সামাজিক উদ্যোগকে হাত এগিয়ে দিল IIM-CIP

চল্লিশটি সামাজিক উদ্যোগকে ফান্ডিং করা হবে। ২০২০ র মধ্যে ১০০ টি স্টার্টআপকে দেওয়া হবে ইনকিউবেশন। পূর্বাঞ্চলের স্টার্টআপ ইকোসিস্টেমে সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় IIM-ক্যালকাটা ইনোভেশন পার্ক।

সামাজিক উদ্যোগকে হাত এগিয়ে দিল IIM-CIP

Friday October 21, 2016,

4 min Read

সোশ্যাল আন্ত্রেপ্রেনিওররা সতর্ক হোন। কারণ আপনাদের জন্যে সুখবর নিয়ে এসেছে কলকাতার স্টার্টআপ ইকোসিস্টেমের সব থেকে বিশ্বাসযোগ্য প্রতিষ্ঠান আইআইএম ক্যালকাটা ইনোভেশন পার্ক। সম্প্রতি তারা যুক্তরাষ্ট্রের বিদেশ দফতর DFID-র সঙ্গে হাত মিলিয়ে এবং কেন্দ্রীয় সরকারের টেকনোলজি ডেভেলপমেন্ট বোর্ডের সঙ্গে যুক্ত হয়ে একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে। নাম রাখা হয়েছে Invent, যার মারফত লাভদায়ক সামাজিক উদ্যোগকে সহযোগিতা করা হবে। সেই ধরণের ব্যবসাকেই গুরুত্ব দেওয়া হবে যেগুলির বৃহৎ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, দীর্ঘমেয়াদি কাজ করতে সক্ষম এবং পাশাপাশি পরবর্তী ফান্ডিং জোগাড় করতে পারবে। এই প্রকল্পের আওতায় এখনও পর্যন্ত স্থির করা হয়েছে ৪০ টি স্টার্টআপকে ২৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ফান্ডিং দেওয়া হবে। একটি সাংবাদিক সম্মেলনে একথা জানালেন আইআইএম ক্যালকাটা ইনোভেশন পার্কের চিফ একজিকিউটিভ অফিসার ডঃ ডক্টর শুভ্রাংশু সান্যাল। উপস্থিত ছিলেন কলকাতা আইআইএম এর ডিরেক্টর প্রফেসর শৈবাল চট্টোপাধ্যায়, ডিন প্রফেসর উত্তম সরকার, প্রফেসর অশোক ব্যানার্জি প্রমুখ। 

image


আইআইএম ক্যালকাটা ইনোভেশন পার্ক দীর্ঘদিন ধরেই স্টার্টআপ সংস্থাগুলিকে ইনকিউবেশন, মেন্টরিংয়ের সাপোর্ট দিয়ে আসছে। স্টার্টআপ সংস্থাগুলিকে এবার ফান্ডিং দেওয়ার ব্যবস্থাও করছে এই সংগঠন। সংগঠনই বলা ভালো কারণ আই আই এম ক্যালকাটা ইনোভেশন পার্ক কোনও লাভদায়ক সংস্থা নয়। এটির মৌলিক লক্ষ্য দেশের পূর্বাঞ্চলের স্টার্টআপ ইকোসিস্টেমকে আরও সমৃদ্ধ করে তোলা। ডক্টর সান্যালের নেতৃত্বে এবার আরও তৎপর হতে চাইছে এই সংগঠন।

২০২০ সালের মধ্যে ১০০টি স্টার্টআপকে ইনকিউবেট করার পরিকল্পনা নিয়েছেন ওঁরা। ক্যালকাটা ইনোভেশন পার্কের সিইও ডক্টর সান্যাল জানালেন, এই মুহূর্তে ১৪টি সংস্থাকে ইনকিউবেশনের সুযোগ করে দিয়েছে ইনোভেশন পার্ক। আরও ৮টি সংস্থাকে ইনকিউবেট করার প্রক্রিয়ায় রয়েছে। এদের মধ্যে ৬টি সংস্থা কলকাতার। 

এছাড়া সম্প্রতি ৬টি স্টার্টআপ সংস্থাকে ফান্ডিংও দেওয়া হয়েছে বলে জানালেন ডক্টর সান্যাল। যে ছয়টি সংস্থা ফান্ড পেয়েছে তারা হল মাগাসুল, অর্গানিক থালি, মাই প্রাইভেট টিউটর, এডওয়েল সলিউশন, অ্যাপ্পেটি এবং বোধি হেল্থ এডুকেশন।

Magasool

কৃষিক্ষেত্রে সামাজিক প্রভাব তৈরি করার কাজ করছে চেন্নাইয়ের সংস্থা মাগাসুল। তামিল ভাষায় মাগাসুল মানে চাষাবাদ এবং শস্য ফলানো। তামিলনাড়ুর প্রান্তিক চাষিদের কৃষিক্ষেত্রে বিভিন্ন সহায়তা করার জন্যে তৈরি হয়েছে এই সামাজিক উদ্যোগ। জয়রাম বেঙ্কটেষণ এবং অজয়কুমার তান্নিরকুলামের এই উদ্যোগ ক্যালকাটা ইনোভেশন পার্কের ফান্ড পেল।

