'আউটবক্স' এখন কলকাতায় ইন

'আউটবক্স' এখন কলকাতায় ইন

Thursday September 24, 2015,

3 min Read

কলকাতার মাথায় আইডিয়া গিজগিজ করে। কিন্তু রাজ্যে তাদের ধরে রাখা মুশকিল। বেশিরভাগই শহর ছাড়ে পড়াশোনায় ভালো সুযোগের সন্ধানে। কেউ বা ভালো চাকরি পেতে অন্য শহরে পাড়ি দেন। আরেকদল যান স্টার্টআপ খুলতে। তবু কেউ কেউ কলকাতার মাটি কামড়ে পড়ে থাকেন। পরিবর্তনের স্বপ্ন দেখেন। পরিবর্তনের উদ্যোগ নেন। এমনই শুরুয়াতি উদ্যোগপতি সুকৃতি আগরওয়াল এবং কুশল মোদি।

image


সুকৃতি আর কুশল কলকাতার অপবাদকে সম্পদে পরিনত করতে পেরেছেন। তাঁরা বললেন, ‘অনেক উদ্যোক্তাকে দেখছি অভিযোগ করছেন সরকারি নীতির কারণে কলকাতার শুরুয়াতিগুলো পক্ষাঘাতগ্রস্ত। আমাদের ক্ষেত্রে কিন্তু তেমন হয়নি। বরং মনে হয়েছে একমাত্র কলকাতাতেই ‘আউটবক্স’ সম্ভব ছিল। এই শহরের সংষ্কৃতি, মানুষের রুচি-পছন্দ-চাহিদার নাড়ি নক্ষত্র আমরা জানি। তাই অন্য কোথাও এই স্টার্টআপ সম্ভব ছিল না’।

সেভাবে ভেবে চিন্তে উদ্যোগপতি হননি জেভিয়ার্সের এই দুই প্রাক্তনী। ওরা ছিলেন একেবারে পাশের বাড়ির ছেলেটি-মেয়টির মতো। যারা নিয়মিত ক্লাসে যেতেন, বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিতেন, মজা করে, ঘুরে বেড়িয়ে জীবনের মানে খোঁজার চেষ্টা করতেন। তবে অন্য রকম কিছু একটা করবেন সেই প্ল্যান সবসময় ছিল।

সুকৃতি আগরওয়াল

সুকৃতি আগরওয়াল


কলকাতার দুই তরুণ উদ্যোক্তার স্টার্টআপ ‘আউটবক্স’ হল ডেলিভারি সার্ভিস, অর্থাৎ উপহার থেকে বিয়ের কার্ড, আপনার হয়ে আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধবের কাছে পৌঁছে দেবে ‘আউটবক্স’। ‘গিফ্ট বক্স, কেক সবকিছু ঠিকানা ধরে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করে ওঁরা’।

সবেমাত্র কলেজ থেকে বেরিয়ে দুই উদ্যোক্তা বুঝে গিয়েছিলেন শুরুয়াতির পদে পদে কত ফাঁদ পাতা থাকে। এমনকি কোনও কোনও ধাক্কা তো সামলে ওঠার জন্য নুন্যতম স্বান্তনাটুকুও পাওয়া যায় না। ‘যখন কলেজে পড়ি তখনই সাত পাঁচ না ভেবে জাস্ট বেরিয়ে পড়েছিলাম অজানার পথে। কিছু কিছু ভুল সিদ্ধান্তের জন্য খুব ভুগেছি। বুঝতে পেরেছিলাম ভুল থেকে শিক্ষা নেওয়ার সময়টুকুও পাওয়া যাবে না।'

