অ্যাডভেঞ্চার স্টার্ট-আপের এক নতুন ঠিকানা - ক্যালিপসো অ্যাডভেঞ্চার টীম

অ্যাডভেঞ্চার স্টার্ট-আপের এক নতুন ঠিকানা - ক্যালিপসো অ্যাডভেঞ্চার টীম

Wednesday November 18, 2015,

4 min Read

বেরাতে গিয়ে একটু অন্যরকম অভিজ্ঞতা পেতে সবারই ভালোলাগে। মানে কিছুটা হ্যাটকে ঘোরাঘুরি। ধরুন জিন্দেগী না মিলেগি দোবারা’র মতো কিছুটা অভিজ্ঞতা যদি পাওয়া যায় তাহলে আর মন্দ কি? ঘুরতে যাওয়ার সংজ্ঞাটাই যে অনেকটা পাল্টে দেওয়া সম্ভব। আর এই সম্ভাবনার কথা মাথা রেখেই কম্যান্ডার শাম আর কম্যান্ডার থমাস জাকারিয়াস মিলে তৈরি করেছে ক্যালিপসো অ্যাডভেঞ্চার টীম । পেশায় দুজনেই সামরিক বিভাগের কর্মী ছিলেন। শাম তার জীবন শুরু করেন কেরালার সৈনিক স্কুল থেকে। সেখানেই সে তার জিবনের একটা নতুন দিশা খুঁজে পায়। অ্যাডভেঞ্চারের একটা নতুন জগত খুঁজে পায় সে। এরপরে ন্যাশনাল ডিফেন্স অ্যাকাডেমি থেকে পাইলট হওয়ার প্রশিক্ষণ নিয়ে কম্যান্ডার শাম উড়ে যেতে থাকে দূর থেকে দুরান্তে। সালটা ১৯৯৫, শামের পোস্টিং হয় কোচিতে আর সেখানেই তার সাথে দ্যাখা হয় কম্যান্ডার থমাস জাকারিয়াসের, যিনি আর্মির একজন ইলেক্ট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ার। অ্যাডভেঞ্চার আর নতুনকে খুঁজে বের করার নেশা তাদের বন্ধুত্তে অনুঘটকের কাজ করে। পথ চলা শুরু হয় একসাথে। তৈরি হয় ক্যালিপসো অ্যাডভেঞ্চার টীম ।

ক্যালিপসো অ্যাডভেনচার টীম

ক্যালিপসো অ্যাডভেনচার টীম


একটা ধারণা আমাদের সবার মধ্যেই আছে যে অ্যাডভেঞ্চার মানেই জায়গাটা হতে হবে হিমালয়ের মতো কোন জায়গা বা নুন্যতম কিছুটা পাহাড়ি এলাকা। কিন্তু শামের মতে এই ধারণাটা বদলে ফেলাই ছিল ওদের কাজ। সাধারণের মধ্যে অসাধারণ খুঁজে বের করাই এদের প্রধান উদ্দেশ্য। তারা যখন নেভির চাকরি ছেড়ে দিয়ে ২০০০ সালে একটা প্রতিষ্ঠান খুলল, যাদের উদ্দেশ্য কেরালার মতো জায়গাতেও অ্যাডভেঞ্চারিয়াস কিছু করা। প্রায় বছর পাঁচেক সময় লেগেছিল তাদের এই টীম তৈরির কাজটা করতে। কিন্তু সবথেকে কঠিন কাজটা ছিল মানুষকে বোঝানো আর রাজী করা এই কেরালার মতো জায়গাতেও অ্যাডভেঞ্চার সম্ভব। তবে আজকে তারা তাদের এই উদ্দেশ্যে সফল। শাম বলছিলেন যখন তারা চাকরি ছেড়ে দিয়ে প্রথম এই কাজের কথা ভাবতে শুরু করল তখন অনেকেই তাদের পাগল ছাড়া আর কিছুই ভাবতে পারেনি। কিন্তু অদম্য ইচ্ছাশক্তি তাদের কে ঠিক সফল করেছে নতুন এই ধারণাকে সফল করতে। নেচার ট্র্যাভেল, ইকো ট্যুর আর অ্যাডভেঞ্চার এইগুলিই মুলত এই ট্যুরিজ্‌ম ব্যাবসার উদ্দেশ্য।

