মুশকিল আসান ‘হলওয়েজ’

মুশকিল আসান ‘হলওয়েজ’

Saturday September 19, 2015,

5 min Read

দারুন একটা টিম যে কোনও সংস্থার সম্পদ। যদিও, এমন একটা টিম বানানো, তার কর্মক্ষমতা ছড়িয়ে দেওয়া এবং সেখান থেকে ফায়দা তোলা চাট্টিখানি কথা নয়। কীভাবে একটা টিম থেকে কাজ বের করা আনা যায় সেটাই দখিয়ে দেয় ‘হলওয়েজ’। এন্টারপ্রাইজ স্যোশাল নেটওয়ার্কিংয়ের (ইএসএন) একটি সংস্থা বা মঞ্চ।

টিম হলওয়েজ

টিম হলওয়েজ


‘হলওয়েজ’, স্মার্ট দলপতির মতো কাজ করে। সে জানে কীভাবে একটা সংস্থায় পারস্পরিক সহযোগিতাকে উৎসাহ দিতে হয়। সংস্থার কর্মীর দক্ষতা বুঝে নিতে হয়। ধারনার আদান-প্রদানে সাহায্য করা, পরিকল্পনাকে কাজে পরিনত করা এবং আরও ভালো দল তৈরি করার কাজ করে এই সংস্থা। ২০১৪র এপ্রিলে চূড়ান্ত পেশাদার টেকনোক্র্যাট সইফ আহমেদের উদ্যোগেই শুরু হয়েছিল ‘হলওয়েজ’। দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কম্পিউটার সায়েন্সে স্নাতক সইফ। ১৪ বছর বিভিন্ন আইটি সংস্থায় কাজের অভিজ্ঞতা রয়েছে। সবচেয়ে গুত্বপূর্ণ হল, বিভিন্ন ব্যবসায়ীক সংস্থায় বিশ্বমানের প্রযুক্তিগত সহযোগিতা এবং সমাধানের পথ দেখাতে তাঁর জুড়ি মেলা ভার। 

ভার্জিনিয়ার ডিলঅ্যাওয়ার কর্পোরেশনের সঙ্গে যুক্ত ‘হলওয়েজ’। একটি সংস্থা যেসব চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে পারে যেমন, কর্মীদের জোটবদ্ধ করে রাখা (সংযোজিত এবং উৎসাহিত), পারস্পরিক মত আদান-প্রদানে কোনও সমস্যা, স্বচ্ছতার অভাব এবং সম্ভাবনাময় বৃদ্ধিকে দ্রুত চিহ্নিত করা এই সব কিছুর সহজ সমাধান দেয় সইফের সংস্থা। আর এই কাজ করতে গিয়ে ‘হলওয়েজ’ প্রথমেই একটা এক্সক্লুসিভ অনলাইন গোষ্ঠী তৈরি করতে সাহায্য করে। এই গোষ্ঠীর ভিতর কর্মী, ব্যবসার অংশীদার এবং এমনকী খদ্দেররাও মেসেজ চালাচালি করতে পারেন। স্ট্যাটাস আপডেট করতে পারেন। কাজের অগ্রগতি পোর্ট নিজেদের মধ্যে শেয়ার করে অথবা প্রশ্ন-উত্তরের পর্বও চলতে পারে। যাদের মধ্যে এই যোগাযোগটা রয়েছে সেই অংশগ্রহণকারীরা রিপ্লাই করে অর্থাৎ উত্তর দিয়ে অথবা অ্যাড কমেন্ট অর্থাৎ মন্তব্য করে নানা বিষয়ে তথ্য আদান-প্রদান করতে পারে। এই প্রক্রিয়ার মধ্যে থেকে যে কথোপকথনগুলি পাওয়া যায় সেগুলিকে একত্রিত করে সংস্থার জন্য একটা কাজের ধারা তৈরি করে দেয় ‘হলওয়েজ’।