কুশল মোদি

কুশল মোদি


‘আউটবক্স’এর আইডিয়া এসেছিল নিজেদেরই এক ভোগান্তির ফলে। গল্পে গল্পে সুকৃতি বলেন, ‘জেভিয়ার্স কলেজের (কলকাতা) বিখ্যাত গ্রিন বেঞ্চে বসেছিলাম একদিন। দাদার বিয়ের উপলক্ষে ৪০০ আত্মীয়ের কাছে উপহার পাঠাতে গিয়ে কী নাকানি চোবানি খেতে হয়েছে বলছিল কুশল। আর সেটাই ছিল আমাদের ইউরেকা মোমেন্ট। খুঁজে পাই নতুন দিশা। এটাই একমাত্র বাজার যেখানে কেউ এখনও পা রাখেনি। পাই পয়সা হিসেব রেখে খরচ করার দিন চলে গিয়েছে। মানুষ পারলে যেন রোজকার টুকিটাকি কাজও আউটসোর্স করিয়ে নেয়’। একটা জিনিস পৌঁছে দেওয়াকে স্মরণীয় করে তোলাটাও যথেষ্ট সৃজনশীল ব্যাপার। ‘আমরা সব ধরনের পার্সনালাইজড ডেলভারি (কারও হয়ে কিছু পৌঁছে দেওয়া) করি। আপনি যদি চান আপনার উপহার অথবা নিমন্ত্রণ পত্র পৌঁছে দেওয়া হোক, আমাদের প্রশিক্ষিত কর্মীরা ঘরে ঘরে গিয়ে সেটাই করে আসবে। একটা বাজেট দিয়ে দিলে গ্রাহকের হয়ে গিফট কিনে পৌঁছেও দিই আমরা। এই বছর থিম-বেসড ডেলিভারিও করেছি। যেমন, ক্রিসমাসে আমাদের কর্মীরা সান্তাক্লজের পোশাক পরে সারা শহরে শিশুদের গিফট পৌঁছে দিয়েছে। শুধু বলে দিন কোথায় কী পৌঁছতে হবে। নিশ্চিন্তে থাকুন, অনুভুতি প্রবণ আর সৃজনশীল ভঙ্গিমায় আপনার কাজ হয়ে যাবে’।

এখন সুকৃতি-কুশলদের নতুন জগৎ। নতুন ইন্ডাস্ট্রিতে জায়গা করে নেওয়ার লড়াই। ব্যবসা বাড়ানোর চেষ্টায় মগ্ন দুই উদ্যোক্তা। তবে পা ফেলছেন সাবধানে। প্রথমে টিয়ার ওয়ান সিটিই লক্ষ্য। বিভিন্ন ফ্র্যাঞ্চাইজির সঙ্গেও কথা বলছেন, যারা সত্যিই ‘আউটবক্স’ কে জাতীয় স্তরে নিয়ে যেতে চান। আশাবাদী সুকৃতি বলছেন, ‘বড় কর্পোরেট হাউস থেকে ছোট মিষ্টির দোকান সবাই আমাদের গ্রাহক। খুব শিগগিরই ভারত জুড়ে আমাদের দেখতে পাবেন আপনারা’।

দুই কলেজ পড়ুয়া উদ্যোক্তার জন্য প্রথম ফান্ডিং করেছেন তাঁদের বাবা-মায়েরা। ‘‘আউটবক্স’ এর জন্য তাঁরা আমাদের টাকাটা লোন হিসেবে দেননি, বরং ব্যাবসায় পুঁজির মতই খাটিয়েছে। অনেক ভেঞ্চার ক্যাপিটালিস্ট আমাদের প্রজেক্টে বিনিয়োগের আগ্রহ দেখিয়েছেন’।

কী বলবেন নতুনদের যারা তাঁদের মতোই স্বপ্ন দেখেন? দুই উদ্যোক্তা বলেন, ‘যতই অদ্ভুত আইডিয়া হোক না কেন, বাস্তবে রূপ দেওয়ার চেষ্টা করতেই হবে। যা করতে চাইছ তার আটঘাট জেনে নাও। হেরে যাওয়ার ভয়ে পিছিয়ে এসো না’।