পরিশ্রম করেন কলকাতার বৌমা, দেবাঙ্গী পারেখ

পরিশ্রম করেন কলকাতার বৌমা, দেবাঙ্গী পারেখ

Monday December 04, 2017,

3 min Read

সোনার চামচ মুখে দিয়ে যারা জন্মান, তাদের নাকি পরিশ্রম করতে হয় না। এমনই ধারণা সাধারণ মানুষের মনে সব সময়ই ঘুরপাক খায়। শ্রেণি বৈষম্যের মহান তত্ত্বে যারা বিশ্বাস রাখেন তাঁরা মনে করেন ধনী মানে আলালের ঘরের দুলাল। পরশ্রমভোগী। কিন্তু ধারণাটা যে সব ক্ষেত্রে ঠিক নয় তার প্রমাণ দেবাঙ্গী নিশার পারেখ। মুম্বাইয়ের প্রখ্যাত ফ্যাশন স্টোর আজার মালকিন ডক্টর অলকা নিশারের মেয়ে দেবাঙ্গী। বাবা অ্যাপটেক কম্পিউটারের কর্ণধার অতুল নিশার। প্রখ্যাত শিল্পপতি। বিয়ে হয়েছে কলকাতার ধনকুবের উৎসব পারেখের ছেলে সহর্ষের সঙ্গে। উৎসব পারেখ এই নামটার সঙ্গে যাদের পরিচয় নেই তাদের মনে করিয়ে দিই অ্যথলেটিকো ডি কলকাতার অন্যতম কর্ণধার উৎসব পারেখ। সৌরভ গাঙ্গুলির এই ফুটবল টিমের মালিক হর্ষবর্ধন নেওটিয়া, সঞ্জীব গোয়েঙ্কার মতই উৎসব পারেখ অন্যতম একজন প্রধান পুরুষ। উৎসবের আরেক ছেলে সমর্থে বিয়ে হয়েছে প্রফুল্ল প্যাটেলের মেয়ের সঙ্গে। এ হেন পরিবারের মেয়ে বৌমার কী পরিশ্রম সাজে!

image


কিন্তু দেবাঙ্গী এসব যুক্তি মানতে নারাজ। বলছিলেন, ও ওর জীবন থেকে যে পাঠ পেয়েছেন তা ওকে পরিশ্রমী হতেই শিখিয়েছে। ওর বাবাকে দেখে শিখেছেন, যা করতে ভালো লাগে তার জন্যে মন প্রাণ ঢেলে দিতে হয়। দেবাঙ্গী বিশ্বাস করেন, সব কিছু শিখতে হয়। জানা জিনিসও মাজা ঘসা করতে হয়। তবেই পারফেকশনে পৌঁছনো সম্ভব।

দেবাঙ্গীর বাবা অতুল ওঁকে শিখিয়েছেন শুরুর দিনের ক্লান্তিকর পরিশ্রম না করলে পরে আরাম করার ফুরসত পাওয়া যায় না। দিনের শুরুতে যোগা করা শরীর চর্চা করার মতোই এই পরিশ্রম অবশ্য-কর্তব্য। অল্প বয়স থেকেই মেয়েও উঠে পরে লেগেছেন সাফল্যের ট্র্যাকে দৌড়তে। মার কাছে থেকেই বেশি শিখেছেন দেবাঙ্গী। চাকরিও করেছেন নিজেকে তৈরি করার জন্যে।

শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে নয় নিজের জীবন থেকে শিক্ষা নিতে বেশি ভালোবাসেন দেবাঙ্গী। তবু Cornell University থেকে অন্ত্রেপ্রেনিওরশিপ নিয়ে ব্যাচেলর হয়েছেন। নিউইয়র্কে Deloitte Consulting এ অ্যানালিস্টের কাজ করেছেন কিছুদিন। কিন্তু আগ্রহ ছিল ফ্যাশন ডিজাইনিংকে ঘিরেই। অফিসের বাইরে ডিপার্টমেন্টাল স্টোরগুলি খুব টানত। ঘণ্টার পর ঘণ্টা ডিজাইনার কালেকশন নিয়ে পড়াশোনা এবং তাদের ব্যাখ্যা, দোকানে দোকানে যেসব রেকে পোশাক ঝুলত তার একটাও না কিনে শুধু দেখে যেতেন। উইন্ডো শপিং নয়, রীতিমত রিসার্চ করতেন দেবাঙ্গী।

ঠিক করলেন দেশে ফিরে মায়ের গড়া ফ্যাশন জগতে দুবছর কাটিয়ে খুঁটিনাটি বুঝে নেবেন। ২০০৫ সালে মা অলকা নিশার দেশের অন্যতম মাল্টি ডিজাইনার স্টোর চেন ‘আজা’ লঞ্চ করেন। এখানেই হাতে কলমে রিটেল ইন্ডাস্ট্রি কীভাবে চলে বোঝার অবকাশ পান। প্রতিদিনের নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ থেকে নতুন কিছু শেখা দেবাঙ্গীকে সমৃদ্ধ করে। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নিতে Wharton থেকে এমবিএ কোর্স করেন। দেশে ফিরেই ২০১৫ সালে azafashions.com লঞ্চ করেন। টেকনোলজি ওর পছন্দের বিষয়। Aza- র গ্লোবাল ই কমার্স পোর্টাল তৈরি করে ভারতীয় ফ্যাশনকে আরও বড় বাজার পাইয়ে দেন দেবাঙ্গী। এই পোর্টালে মূলত ভারতীয় ডিজাইনারদের পোশাকের জন্য। আপাতত দেড়শ ডিজাইনারের পোশাক পাওয়া যাচ্ছে।

জোড় দিয়েছেন ডিজিটাল স্ট্র্যাটেজি তৈরির ওপর, সোশ্যাল মিডিয়াকে কাজে লাগিয়ে Aza-কে বিশ্বের দরবারে পৌঁছে দিতে চেয়েছেন সংস্থার ক্রিয়েটিভ ডিরেক্টর দেবাঙ্গী পারেখ। মূলত আমেরিকা, ব্রিটেন, কানাডা, সিঙ্গাপুর, অস্ট্রেলিয়া এবং মধ্য প্রাচ্যর বাজার ধরতে দেবাঙ্গীর এই উদ্যোগ কয়েক মাসের মধ্যেই সাফল্যের মুখ দেখে। AZA Fashions-এ গৌরব গুপ্তা, রোহিত বাল, বরুণ বাল, মণীশ আরোরা, পায়েল সিঙ্ঘাল থেকে নীতা লুলার মতো নামী ফ্যাশন ডিজাইনারদের পোশাক এবং অক্সেসরিজ পাবেন আপনি। নামজাদা ফ্যাশন ডিজাইনারের পোশাক কিনে ফেলতে শুধুমাত্র একটা ক্লিকই এখন যথেষ্ট। AZA স্টোরের জন্য ও আলাদা বিজনেস স্ট্র্যাটেজি তৈরি করেছেন এই তরুণ মহিলা উদ্যোপতি। শুধু ডিজাইনার পোশাক নয় দক্ষ ফ্যাশন কনসালটেন্টদের পরামর্শও পেয়ে যাবেন ক্রেতারা। ফলে দেবাঙ্গীর এখন আরাম করার ফুরসত নেই। ব্যস্ততায় আনন্দ খুঁজে পাচ্ছেন কলকাতার বৌমা।