Organic Thali

অর্গানিক থালি একটি ফুড স্টার্টআপ। হায়দরাবাদের সংস্থা। একশ শতাংশ অর্গানিক মশলা দিয়ে তৈরি খাবার পরিবেশন করে আসছে এই সংস্থা। খাবারের খাদ্যগুণ সম্পর্কে ক্রেতা অবগত থাকেন। রাসায়নিক-হীন খাবারগুলিতে প্রাকৃতিক ভাবেই ভিটামিন, মিনারেল এবং অ্যান্টি অক্সিডেন্ট প্রচুর পরিমাণে থাকে। ফলে হায়দরাবাদে ব্যস্ত একজিকিউটিভদের কাছে ইতিমধ্যেই জনপ্রিয়তা পেতে শুরু করেছে এই সংস্থা। সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা সতীশকুমার বুররা আই আই এম কলকাতার প্রাক্তনী।

My Private Tutor

কলকাতার সংস্থা মাই প্রাইভেট টিউটর, আপনাকে আপনার ছেলে মেয়ের জন্যে একজন প্রাইভেট টিউটর খুঁজে দেবে। একটা মাউস ক্লিকেই আপনি পেয়ে যাবেন আপনার মনের মত গৃহশিক্ষক। আপনি এখানে ইউজার হিসেবে নিজেকে নথিভুক্ত করতে পারেন। কিংবা প্রাইভেট টিউটর হতে চেয়ে। হাজার একটা বিষয়। হাজার একটা সলিউশন। ইতিমধ্যেই এই সাইটে নাম নথিভুক্ত করিয়েছেন প্রায় আড়াই লক্ষ প্রাইভেট টিউটর। ১১,৬৬৪ টি প্রতিষ্ঠান। ৫৯ হাজার ৩২টি কোর্স। তিন লক্ষ ৩৮ হাজার সাতশ তেরটি কাজের সুযোগ। আপনি যেখানেই থাকুন এই সাইটের মারফত আপনি পাবেন আপনার সমাধান।

Edwell Solutions

নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের শিশুরা অনেকসময়ই উন্নতমানের শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হয়। ভালো স্কুলে পড়ার সুযোগ পায় না। এবং তাদের স্কুলের যা পরিকাঠামো থাকে তাতে মানের দিক থেকেও সেগুলি পিছিয়ে থাকে। এই সমস্যার সমাধান করছে এডওয়েল সলিউশন। এই সংস্থা স্কুলগুলিকে তাদের তথ্যপ্রযুক্তির সাপোর্ট দিয়ে থাকে। ছাত্রদের ইভেলুয়েশন ট্র্যাক করা থেকে উন্নত শিক্ষার যাবতীয় ব্যবস্থা করে। ক্লাসরুমে পিসি দেওয়া হয়। পাশাপাশি স্কুলগুলিকে স্কুল ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমও দিয়ে থাকে। এবং এই পরিষেবার মধ্যে ছাত্রছাত্রীদের বাবামায়ের সঙ্গে স্কুলের যোগাযোগ তৈরির কাজটাও তথ্যপ্রযুক্তির মারফতই করে দেয় এডওয়েল সলিউশন। ২০১২-য় উত্তরাখণ্ড থেকে যাত্রা শুরু করা শুরু করা এই সংস্থা ইতিমধ্যেই সামাজিক উদ্যোগ হিসেবে বেশ কয়েকটি সম্মানও পেয়ে গিয়েছে।

Appeti

মুম্বাইয়ের অ্যাপ্পেটি একটি মিষ্টি স্টার্টআপ। মিষ্টি, কারণ দেশের যাবতীয় মিষ্টি কেনার ই-কমার্স সাইট। শুধু মহারাষ্ট্রের মিষ্টি নয়, চাইলে আপনি ঘরে বসেই অর্ডার দিতে পারেন দেশের যেকোনও প্রান্তের মিষ্টিই। ন্যায্য মূল্যে সেই সব হাড়ি হাড়ি মিষ্টি পৌঁছে যাবে আপনার দরজায়। এই সংস্থার কর্ণধার নীতেশ প্রজাপত নিজে আইআইএম কলকাতার ছাত্র। আইআইটি কানপুর থেকে পাশ করে আইআইএম কলকাতায় এসেছেন। পড়তে এসে কলকাতার মিষ্টির প্রেমে পড়ে যান। আর দেশের অন্য প্রান্তের মিষ্টিও মিস করতে থাকেন। এই অভাব বোধ থেকেই শুরু করেছেন Appeti নামে তাঁর স্টার্টআপ। গোটা দেশ জুড়ে ছড়িয়ে আছে তাঁদের ভেন্ডার। ফলে ঘরে বসে মিষ্টির কথা ভাবলেই Appeti-র কথা ভাবতে আপনি বাধ্য।

Bodhi Health Education

অভিনব গিরধর এবং শ্রুতিকা গিরধরের সংস্থা বোধি হেল্থ এডুকেশন। বিভিন্ন অসুখের নানান সমাধান নিয়ে হাজির বোধি। কখনও ঘরোয়া টোটকা। কখনও রীতিমত ডাক্তারি পরামর্শের অসাধারণ সাইট। ২০১২ সাল থেকে অনলাইনে ক্যাপাসিটি বিল্ডিং করে আসছে এই ওয়েবসাইট। বিভিন্ন ভাষায় রয়েছে কনটেন্ট। এই স্টার্টআপটিকে সফল করে তুলতে দক্ষ চিকিৎসকের এবং স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের একটি টিম রাতদিন কাজে করে চলেছে। সামাজিক উদ্যোগ হিসেবে এই সংস্থাও দারুণ ভাবে প্রভাব ফেলতে পেরেছে।