সৃষ্টিসুখের উল্লাসে মেতে থাকেন শ্রীবিদ্যা শ্রীনিবাসন

জীবনের পথে বড় হয়ে ওঠার কোনও নির্দিষ্ট ছকে বাঁধা নিয়ম থাকে না। গতানুগতিকতার বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণা করেই তাঁদের ব্যতিক্রমী হয়ে ওঠা। শ্রীবিদ্যা শ্রীনিবাসনের র গল্পটা তেমনই। তাই চাকরি ছেড়ে নিজের সংস্থা গড়ে তুলতে পেরেছিলেন তিনি। তাঁর নিজের হাতে গড়া আইটি সংস্থা অ্যামাগি, আজ দেশের অন্য অগ্রণী তথ্য প্রযুক্তি সংস্থাগুলির সঙ্গেই পাল্লা দিয়ে এগিয়ে চলেছে।

সৃষ্টিসুখের উল্লাসে মেতে থাকেন শ্রীবিদ্যা শ্রীনিবাসন

Sunday August 23, 2015,

3 min Read

শ্রীবিদ্যা শ্রীনিবাসন

শ্রীবিদ্যা শ্রীনিবাসন


কোয়েম্বাটুরের কাছে এক ছোট্ট গ্রামে জন্ম শ্রীবিদ্যা শ্রীনিবাসনের। মা-বাবা স্কুল শিক্ষক। তামিল ভাষায় প্রাথমিক শিক্ষার পর উঁচু ক্লাসে ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে ভর্তি হন তিনি। প্রথম দিকে ইংরেজিতে পড়াশোনা করতে গিয়ে অসুবিধায় পড়তে হত শ্রীবিদ্যাকে। তবে সেই সব সমস্যা কাটিয়ে কোয়েম্বাটুরে গভর্মেন্ট কলেজ অফ টেকনোলজিতে কম্পিউটার সায়েন্স নিয়ে বি.টেক-এ ভর্তি হন। ইঞ্জিনিয়ার হয়েই টেক্সাস ইন্সট্রুমেন্ট্স নামে এক মার্কিন সংস্থায় চাকরি পান। সংস্থাটিতে উন্নত প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করতে হবে জেনে বেশ রোমাঞ্চিত ছিলেন শ্রীবিদ্যা। ‘মাইনের প্রথম চেক হাতে পেয়ে আমি বেশ গর্বিত অনুভব করেছিলাম। ১৯৯৬ সালে ৬০০০ টাকা বেতনটা মোটেও কম ছিল না’, সরল স্বীকারোক্তি এই উদ্যোগপতির।

ওই সংস্থায় ইলেকট্রনিক সামগ্রী তৈরিতে ব্যবহৃত বিভিন্ন সফটঅয়্যার বানাতেন। সে সময় এদেশে তেমন একটা সফটঅয়্যার সংস্থা ছিল না। মার্কিন সংস্থাটিতে কাজ করার অভিজ্ঞতা থেকে তিনি উপলব্ধি করেন, এ দেশের বাজারের জন্য একটি সফটঅয়্যার সংস্থা বানালে কেমন হয় ? যেমন ভাবা, তেমন কাজ। ১৯৯৮ সালে শ্রীবিদ্যা ও তাঁর দুই বন্ধু চাকরি ছেড়ে দিয়ে ইম্পাল্সসফট নামে নতুন এক সফটঅয়্যার সংস্থা গড়ে তোলেন।

সে সময় ব্লুটুথ একেবারে নতুন প্রযুক্তি। শ্রীবিদ্যাদের গড়া সংস্থা প্রথমে সেই নতুন প্রযুক্তি নিয়েই কাজকর্ম শুরু করে। নিজের হাতে গড়া সংস্থা বলে কথা, তাই মাত্র এক রাতেই ব্লুটুথ নিয়ে হাজার পাতার বই পড়ে ফেলেছিলেন তিনি। তবে শুধু তো আর উন্নত প্রযুক্তি নিয়ে মাথা ঘামালেই হতো না। একটা ব্যবসা গড়ে তোলা মানে আরও অনেক দায়িত্ব। সংস্থায় নতুন ইঞ্জিনিয়ার নিয়োগ, ব্যবসার পরিকাঠামোতে নজর দেওয়া, সংস্থার নানারকম রসদ সরবরাহ ও যোগান নিয়ে মাথা ঘামানো। ইম্পাল্সসফটের এই কর্মকাণ্ড কিন্তু বেশ উপভোগ করছিলেন শ্রীবিদ্যা। সংস্থার গ্রাহকদের তালিকাও ছিল চোখে পড়ার মতো। সিমেন্স, সনি এরিকসন, মোটোরোলা - এই সব বড় বড় কোম্পানিগুলি ছিল সদ্য গড়ে ওঠা ওই সংস্থার গ্রাহক। এমনকি শ্রীবিদ্যাদের প্রথম সংস্থা, টেক্সাস ইন্সট্রুমেন্ট্সও ছিল সেই তালিকায়। ২০০৬ সালে এসআইআরএফ নামে এক মার্কিন সংস্থা ইম্পাল্সসফটকে অধিগ্রহণ করে। ইম্পাল্সসফটের যাত্রা ওখানেই শেষ হল বটে, কিন্তু সংস্থার এই আটটা বছর শ্রীবিদ্যাকে ব্যবসার অনেক কিছু শিখিয়েছিল। কোন ফর্মুলায় আর পাঁচজন প্রতিযোগীকে টেক্কা দেওয়া যাবে, তা রপ্ত করে নিয়েছিলেন এই তরুণ উদ্যোগপতি। তিনি নিজেই সেকথা স্বীকার করেছেন।

