স্বপ্ন আর স্বপ্নপূরণের মধ্যে পার্থক্য, আকাশ পাতাল । বাস্তবে মনে হতেই পারে সহজে সম্ভব। অর্থ থাকলেই নতুন ব্যবসায় আয় হবে, সাফল্যের মুখ দেখবেন। এমনটা ভাবলে একটু ভুল করবেন । বিশেষ করে স্টার্ট আপ বিসনেজ যাঁরা শুরু করেছেন। অনেক চড়াই উতরাই পেরিয়ে সেই প্রজেক্টের শুরু হয়তো । তৈরি করে ফেলেছেন নতুন একটা প্রোডাক্ট, হাইটেক যুগে সেটা অ্যাপসও হতে পারে। চলতি বাজারে কি ভাবে আপনার নতুন প্রোডাক্টকে সাধারণ মানুষের সঙ্গে পরিচয় করাবেন ? আপনার হয়তো কোনও সেলসের অভিজ্ঞতাই নেই ।
তাহলে কি সেলসের নূন্যতম অভিজ্ঞতা না থাকলে নাকি স্টার্টআপ বিজনেসে আসা যায় না ?
এমন প্রশ্ন মনের কোনে উঁকি দিলে আপাতত দূরে সরিয়ে রাখুন .....
মনে রাখবেন, একটা ভালো প্রোডাক্ট তৈরি করা আর বিকিকিনির বাজারে সেটা পাতি বাংলায় বিক্রি করা কিন্তু এক জিনিস নয় । আপনি বুদ্ধি খাটিয়ে একটা দারুন জিনিস তৈরি করে ফেলেছেন, কিন্তু বাজারে আনতে সেটার জন্য এবার অন্য এক মগজাস্ত্রের প্রয়োজন। ফেলুদার মত অনুসন্ধিতসু কিংবা তদন্ত সুলভ নয় । এটা বাজারে বিক্রির মগজ। সেই ব্রহ্মাস্ত্র হল, মগজাস্ত্রের সঙ্গে কলমের দ্বৈত যোগ।
বেপরোয়া হলে চলবে না। তাহলে ব্যবসার অপমৃত্যু ঘটবে ....
যদি আপনি শুরুতেই লাভের মুখ দেখতে বেপরোয়া হযে ওঠেন, তাহলেই সমস্যা । ধীরে বন্ধু । আপনার কাস্টোমারদের যেমন আপনার প্রোডাক্টটি দরকার তেমনই ওই কাস্টোমারদের ধরে রাখাটাও কঠিন চ্যালেঞ্জ আপনার কাছে । এমনটা হতেই পারে, কেউ আপনার প্রোডাক্টটি দেখেও দেখলেন না । তুচ্ছ জ্ঞান করলেন । তাতে কি সব শেষ। কে বা বলতে পারে, এখান থেকেই শেষের শুরু । কাস্টোমার যেতেই পারেন, কিন্তু মোটিভেশন সেটা হারালে চলবে না । মোটিমেশনকে সঙ্গে নিয়েই এগিযে যেতে হবে আগামীর পথে।
নজর থাকবে দাম, ছাড় আর বিনা পারিশ্রমিকে কাজ ....
বিনা পারিশ্রমিকে কাজ, সেটাই যদি হয় আপনার স্ট্র্যাটেজি, তাহলে তাঁদেরই আপনার উপভোক্তা করে তুলুন । প্রশংসাপত্রই হবে আপনার সাফল্য, ওটা স্ট্র্যাটেজি নয়। আপনি প্রশংসা পাওয়ার জন্য ব্যবসায় রেভিনিউ পেতে চান ? দুটো একসঙ্গে পাবেন না ,আপনি প্রশংসা পাবেন, কিন্তু রেভিনিউ নয় ।কোনও প্রডাক্টে বিক্রি বাড়াতে আপনি বিশেষ ছাড় দিলেন । একটু ভাবুন । ধরুন শুরুতেই আশি শতাংশ ছাড় । হপ্তা শেষে বিক্রি তুঙ্গে, লক্ষ্মীর ভাঁড়ার পূর্ণ । কিন্তু ভেবে দেখেছেন কি, আপনি ছাড় দিয়েছেন বলেই কী এমনটা হল । ছাড়ের মধ্যে দিয়ে আপনার প্রোডাক্টের মূল্য বিচার হয় না । তাই দাম নির্ধারন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ।
আপনার প্রয়োজন অভিব্যক্তি আর তাতেই লুকিয়ে স্টার্টআপের স্ট্র্যাটেজি ....
