সবজি বাজারে আগুন। আলু পটল ঝিঙে মুলোর দাম চড়া। কিন্তু কৃষক এই সবজি বিক্রি করেন জলের দরে। সবজির দাম না পেয়ে কৃষকের আত্মহত্যার খবরও শোনা যায়। মিডিলম্যানরা কৃষক এবং ক্রেতার মাঝখানের এই বিশাল নেটওয়ার্ক চেনটা টিকিয়ে রাখে এবং প্রতিস্তরে নিজেদের লাভ বুঝে নিতে গিয়ে ফসলের দাম বাড়িয়ে দেয়। সবজি নষ্টও করে। সবথেকে বেশি ক্ষতি হয় খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্পে। কৃষক পড়ে থাকেন দারিদ্রের তিমিরেই। মাঝখান থেকে লাভের গুড় খেয়ে যায় মিডলম্যানের দল। এই চক্রব্যূহ থেকে কৃষকদের বের করে এনে যোগ্য মূল্য দেওয়ার চেষ্টাই করছেন দুই তরুন। সুনুর কাউল এবং মায়াঙ্ক ধানুকা। এই দুই তরুণের উদ্যোগে তৈরি হয়েছে ওরিগো কমোডিটিস। যেখানে কৃষক আর ক্রেতার মাঝখানে কোনও মিডলম্যান নেই। যারা আমাদের মুখে আহার দেন তাদের মুখে হাসি ফোটাচ্ছে ওরিগো।
ওরিগো কমোডিটিস শুরু হয় ২০১০-এ। ওঁরা দুজনেই স্কুল জীবন থেকে সহপাঠী। দুজনেই দিল্লী আই.আই.টির স্নাতক। মায়াঙ্ক ইনভেস্টমেন্ট ব্যাঙ্কার হিসাবে ভারতেই কাজ শুরু করেন। তারপর হংকং যান। কলম্বিয়ায় বিজনেস স্কুলে ভর্তি হন। এরপর নিউইর্য়কে বছর দুয়েক থেকে ২০০৯-এ ভারতে ফিরে আসেন।
ওদিকে সুনুর আই.আই.টি.-র পরে জেনারেল ইলেকট্রিক (G.E.)-এ চাকরি পান। তারপর মেশিগন থেকে এম.বি.এ. করে তিনিও ইনভেস্টমেন্ট ব্যাঙ্কার হন।
নিউইর্য়কে জমিয়েই ফেলেছিলেন মায়াঙ্ক, সুনুরও তাই। তবু দেশে ফিরে এলেন মাটির টানে। পরিবর্তনশীল ও সুদূরপ্রসারী লাভজনক একটি সংস্থা তৈরি করার কথাই মাথার ভিতর ঘুরপাক খাচ্ছিল। অনেক কিছুই ভাবছিলেন দুজনে। সমস্যায় জর্জরিত ভারতে শিক্ষা স্বাস্থ্যের মতো বিষয়গুলি নিয়ে কাজ করার কথা ভাবছিলেন। কিন্তু সবথেকে বেশি টানল কৃষি ভিত্তিক এই কাজ। কৃষি কাজে অর্থ সাহায্যের মাধ্যমে কৃষকদের সাহায্য করার থেকে গুরুত্বপূর্ণ আর কিছুই মনে হয়নি। ফসল মজুত করা থেকে ফসল প্রক্রিয়াকরণকারীদের কাছে পৌঁছে দেওয়ার কাজটাও করে থাকে ওদের সংস্থা। তাঁদের সবচেয়ে বড় সাফল্য তাঁরা বর্তমানে ন্যাবার্ডের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন। যার দ্বারা কৃষকদের নানা ভাবে শিক্ষা ও অর্থ সাহায্য করতে পারছেন। বর্তমানে “ওরিগো-কমোডিটি” ষোলোটি রাজ্যে তিনশো পঞ্চাশটা ফসল মজুতদারের সঙ্গে যুক্ত।
তাঁরা চান একটা সঠিক যোগান ব্যবস্থা তৈরি করতে। যাতে কৃষকদের সঙ্গে উৎপাদনকারীর যোগাযোগ আরও নিবীড়ভাবে হয়। যার ফলে ফসল মজুতের সুবিধে, বিনিয়োগের সুবিধে এবং পণ্য পরিবহণ সংক্রান্ত সুবিধে পান কৃষকেরা। মায়াঙ্ক সুনুরদের আশা, এই পদ্ধতিতে অতি সহজেই মধ্যবর্তী দালাল চক্র সরে যাবে। তবে খুব সহজেই যে সেটা হওয়ার নয় খুব ভালোভাবে জানেন দুজনেই।