‘হলওয়েজ’ এর মতে এই নেটওয়ার্কিংয়ের মাধ্যমে কাজের জায়গায় সামাজিক পরিবেশ তৈরি হয়। ‘হলওয়েজ’ এর মতো আরও যে প্ল্যাটফর্মগুলি রয়েছে সেই ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে সাইফ বলেন, ‘মানুষ জটিল সফটঅয়্যার গুলি আর পছন্দ করছে না, পালিয়ে থাকতে চান সেসব থেকে। আমাদের এই মঞ্চের মজা হল, সহজ সরল ইউজার ফ্রেন্ডলি ইন্টারফেস। একই ধরনের অন্যান্য প্ল্যাটফর্মগুলির সমস্যা হল নানা দিক থেকে অনেক কিছু প্রসেস ধার করতে গিয়ে বিষয়টাকে জটিল করে ফেলেছে। তার উপর বেশিরভাগ ইএসএন-রা কনটেন্ট-এর দিকে বেশি নজর দেয়, একটা ক্লিকেই সব তথ্য পেতে চায়। তাতে সমস্যা আরও বাড়ে। আমাদের সার্চ ইঞ্জিন প্রথমে তালিকা, তারপর বিবরণ দেয় এবং যতরকম সম্ভাবনা থাকতে পারে তার সমস্ত তথ্য জুড়ে দেয়। শুধু তাই নয়, যেসব ডেটা দেওয়া হয় তার সম্পর্কিত তথ্যও দিয়ে দেয়’, জানান সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা সইফ যিনি সংস্থার গ্লোবাল হেডও এবং যিনি ভারতকে সুযোগের খনি বলে মনে করেন।

ব্যবসায়ীক সংস্থাগুলির প্রতি ‘হলওয়েজ’ ওয়েবসাইটের মেসেজ হল, ‘অভ্যন্তরীন পারস্পরিক সহযোগিতা কর্মীদের একসূত্রে গেঁথে রাখে, তাদের বহুমুখী প্রতিভার বিকাশ ঘটায় এবং এই একই জনশক্তি নতুন সম্ভবনার পথ দেখায়’। একইসঙ্গে কর্মীদের প্রতি মেসেজ হল, ‘সিনিয়র এবং সহকর্মীদের সঙ্গে যে কোনও জায়গায় যোগাযোগ রাখুন। ইন্টিলিজেন্ট প্রোফাইলিং ইঞ্জিনের মাধ্যমে সহজে এক্সপার্টদের খুঁজে নিন যার মাধ্যমে আপনার প্রজেক্টের কঠিন জায়গাটির সহজ সমাধান খুঁজে পেতে পারেন। নিজের মেন্টর এবং সমমনাদের সঙ্গে লেগে থাকুন যাতে সহজে ধরে নিতে পারেন তাঁরা কীভাবে ভাবছেন’।

এই ভেঞ্চারে আর্থিক সমস্যা ছিল। তাকিয়ে থাকতে হয়েছিল ছোট বড় মাঝারি নানা ধরনের সংস্থার কর্নধার এবং CXO (চিফ অফিসার সম্পর্কিত)দের দিকে যতক্ষণ না তাঁদের কেউ সংস্থার বাতাবরণ বদলে দিতে এগিয়ে আসেননি। সংস্থার উন্নতির হালটা ধরেছিলেন সইফ-ই। ব্যবসায় ছোট বড় নানা ধরনের বিজনেস স্ট্রেটেজি এনে, বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলে, নানা ক্ষেত্র থেকে গ্রাহকদের নিয়ে আসার কাজটা তিনিই সামলেছেন। ‘বহুমুখী প্রতিভা নিয়ে ছোট্ট দল আমাদের। আমরা সবাই যার যা পছন্দ তাই করি। সারা বিশ্বে ৬০ জন কর্মীর দল রয়েছে’, জানান সইফ। বিজনেস মডেলটা কেমন? সইফ জানান, ‘হলওয়েজ’ ভাড়ায় ক্লাউড সাবসক্রিপশন মডেল এবং একই সঙ্গে ফ্রি অ্যড বেসড মডেল অফার করে। মাত্র এক বছর আগে লঞ্চ করে ইতিমধ্যে পুঁজি ৭০ লক্ষে নিয়ে গিয়েছে। শুধু তাই নয়, প্রতি বছর ১০ শতাংশ করে রেভিনিউ হচ্ছে। সাফল্য দেখে উৎসাহিত হয়ে সইফরা এবার ভেঞ্চার কেপিটালিস্টদের (মূলধেনর যোগান দেয় যারা)কাছে তদবির করছেন বিনিয়োগের জন্য। ইউরোপের পাশাপাশি সারা বিশ্বে সংস্থাকে ছড়িয়ে দেওয়ার ইচ্ছে রয়েছে বলে জানান সইফ। ‘আমরা উত্তর আমেরিকা এবং দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলিতে ইতিমধ্যে ঢুঁ মারতে শুরু করেছি। ১৫ টি সংস্থার ৫০০০ ইউজার এখনই আমাদের খাতায় রয়েছে’, তিনি জানান। একই সঙ্গে উত্তর আমেরিকার অন্যতম একটি ডিজিটাল ব্রডকাস্ট সার্ভিস প্রোভাইডারের সঙ্গে চুক্তি হওয়ার কথা জানান সইফ।

