দু’হাতে সুদীপা রাঁধেন, চুল বাঁধেন আবার ব্যবসাও সামলান
Thursday December 10, 2015,
3 min Read
দশভূজা বললে একটু ভুল হবে। সংসার থেকে টিভি অ্যাঙ্কারিং, কনে সাজানো, নিজের ব্র্যান্ডে কেক-চকোলেটেলের ব্যবসা এবং বাড়িতে ট্রেনিং স্কুল-সব সামলাচ্ছেন দু হাতে। সুদীপা গুহ। জি বাংলার রবিবারের রান্নাঘরের দৌলতে সুদীপা এখন বাংলার দর্শকের কাছে পরিচিত মুখ। সেই কবে ছোট্টবেলা থেকে সাজানোর শখ। যত দিন গিয়েছে, কনে সাজানোয় হাত পেকেছে। আর শখ রান্নার। বড় হয়ে কনে সাজানো এবং রান্নাবান্নাই হয়ে দাঁড়াল সুদীপা গুহর পেশা, নেশা এবং ব্যবসা।
টেলিভিশনে চেনা মুখ সুদীপা। ২০০২ থেকে ২০০৪ পর্যন্ত টানা ২ বছর দূরদর্শনে আজকের রান্না অনুষ্ঠানের সঞ্চালক ছিলেন। তারপর প্রায় সাড়ে তিন বছর এটিএন ওয়ার্ল্ডে বাঙালি আহার নামে আরও একটি অনুষ্ঠান করেন। রান্নার অনুষ্ঠানের পাশাপাশি গ্রুমিংয়ের প্রশিক্ষণ দিতেন। আর চলত সাজানোর কাজও। ‘পারিবারিক সূত্রে শিল্পী মমতা শঙ্করের সঙ্গে পরিচয় ছিল। কাছ থেকে দেখতাম কীভাবে সাজিয়ে দিতেন সবাইকে। আর অদ্ভুত কেমন যেন পালটে যেত মুখটাই। তখনই ভেবে নিই, যদি কাউকে সাজাতেই হয়, তবে মমতা শঙ্করের মতো করে সাজাবো’, বলেন সুদীপা। ২০০৩ সাল নাগাদ একেবারে পেশাদার হিসেবে কনে সাজানো শুরু করেন। তবে কখনই পার্লার খোলার কথা ভাবেননি। রঙের সংস্থা ক্যামেল থেকে অল ইন্ডিয়া ক্রিয়েটিভ হান্টে সারা ভারতে চতুর্থ এবং কলাকাতাতে দ্বিতীয় হন। পুরস্কার হিসেবে গুগুলে নাম আসে সুদীপা গুহর। ২০০৭ সালে মিডিয়া ছেড়ে পুরোপুরি মেকআপের জগতে চলে আসেন। মেকআপ বলতে শুধু কনে সাজানো। এই পর্যন্ত ১৩৮৫ কনে সাজিয়েছেন তিনি। বছর শেষে সংখ্যাটা ১৪০০ ছোঁবে বলেই ধারণা সুদীপার। কাজ করেছেন সানন্দা তিলোত্তমায়। সঙ্গে ২০০৭ থেকে ২০১৪ পর্যন্ত বর্তমানের নিয়মিত ফুড কলামিস্ট ছিলেন।
ওই সময় ২০০৯ সাল নাগাদ একটা ঘটনা সুদীপার জীবনটাই একেবারে অন্য খাতে বইয়ে দেয়। স্ট্রোক হয়ে বাঁ দিকটা পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে যায়। স্বামী অরুণাভ গুহ কেন্দ্রীয় সরকারের চাকরি ছেড়ে দিল্লি থেকে পাকাপাকিভাবে কলকাতায় চলে আসেন। একদিকে সুদীপার চিকিৎসা, অন্যদিকে সংসার সচল রাখার উপায় খোঁজা-দুইই চলতে থাকে একসঙ্গে।
এখান থেকে শুরু হল সুদীপার কেক এবং চকোলেট ব্র্যান্ড choc-addictz এর পথ চলা। অরুণাভ গুহ ভিআরএসের টাকার প্রায় পুরোটাই স্ত্রীর চকোলেটের ব্যবসায় লাগিয়ে দিলেন। আর সুদীপার হাতের যাদুতে সেন্টার ফিলিং চকোলেট, প্রিন্ট চকোলেট, হেভেন নাট ফিলিং, চিলি ফিলিং, ডার্ক চকোলেট এমন হরেক স্বাদের নানা ধরনের চকোলেট মন ভরাতে লাগলো চকোলেটপ্রেমীদের। প্রথমদিকে স্ত্রীর ব্যবসার মার্কেটিং, দোকানে দোকানে গিয়ে choc-addictz এর প্রোডাক্ট পৌঁছে দেওয়া থেকে তার প্রচার প্রায় সবটাই করতেন অরুণাভবাবু। একটু থিতু হতেই অবশ্য সুদীপা দুই প্রাক্তন ছাত্রীর ওপর মার্কেটিংয়ের দায়িত্ব ছেড়ে দেন। আর কেক তৈরিটা একরকম হঠাৎই। একটি অনলাইন স্টোরের পছন্দ হয়ে যায় সুদীপার তৈরি কেক। ব্যাস, আর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি। নানা ডিপার্টমেন্টাল স্টোরে choc-addicz এর নানা ধরনের কেক পাওয়া যায়। ক্রিম কেক, সেলিব্রেশন কেক, কাস্টমাইজড কেক অর্থাৎ ক্রেতা যেমন চাইবেন ঠিক সেই ধরনের কেক বানিয়ে দেন তিনি। সামনে আসছে ক্রিস্টমাস। তার জন্য ইতিমধ্যে ব্যস্ততা তুঙ্গে সুদীপার বাড়িতে। হেমমেড সুস্বাদু ফ্রুটকেক, প্লামকেকের সার জমা হচ্ছে। আর ব্ল্যাক ফরেস্ট, জেল কেক, স্ট্রবেরি কেক এইসব তো রয়েইছে। বড়দিনকে সামনে রেখে চকোলেটেও চমক দিতে তৈরি হচ্ছে সুদীপার choc-addicz।
চক অ্যাডিকস পেজ, সুদীপাস ব্রাইডাল মেকআপ পেজ নামে ওয়েবসাইটে দুটি পেজ আছে। সেখানেই যতটুকু প্রচার। তার চেয়ে অবশ্য অনেক বেশি পরিচিতি সুদীপার কাজে। শুধু নিজেই কাজ করেন না, শেখান অন্যদেরও। গাঙ্গুলিবাগানের বাড়িতে বেশকিছু ছাত্রছাত্রীকে কনে সাজানো, কেক এবং চকোলেট বানানো শেখান। সংসার থেকে ব্যবসা-একা হাতে সব সামলান সুদীপা। ক্লান্ত হন না, বরং পেছন ফিরে তাকালে গর্ববোধ করেন। কারণ অতীতটাই যে তাঁকে এগিয়ে চলার রসদ যোগায়।