সৃষ্টিসুখেই ফুটে উঠল সাংবাদিক পাপড়ির D-Lite

সৃষ্টিসুখেই ফুটে উঠল সাংবাদিক পাপড়ির D-Lite

Monday March 07, 2016,

3 min Read

পেশায় সাংবাদিক। এ মিডিয়া সেমিডিয়া, টিভি ইন্টারনেট, পত্রপত্রিকা, ঘুরে ফিরে কেটে গেছে তের বছর। এখনও খবরই তার পেশা। কিন্তু প্রথম ও একমাত্র প্রেম তাঁর নিজস্ব D-Lite। রাতের পর রাত জেগে তিলে তিলে গড়ে তুলেছেন তাঁর ব্র্যান্ড। মোম নিয়ে খেলতে খেলতেই পাপড়ি এখন এক সোশ্যাল অন্ত্রেপ্রেনিওর হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন।

image


মোমবাতির টুকরো গলিয়ে ছোটবেলায় অনেকেই হয়তো খেলেছেন। আমি তো খেলতামই। তবে এই খেলাটাকেই একটু সিরিয়াসলি নিতেন পাপড়ি। এই ছেলেমানুষি দেখে আদরের paps কে বন্ধুরা মজা করে বলতো এটা নাকি তার পূর্ব জন্মের অভ্যাস, যা তাকে এ জন্মেও তাড়া করছে। কেরিয়ার করতে গিয়ে অবশ্য সেই সখে ওপর বিস্মৃতির মোটা আস্তরণ পড়েছিল।

২০১১ সালে হঠাৎ করেই স্কুলজীবনের সখটাকে রিডিস্কভার করেন পাপড়ি। নতুন উদ্যমে শুরু হয় মোমবাতি নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট, তবে বাণিজ্যিকভাবে নয়। সখপূরণ যদিও হচ্ছিল, তবে ঘর ভরে উঠছিল মোমবাতিতে। এরপর এক বন্ধুর উৎসাহেই নিজের ক্রিয়েশন নিয়ে একটু “সিরিয়াস হওয়া” এবং বিক্রিবাটার কথা ভাবা। D-Lite এর পথ চলার সেই শুরু। ২০১৩ সালে বালিগঞ্জের উইভার্স স্টুডিও-তে নিজের হাতে গড়া মোবাতির প্রথম প্রদর্শনী করেন পাপড়ি। প্রথম প্রয়াস সফল না হলেও “ধ্যাৎ, অনেক হয়েছে” বলে তিনি মুষড়ে পড়েননি। মোমবাতির নকশা নিয়ে পার্মুটেশন-কম্বিনেশন চালিয়ে গেছেন। এই হাল না ছাড়া মনোভাবকে আঁকড়েই আত্মীয়-স্বজন, সহকর্মী, পরিচিতদের গণ্ডি পেরিয়ে ভিড়ের মধ্যে অনন্যা হয়ে উঠেছেন পাপড়ি। নিজের ব্র্যান্ডকে মেলে ধরতে পেরেছেন এমন ভাবে যে এখন অনেকেই জানেন D-Lite এর কথা। একাধিক সফল প্রদর্শনী করেছেন। চলতি বছর পাপড়ি ও তাঁর D-Lite পৌঁছে গিয়েছিল শান্তিনিকেতনের পৌষ মেলায়। ২০১৬-র পৌষ মেলা তাঁকে বাহবা ও আত্মবিশ্বাস দুইই জুগিয়েছে। এখন শুধু মোমবাতিই নয় পাটের সামগ্রী, সুগন্ধি, বটল আর্টও যুক্ত হয়েছে D-Lite এর পসরায়। পুরোটাই তিনি করেন একা হাতে। 

কিন্তু সাংবাদিকতার ব্যস্ত শিডিউলের মাঝে কীভাবে D-Lite কে প্রতিপালন করেন পাপড়ি! বলছিলেন বাড়ির লোকজন খুব সাপোর্ট করেন। বিয়েরা আগে মা এখন স্বামী শ্বশুর বাড়ির লোকেরা সবাই। তাই “অফিস থেকে ফিরে প্রতিদিন প্রায় রাত ২টো-৩টে পর্যন্ত আমার সৃষ্টির দুনিয়া নিয়ে মেতে থাকতে পারি। কেউ নাকগলায় না। আপত্তি করে না। আমি এবং আমার সৃষ্টি বাড়ির একটি অব্যবহৃত রান্নাঘরে একা একাই বানিয়ে চলি একের পর এক সুরভী মোমবাতি। ওই ছোট্ট ঘরে আমার মেকশিফ্ট ওয়ার্কশপ, আমার নিজস্ব পৃথিবী।”

D-Lite এর সম্ভার এখন অনলাইনেও পাওয়া যাচ্ছে। ক্লাস ও মাসের কথা মাথায় রেখেই D-Lite এর পসরার মূল্যও ৫টাকা থেকে ৫০০ টাকার মধ্যে। কিন্তু ক্ষুদ্র ব্যবসায়িক স্বার্থ ছেড়ে D-Lite নিয়ে আরও বড় স্বপ্ন দেখেন এই সাংবাদিক কাম হস্তশিল্পী মহিলা অন্ত্রেপ্রেনিওর। হাতের কাজ শিখিয়েছেন বাড়ির কাজের মেয়েটিকেও, দুস্থ মানুষদের জন্য কর্মশালার আয়োজন করতে ছুটছেন প্রত্যন্ত গ্রামে। এভাবেই পাপড়ি চ্যাটার্জি হয়ে উঠতে চান সামাজিক উদ্যোগপতি। যেখানে তাঁর হাত ধরে আরও ৫০টা পরিবার রুটি রোজগারের রাস্তা খুঁজে পাবে। তাদের জীবনেও আসবে D-Lite এর আলো।

D-Lite এমন নাম কেন? প্রশ্ন করেছিলাম আত্মবিশ্বাসে টগবগ করে ফুটতে থাকা পাপড়ি বললেন, 

"প্রথমত The Light এর মত শোনাচ্ছে বলে। কারণ আমার উদ্যোগটা আলো সংক্রান্ত। আমি চাই, নিজে হাতে আলো তৈরি করে লোকের ঘরে ছড়িয়ে পড়তে। আর দুই এটা Delight- এর মতও শোনাচ্ছে। যার অর্থ আনন্দ। নিজে আনন্দে থাকতে চাই অপরের জীবনেও আনন্দই দিতে চাই। তাই সুগন্ধও বানাই। ফুল থেকে একশ শতাংশ অর্গানিক সৌরভ। এভাবেই D-Lite শব্দে এক ঢিলে দুই স্বপ্ন মারতে চেয়েছি।"