যে কোন ব্যাবসার মতো ক্যালিপসোর শুরুর দিনগুলোও ছিল খুব কঠিন। প্রথম দিকে টাকা জোগাড় করে, লোক জোগাড় করে একটা ট্যুর করা ছিল রীতিমত ঝক্কির ব্যাপার। প্রাথমিক ভাগে প্রতিষ্ঠাতারা আর কিছু কিছু বন্ধুরা মিলে একটা ফান্ড তৈরি করে সেই দিয়েই ট্যুর আয়োজন করত। কিন্তু ওরা হার মানেনি আর অদ্ভুত এক প্রাণোচ্ছল চালিকাশক্তি তাদের আরও অনেক দূর এগিয়ে যেতে সাহায়্য করেছে। আস্তে আস্তে বাড়তে থাকে কাস্টমার, বাড়তে থাকে টাকা পয়সার যোগান। ক্রমশ দক্ষিণ ভারতে বাড়তে থাকে তাদের জনপ্রিয়তা। টুরিস্টরা উৎসাহিত হতে শুরু করে এই অ্যাডভেঞ্চার ট্যুরিজ্‌ম এর প্রতি। এর পর আস্তে আস্তে তারা একটু বড় বড় গ্রুপ এ ট্যুর শুরু করে যেখানে প্যারাগ্লাইডিঙ্গ থেকে শুরু করে কায়াকিং, সাইক্লিং, ট্রেকিং সব ব্যাবস্থাই করা হত কাস্টমারের মনরঞ্জনের জন্য। আর এভাবেই আস্তে আস্তে তাদের জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকে পুরো ভারত জুড়েই। আসলে ওনারা একটা জিনিস বুঝেছিল অ্যাডভেঞ্চার জিনিসটা মানুষের মধ্যে লুকিয়ে থাকেই শুধু সুযোগের অভাবে সেটা অনেক সময়ি প্রতিফলিত হতে পারেনা। আর এই জায়গাটাতেই বাজীমাত করেছে এই দুজন নেভি কম্যান্ডার। নিজেদের চাকরি কে সেচ্ছায় ছেড়ে দিয়ে এরা নিজেদের মাতিয়ে দিয়েছিলেন মানুষের অ্যাডভেঞ্চার মনটাকে নাড়িয়ে দেওয়ার জন্য।

কম্যান্ডার শাম

কম্যান্ডার শাম


এখন ক্যালিপসো ছোট বড় বিভিন্ন গ্রুপ নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় ট্রিপ করে বেরায়। মোটামুটি ১৫০ জনকে নিয়ে ঘুরতে যাওয়ার ক্ষমতা এখন আছে ক্যালিপসোর। এখন তাদের কোম্পানির ছড়িয়ে গেছে কন্যাকুমারিকা থেকে শুরু করে মুসউরি। ৩২ জনের দলে ১৫ জন স্থানীয় বাসিন্দা আছেন যারা টুরিস্টদের গাইড করতে সাহায়্য করেন আর তারা সবাই সঠিক ভাবে প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত। এতে দুটো সুবিধা আছে, এক – স্থানীয় মানুষজন কিছুটা রোজগারের সুবিধা পাচ্ছে এবং সাথে সাথে যারা ঘুরতে যাচ্ছে তাদেরও জায়গাটা সম্পর্কে একটা বিস্তারিত ধারণা তৈরি হচ্ছে। শাম জানাচ্ছেন যে তাদের প্রধান লক্ষ্য হল স্থানীয় বাসিন্দাদের সাহায্য করে একটা দায়িত্বশীল ট্যুরিজ্‌ম এর ব্যাবস্থা করা। এক্ষেত্রে উল্লেখ্য ক্যালিপসো কিছুদিন আগেই কন্যাকুমারিকা থেকে মুসউরি পর্যন্ত একটা লম্বা দুরত্তের সাইক্লিং ট্যুরের আয়োজন করেছিল, যেখানে অবিশ্বাস্য সাড়া পেয়েছিলেন তারা।

শাম বলছিলেন যে সে একজন কমার্শিয়াল পাইলট হতে পারতেন কিংবা থমাস কোন বড় কর্পোরেটে চাকরি করে অনেক বেশি টাকা রোজগার করতে পারতেন আর অনেক কোম্পানি তাদের ভালো ভালো চাকরি দিতেও চায় কিন্তু প্রকৃতি তাদের টানে। বন্ধ ঘরে এয়ার কন্ডিশন মেশিন এর সামনে বসে কাজ করে টাকা রোজগার করার থেকে পাহাড়, জঙ্গলে ঘুরে বেড়ানোতে তাদের আনন্দ অনেক বেশি। কেরালা থেকে শুরু করে ক্যালিপসো এখন ছড়িয়ে গেছে রাজস্থান, গোয়া কিংবা আরও উত্তর পূর্বাঞ্চলে। ওদের বেশিরভাগ ক্লায়েন্টই বিদেশি। ঠিক মতো পরিষেবা দিয়ে আরও বেশি জায়গায় ছড়িয়ে গিয়ে আরও বেশি সংখ্যক মানুষকে এই অ্যাডভেনচার নামক জিনিসটার সাথে সঠিক ভাবে পরিচয় করিয়ে দেওয়াই হল এদের প্রধান উদ্দেশ্য।

লেখকঃ জুবিন মেহতা

অনুবাদকঃ নভজিত গাঙ্গুলি