আপনার প্রোডাক্টই সেরা , এই মানসিকতা নিয়ে নেমে পড়ুন । আর বিক্রির সময় সেটা পরতে পরতে অনুভব করান আপনার কাস্টোমারদের । আপনার শরীরিভাষা সেই অভিব্যক্তি যা প্রকাশ্যে আসবে । আপনি একটা ভাল প্রোডাক্ট তৈরি করে সেটা যদি সামান্য সাপের তেল বিক্রির মতো অ্যাটিটিউড দেখান তাহলে সহ জলে যাবে । সঠিক অভিব্যক্তিই আপনার স্ট্রার্টআপের স্ট্র্যাটেজি হযে উঠুক ।
বিক্রি, প্রচারের পাশাপাশি প্রোডাক্টের গুণমানে নজর দিন ....
বিক্রির সঙ্গে সঙ্গেই প্রোডাক্টের গুণমানে নজর থাকুক সদাসর্বদা । দেখা গেছে শুরুতেই স্টার্টআপরা ভেবে বসেন তাঁরা রকেট তৈরি করে ফেলেছেন এবার বৃহস্পতি ভ্রমণে নিযে যাবেন । তাহলেই হল আর কি ! আপনার কাস্টোমাররা আজই জুপিটারে যেতে চান না। তাঁরা আগে যাবেন চাঁদে, তারপর মঙ্গলে তার পর ভেবে দেখবেন বৃহস্পতির কথা । এটাই বাস্তব। এটা মাথায় রেখেই এগিযে চলুন ....
বিশেষজ্ঞের পরামর্শে উদ্বুদ্ধ হোন ....
স্টার্টআপ বিজনেসে সঠিক পথে আপনাকে চালনা করতে পারেন একজন বিশেষজ্ঞ। কারণ হয়তো আপনার একার পক্ষে এবিষয়ে সব সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না । আপনি দিশেহারা হয়ে পরছেন । তাই এই পেশায় অভিজ্ঞ মানুষের পরামর্শ নিন । তাঁর পরামর্শে উদ্বুদ্ধ হোন । একটা গল্প বলা যাক, সুজয় পাই, পাই গ্রুপ অফ হোটেলসের কো-ওনার। নব্বইয়ের দশকে একটা ছোট্ট রেস্তোঁরা ছিল । সুজয় আর সুজয়ের ভাই মিলে বিশেষজ্ঞর পরামর্শ মেনে আর সেই রেস্তোঁরাকেই করে তুলেছেন থ্রি স্টার, ফোর স্টার হোটেল। দুই রাজ্যে এখন তাদের নয় নয় করে নটা হোটেল রেস্তোঁরা ।
ক্ষণিকের সাফল্য ক্ষতিকর
অনেক কিছুর মধ্যেই ক্ষণিকের সাফল্য আপনার বিপদ ডেকে আনতে পারে । কারণ সেটা সাময়িক । আপনাকে দীর্ঘমেয়াদী সাফল্য পেতে হবে । তাই স্বল্পমেয়াদী সেই সাফল্যে বিচলিত হবে না । ধৈর্য ধরুন, আস্থা রাখুন। কথায় আছে না সবুরে মেওয়া ফলে ।
সাহসে ভর করে এগিয়ে চলুন ....
পর্যবেক্ষণ ও অভিজ্ঞতায ভর করে নয়। এবার বাস্তবের জমিতে সাহস করে এগিয়ে চলুন । মনে রাখা উচিত, টাকা আর সাহসের প্রত্যক্ষ কোনও যোগ নেই । আপনার শুরুতে টাকা নাও থাকতে পারে। না থাকতে পারে বিরাট ব্যাঙ্ক ব্যালেন্স । তাতে কি ! সাহসে ভর করে এগিয়ে চলুন, অর্থবল নয়, মগজাস্ত্রে মাত করবেন আপনিই । ধরা দেবে সাফল্য । হবে স্বপ্নপূরণ ।