"স্টার্টআপরা এবার কাজে মন দিতে পারবেন"-সীতারামন

"স্টার্টআপরা এবার কাজে মন দিতে পারবেন"-সীতারামন

Saturday January 16, 2016,

3 min Read

image


এতদিন শুরুয়াতি উদ্যোগের ক্ষেত্রে সরকারের বিভিন্ন দফতর থেকে অনুমতি পাওয়া না পাওয়া নিয়েই চলত হাজার একটা চড়াই উৎরাই। এবার সে সব ভেস্তে যাবে। সরকার আর শুরুয়াতি উদ্যোগপতিদের পথে কোনও হার্ডেল থাকতে দেবে না। ফলে এসব নয়। বরং উদ্যোগপতিরা মন দিতে পারবেন কাজে। সমস্ত সময়টা দিতে পারবেন ভাবনার নির্মাণ আর তার রূপায়নে। 

স্টার্টআপ সংক্রান্ত আমলাতান্ত্রিক জটিলতা ও দীর্ঘসূত্রিতা কাটিয়ে উঠতে মরিয়া এনডিএ সরকার। অন্তত সকাল থেকেই শুরু হয়েছিল সেই মুড। দেশ বিদেশ থেকে আসা হাজার দেড়েক ডেলিগেটের সামনে নির্মলা সীতারামন, অরুণ জেটলি এবং শেষ পর্যন্ত খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তুলে ধরতে চাইলেন ভারতের এই ছবি।

মোদি তাঁর ভাষণে বলেন আমাদের দেশে মিলিয়ন সমস্যা রয়েছে পাশাপাশি বিলিয়ন মাইন্ডও আছে। তাই সমস্যা দূর করতে বেশি সময় লাগবে না। সরকারের গোটা প্যাকেজিংটাই এদিন ছিল দারুণ পজিটিভ। 

বহু প্রতীক্ষিত ‘স্টার্টআপ ইন্ডিয়া স্ট্যান্ডআপ ইন্ডিয়া’ ইভেন্টে ভারতের কেন্দ্রীয় বাণিজ্য ও শিল্প প্রতিমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন জানালেন যে কিভাবে তাঁদের সরকার ভারতের স্টার্টআপ ইকোসিস্টেমকে বিকশিত করার চেষ্টা করছে।

এদিন তিনি বলেন যে, “সরকারের যেসমস্ত মন্ত্রকের উপর দায়িত্ব রয়েছে স্টার্টআপের সাথে যুক্ত ব্যক্তিবর্গকে এক জায়গায় নিয়ে আসার, সেই সম্মিলিত শক্তির সর্বোৎকৃষ্ট ব্যবহারের লক্ষ্যে উদ্যোগ নেবার এবং বিভিন্ন স্টার্টআপের সাথে সংযোগ রাখার, গত ১৫ই অগাস্ট প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির স্টার্টআপ ইন্ডিয়া ক্যাম্পেইনের ঘোষণার পর থেকে আমরা সেই সমস্ত মন্ত্রকের সাথে যোগাযোগ রেখে চলেছি।” উনি আরো জানান যে, ইতিমধ্যেই পরিকাঠামো তৈরি হয়ে গেছে এবং সরকার স্টার্টআপ ইকোসিস্টেমের উন্নয়নে নিজের ভূমিকার গুরুত্ব উপলব্ধি করেছে।

স্টার্টআপ সংক্রান্ত সরকারি নীতিতে অস্বচ্ছতা এবং অনুমতি নেবার প্রক্রিয়ার দীর্ঘসূত্রীতাজনিত সমস্যার দ্রুত সমাধান হবে। সীতারামনের কথার অনুরণন পাওয়া গেল অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলির গলাতেও। জেটলি স্টার্টআপ ইকোসিস্টেমের বিকাশের ওপর জোর দিলেন ঠিকই কিন্তু সব থেকে বেশি জোর দিলেন সরকারের ভূমিকার ওপর। এবং বললেন তাঁদের সরকার স্টার্টআপদের বৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করতে চায়।

