা ভর্তুকি দেয় সরকার, সেখানে আজও অবাধে চলছে খোলা জায়গায় শৌচকর্ম। তাই এই ধরনের প্রকল্পের যৌক্তিকতা নিয়েই প্রশ্ন উঠছে। শুধু ভর্তুকি দিয়ে শৌচালয় বানিয়ে দিলেই দায়িত্ব ফুরিয়ে যায় না। মানুষের আচরণে পরিবর্তন আনা অত্যন্ত জরুরি। না হলে সমস্যার শিকড়ে পৌঁছানো কোনওদিনই সম্ভব নয় “, বলছিলেন সিএলটিএসের এক সদস্য সায়ন্তন রায়চৌধুরী।