২০১৬ সাল ফুরিয়ে গেল। এই বছরে আমরা যা কিছু করতে চেয়েছি, সব করে উঠতে পারিনি। বহুবিধ ক্ষেত্রই ছিল আমাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে। আমরা মানসিক, শারীরিকভাবে বেদনার অভিজ্ঞতা লাভ করেছি। আমাদের ভাবাবেগও কখনও কখনও আক্রান্ত হয়েছে। জীবন এমনই।
আমরা এমন কয়েকজন বিশিষ্ট মহিলার কথা বলব, যাঁরা আমাদের জানাচ্ছেন এ ধরনের প্রতিবন্ধকতা থাকা সত্ত্বেও বেঁচে থাকা বা অস্তিত্বরক্ষার তাগিদে তাঁদের কী ধরনের লড়াই করতে হয়েছে। কোন কোন চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করতে হয়েছে। অবশেষে এসেছে জয়।
মুম্বইয়ের মেয়ে নাতাশা কোঠারি একজন বিশিষ্ট সমাজসেবী। নাতাশা বললেন, ঠাকুমার মৃত্যুর পরে আমি একসময়ে পর্যুদস্ত হয়ে পড়েছিলাম। ভয় পেয়েছি। নিজেকে সেইসময়ে অসহায় মনে হয়েছে। আমার এই অবস্থায় ভেঙে পড়েছিলেন আমার বাবা-মাও। কিন্ত আমি ঠিক করেছিলাম যে ঘুরে দাঁড়াব, তা সে যেভাবেই হোক না কেন। এভাবে চেষ্টা চালাতে চালাতে আমি পেরে গেলাম।
নাতাশারই মতো বিধু গোয়েলকেও হতাশার সঙ্গে যুদ্ধ করতে হয়েছে। সেই কালো দিনের অভিজ্ঞতা প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে হরিয়ানার মেয়ে বিধু বলেছেন, সেইসময় আমি লোকজনের সঙ্গে কখাবার্তা বলাও বন্ধ করে দিয়েছিলাম। তারপর একদিন আমি সিদ্ধান্ত নিলাম হতাশার পাঁক থেকে নিজেকে নিজেই উদ্ধার করব। বিধু এখন একজন বিশিষ্ট মহিলা উদ্যোগী। হ্যাঁ, বিধুও পেয়েছেন তাঁর অন্তরে আলোর সন্ধান। একজন মেয়ে হিসাবে নিজেকে নিজেই তৈরি করেছেন নাগপুরের হর্ষিণী কানহেকরও। তিনিই ভারতের প্রথম মহিলা ফায়ার ফাইটার।
অন্যদিকে যক্ষ্মায় আক্রান্ত হয়ে মাসের পর মাস রোগশয্যায় কাটিয়েছেন বিশিষ্ট নর্তকী মুম্বইয়ের নন্দিতা ভেঙ্কটেশন। নন্দিতা বললেন, আমি তখনও বেঁচে থাকতে চেয়েছি। মনের জোর আর বেঁচে থাকার ইচ্ছাটাই নন্দিতাকে ফের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়েছে। ফের অনুষ্ঠান করছেন এই বিশিষ্ট নর্তকী।
অন্যদিকে, কেরালার প্রেমী ম্যাথিউকেও তাঁর নিজের জীবনের অভিজ্ঞতা মানুষের পাশে থাকতে সহায়তা করেছে। প্রেমী এখন প্রোটেক্ট ইওর মম নামে একটি সংগঠন চালান – যাঁরা স্তন ক্যান্সার নিয়ে কাজ করছেন। এছাড়াও প্রেমী গড়েছেন হেয়ার ফর হোপ ইন্ডিয়া নামে আর একটি সংস্থা। কেমোথেরাপির ফলে ক্যান্সার আক্রান্ত যে সমস্ত রোগিণীর মাথায় টাক পড়ে যাচ্ছে, তাঁদেরকে পরচুলা সরবরাহ করে থাকে এই সংগঠনটি। গত ২০ বছর ধরে মধু দুবাইয়ে বসবাস করছেন।
৫৩ বছরের ঝাড়খণ্ডের মধু জৈন নিজের জীবনে ক্যান্সারের অভিজ্ঞতা থেকে ক্যান্সারের রোগীদের পাশে দাঁড়িয়েছেন মধুও। স্তনের ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছিলেন তিনি। দীর্ঘ সাত বছর রোগযন্ত্রণার পরে মধু রিদম নামে একটি প্লে স্কুল চালু করেন। নয়ডায় মধুর সফলভাবে চালাচ্ছেন সেই স্কুলটি।
অন্যদিকে আহমেদাবাদের বাসিন্দা সেরিব্রাল পালসির শিকার রাজভি গোসালিয়াও জীবনে সাফল্য লাভ করেছেন প্রতিবন্ধকতার সঙ্গে লড়াই করেই। রাজভি বর্তমানে একটি মাঝারি মাপের স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা চালাচ্ছেন। রাজভি বলেছেন, প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও আমি আমার জীবনকে উপভোগ করতে চেয়েছি। প্রতিবন্ধতার দরুণ হতাশ হতেই পারতাম। কিন্তু জীবনকে ভালোবাসি বলেই কাজ করছি। দিল্লির মেয়ে প্যারা-অ্যাথলিট সুবর্ণা রাজও একজন প্রতিবন্ধী। দুবছর বয়সে পোলিও-র জেরে পঙ্গু হয়ে গিয়েছিলেন সুবর্ণা। এ সত্ত্বেও ওঁকে দমানো যায়নি। একজন আন্তর্জাতিক মানের প্যারা-অ্যাথলিট ছাড়াও সুবর্ণা এখন একজন বিশিষ্ট সমাজসেবীও।