এসব ভাষণে রাজনীতির গন্ধ যে একদম ছিল না তা নয়। গণতান্ত্রিক দেশে রাজনীতিই গোটা কাহিনির প্রধান চালিকা শক্তি। কিন্তু আজ দেশ দেখল একটি সরকার গা ঝাড়া দিয়ে কিভাবে দাঁড়াতে পারে। গোটা দেশ দাঁড়াবে এই প্রত্যয় নিয়েই আজ শুরু হল মোদির ভারতের নতুন যাত্রা।

বারবার মোদি-জেটলি-সীতারামন বললেন শুরুয়াতি ব্যবসাগুলির সামনে কোনও বাধা হয়ে দাঁড়াতে চায়না তাদের সরকার। “সরকার যাবতীয় অস্বচ্ছতা দূর করতে চায়। তাদের সরকার চায় উদ্যোক্তারা সরকারি দফতর নিয়ে ভাবনার বদলে নিজেদের সংস্থার কাজে পূর্ণ মনোনিবেশ করুন। দেশ এগোক স্বাধীন গতিতে।

এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই যে ভারতে স্টার্টআপগুলিকে দেখার দৃষ্টিভঙ্গিতে একটা বড় বদল এসেছে। সীতারানের মতে, আজকের তরুণদের মধ্যে সরকারি চাকরি খোঁজার প্রবণতা হ্রাস পেয়েছে। 

সরকারের প্রধান স্বয়ং বলছেন, এখন কেউ আর সরকারি চাকরি খোঁজে না; আমাদের তরুণ প্রজন্ম নিজদের ভবিষ্যৎ নিজেদের হাতে গড়তে চায়। এত কথার ফাঁকে সীতারামনের আবেদন স্টার্টআপদের ভারতে আসা উচিত, এখানে থেকে ব্যবসা করা উচিত, এবং শুধুমাত্র প্রযুক্তিনির্ভর শিল্পের পরিসরের আবদ্ধ না থেকে অন্যান্য পরিসরেও তাদের মনোনিবেশ করা উচিত। কারণ অন্যান্য পরিসরগুলির মধ্যে বৃদ্ধি দেখা যাচ্ছে। 

সাম্প্রতিককালে সিলিকন ভ্যালি থেকে বেশ কিছু ভারতীয় উদ্যোক্তাদের দেশে ফেরার যে ঘটনাগুলি ঘটেছে তা সামগ্রিকভাবে দেশের স্টার্টআপ মানচিত্রে ইতিবাচক বদল এনেছে বলে মনে করেন সীতারামন। বলেন “ওঁদেরও যে কিছু দেবার আছে ভারতকে, সেটা প্রমাণ করার জন্যই ওনারা দেশে ফিরেছেন।”

তাঁর দাবি, গতবছর ভারতে স্টার্টআপের বিনিয়োগ ৫০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছ। অন্যান্য বিনিয়োগকারী ব্যক্তি ও সংস্থার মত তাঁদের সরকারের ‘ফান্ড অফ ফান্ডস’ও একইভাবে সাহায্য করে বিভিন্ন স্টার্টআপগুলিকে।

অতীতে ব্যর্থতার সম্মুখীন হওয়া একাধিক উদ্যোক্তা দাবি করেছেন যে সরকারি লালফিতের ফাঁসই তাদের সাফল্যের পথে প্রতিবন্ধক হয়ে দেখা দিয়েছিল। ব্যর্থ হলেও যাতে স্টার্টআপগুলি মুখ থুবড়ে না পড়ে, তার জন্য সরকার বিনিয়োগকারী ও উদ্যোক্তাদের জন্য ‘ইসি এক্সিট’ এর ব্যবস্থা করবে বলে জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় বাণিজ্য ও শিল্প দফতরের এই প্রতিমন্ত্রী। ইতিমধ্যেই পার্লামেন্টে পাঠানো হয়েছে ‘ব্যাঙ্করাপ্সি বিল' ।

লেখা – আথিরা এ নায়ার

অনুবাদ – সন্মিত চ্যাটার্জী

(ইওরস্টোরি স্টার্টআপ ইন্ডিয়া স্ট্যান্ডআপ ইন্ডিয়ার অফিশিয়াল পার্টনার।)