যেসব সংস্থা ‘হলওয়েজ’এর সাহায্য এখনও পর্যন্ত পেয়েছে তাদের প্রতিক্রিয়া সদর্থক। সাইফ যুক্তি দেখান, এই ধরনের প্ল্যাটফর্মে থাকার ফলে কোনও সংস্থার একেবারে উচ্চস্তরের পক্ষে তৃণমূল স্তরের কাজের সম্পর্কে সম্যক ধারনা থাকে। এরফলে কর্মীদের বিশ্বাস অর্জন এবং সর্বোপরি ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডার তৈরি হয়। যেসব সংস্থা খোলামনে কাজ করে না তাদের সামলানো বিরাট চ্যলেঞ্জ। ‘আমেরিকার বাজারে বিভিন্ন সংস্থা স্বচ্ছতা এবং খোলামেলা পরিবেশ তৈরি করতে এইসব সামাজিক মঞ্চগুলি নিয়ে আসে। ভারতের বাজারের মানসিকতা একটু জগাখিচুড়ি পাকানো। সংস্থার নেতার এক পা এগিয়ে দু পা পিছিয়ে আসেন অনভিপ্রেত কোনও পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার ভয়ে’, অনুযোগ করেন ‘হলওয়েজ’এর কর্নধার।

এই চ্যালেঞ্জ সামলানোর এক্সপার্ট টিম রয়েছে ‘হলওয়েজ’এর। বিশেষজ্ঞ দল এস্কটারনেল গ্রুপ এবং গ্রুপ চ্যাটের মতো আরও কিছু সুবিধার কথা ঘোষণা করতে চলেছে। তাছাড়া ‘হলওয়েজ’ এখন ডেক্সটপ বা মোবাইলেও পরিষেবা, বিভিন্ন ব্যবসা এবং নিয়োগের পরিকল্পনা দেয় প্রতিযোগিতামূলক মজুরি এবং লাইসেন্সিং ফির বিনিময়ে।

‘হলওয়েজ’ একা নয়, ময়দানে আরও প্রতিযোগী আছে। সহজেই আন্দাজ করা যায় বাজারে টিকতে গেলে কতটা কঠিন লড়াই করতে হয়। সইফ স্বীকার করেন ব্যাপারটা কঠিন। একইসঙ্গে বাজার দখলের বিরাট সম্ভাবনাও তাঁকে স্বপ্ন দেখায়। গার্টনারের হিসেব অনুযায়ী, আপাতত ৮৪০ মিলিয়নের বাজার। বার্ষিক ১৩.৪ শতাংশ হারে বাড়ছে। ১৩ থেকে ১৪ শতাংশ মার্কেট শেয়ার নিয়ে শীর্ষে রয়েছে আইবিএম কানেকশন। ৮ থেকে ১০ শতাংশ মার্কেট শেয়ার নিয়ে তার পরেই রয়েছে Jive। অন্যান্য শীর্ষ স্থনীয় সংস্থাগুলির মধ্যে রয়েছে মাইক্রোসফটের ইয়েমার এবং সেলসফোর্স চাটার।