পিছিয়ে পড়াটা তাঁর ধাতে ছিল না। তাই একবার ব্যবসায়িক সাফল্যের স্বাদ পাওযা শ্রীবিদ্যারা নতুন করে ব্যবসা শুরুর তোড়জোর শুরু করলেন। নতুন করে কোনও কিছু শুরু করতে হাত তাদের নিশপিশ করছিল। নয়া সংস্থার তৈরির আগে এবার তিনটি লক্ষ্য স্থির করে নিয়েছিলেন শ্রীবিদ্যারা।

  • ভারতের বাজার ধরা; 
  • প্রযুক্তিক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনা; 
  • ভারতের মাটিতে বসেই একশো কোটি ডলারের ব্যবসা স্থাপন করা। 

২০০৮ সালে তৈরি হওয়া সংস্থা অ্যামাগি এই তিনটি শর্তের ওপরেই দাঁড়িয়ে। এই সংস্থা মূলত বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেলকে সম্প্রচারে প্রযুক্তিগত সাহায্য করে। তার বাইরেও বিভিন্ন পণ্য প্রস্তুতকারক সংস্থাকে বিজ্ঞাপন সংক্রান্ত বিষয়েও প্রযুক্তিগত সাহায্য করে থাকে সংস্থাটি।

কেরিয়ার নিয়ে সফল। তবে ব্যবসায় মন দিতে গিয়ে সন্তানদের সঙ্গে বিশেষ সময় কাটানো হয় না। তাই এবিষেয় একটা আক্ষেপ রয়েছে শ্রীবিদ্যা শ্রীনিবাসনের। সমাজের আর পাঁচজন বিজনেস ওম্যানের মতো তাঁকেও বেশকিছু সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছে। ‘মহিলা বলেই হয়তো প্রথমে অনেকেই হালকা ভাবে নেন, অব্শ্য পরে উপলব্ধি করেন তাদের সেই ধারণা কতটা ভুল’, প্রায় কুড়ি বছর কর্পোরেট জগতের সঙ্গে ওঠাবসা করে উপলব্ধি শ্রীবিদ্যার। ব্যবসার জটিল সমস্যাগুলোর সমাধান করা উপভোগ করেন তিনি। এই সংস্থা তাঁর কাছে একটা টিমের মতো, তাই অ্যামাগির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে তিনি যতটা গর্বিত, সেই দলের সদস্য হওয়াটাও তাঁর কাছে ততটাই গর্বের।

শ্রীবিদ্যার সাফল্যের কাহিনি হয়তো তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রের অনেক তরুণীকেই উদ্বুদ্ধ করবে। তাঁদের প্রতি এই অগ্রজার পরামর্শ – "চাপের কাছে কখনও নতি স্বীকার করবে না।" অনেক মহিলাই পরিবার বা পেশাগত চাপ সামলাতে না পেরে কেরিয়ারে ইতি টানেন। কিন্তু শ্রীবিদ্যার মতে, ধৈর্য ও অধ্যবসায় দিয়ে এর মোকাবিলা করা সম্ভব।

যাঁরা ভীত, শঙ্কিত, আত্মবিশ্বাসের অভাবে ভুগছেন, সেই সকল মহিলা একবার নিজেকে প্রশ্ন করুন – ‘আপনি কী করছেন ? কেন করছেন ? এটাই কি আপনার ভালোলাগা ? আপনার কাজ যদি আপনাকে রোমাঞ্চিত করে, সেটা কাজ থাকে না, জীবন হয়ে ওঠে’, দু’দশকের কেরিয়ারে উপলব্ধি শ্রীবিদ্যার।