চোরাশিকারিদের সমূলে উচ্ছেদ করে প্রকৃতির সংরক্ষণে এগিয়ে আরণ্যক

চোরাশিকারিদের সমূলে উচ্ছেদ করে প্রকৃতির সংরক্ষণে এগিয়ে আরণ্যক

Saturday December 19, 2015,

4 min Read

ভালবাসাকে সঙ্গী করে দেশ কিংবা ঘর ছেড়েছেন এমন মানুষের সংখ্যা নেহাত কম নয়। ভালবাসার জন্য তাঁরা ও ঘর ছেড়ে বনের আঁধারে থেকেছে। তবে তাদের ভালোবাসা মানুষের জন্য নয়। প্রকৃতিকে ভালবেসে ঘর ছাড়া হয়েছে তারা। তারা আরণ্যক।নামের মতোই অরণ্যকে ভালোবেসেছে তারা। অনুভব করেছেন মানুষের ক্রমাগত চাহিদায় ধংস হয়ে যেতে বসেছে প্রকৃতি ও তার সম্পদ। তাই এগিয়ে এসেছিলেন তারাই। শুরুটা ১৯৮৯ সালে। একদল যুবক প্রকৃতিকে বাঁচাতে তৈরী করেছিলেন একটি ক্লাব। আর সেই ক্লাবেরই নামকরণ করা হয় আরণ্যক। গঠণ হওয়ার পরেই কাজ শুরু করে এই ক্লাব।তাঁরা শপথ নেয় চোরাশিকারিদের হাত থেকে সাদা রাজহাসদের উদ্ধার করার । এই কাজের জন্য তারা রাজ্য সরকারের কাছে পিটিশন দাখিল করে। তাতে অনুরোধ করা হয় রাজ্য সরকার যাতে নিজেদের প্রাকৃতিক সম্পদকে রক্ষা করে। ঠিক সেই সময় থেকেই জনমানসে প্রভাব ফেলতে থাকে আরণ্যক তার যুবকেরা।তারপরেই সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ক্লাব থেকে নিজেদের একটি সংগঠনে পরিণত করে তাঁরা । জাতীয় তকমার গণ্ডি ছাড়িয়ে আন্তর্জাতিক হয়ে ওঠে আরণ্যক। এই সময়ে দাড়িয়ে আরণ্যক হয়ে উঠেছে ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন কনসারভেশন অফ নেচারের সদস্য।

image


আরণ্যকের সাফল্য

কিছুদিন আগেই গণ্ডার মারার অপরাধে দুই চোরাশিকারকারিকে ধরা হয় আসামের জাতীয় উদ্যান থেকে। ক্যামেরা থাকার ফলে ওই দুই চোরাশিকারিকে চিহ্নিত করতে সুবিধা হয় আসামের রাজীব গান্ধী ওরাং জাতীয় উদ্যান থেকে। জঙ্গলের মধ্যে ক্যামেরা থাকায় তাদের চিহ্নিত করার পরে তাদের দুই বছরের জেল এবং ২৫ হাজার টাকা জরিমানা জারি করা হয়। দুই জন চোরাশিকারিকে ধরার পরে আসামের ওরাং জাতীয় উদ্যানের বণকর্মীরা আনন্দে মেতে ওঠেন। যদিও তারা এটা ভালোমতোই জানতেন আরণ্যকের সাহায্য ছাড়া কোনভাবেই এই চোরাশিকারিদের ধরা সম্ভব হত না। ২০১১ সালে আরণ্যক ও তাদের সঙ্গীরা জানতে পারে ওরাং জাতীয় উদ্যানে জীবজন্তুদের পাচারের ব্যবসা চলে। সেই আশঙ্কাতেই তারা ওই জাতীয় উদ্যানে ৬০ টি ক্যামেরা লাগিয়ে রাখে। সেখানে তারা দেখতে পায় দুই শিকারি মৃত গণ্ডার হাতে জঙ্গল ছেড়ে বেড়িয়ে যাচ্ছে । এতগুলো ক্যামেরা একসাথে থাকার ফলে দুই জন চোরাশিকারীর নানা ছবি উঠে আসে। সেই ছবি দেখার পরেই মঙ্গলদই বনাঞ্চলের ডিএফও সুশীল দাইলা তাদের ছবির পোস্টার গ্রামে গ্রামে ছড়িয়ে দেয়। শিকারীদের যারা খবর দিতে পারবে তাদের জন্য ২৫ হাজার টাকা দেওয়ারও ঘোষণাও করা হয়। যদিও তারপরেই আত্মসমর্পণ করে ওই দুই চোরাশিকারী । আসাম বনাঞ্চলে চোরাশিকারিদের সেভাবে শনাক্ত করা হয়না। তার ফলে শাস্তিও পায় খুব কম সংখ্যক মানুযেরা। তাই আসামের বনদফতরের কাছে এটি একটি সাফল্য । এই তদন্তে একটি ভূমিকা ছিল অত্যাধুনিক ক্যামেরার। বাঘেদের নিয়ে নিরীক্ষা এবং সংরক্ষণের কাজ করে থাকা ড ফিরোজ আহমেদ জানিয়েছেন এই ক্যামেরগুলি নিউইয়ার্কের প্যান্থেরা এবং ডেভিড শেপার্ড ওয়াইল্ড লাইফের প্রচেষ্টায় কাজ করেছে এই বনাঞ্চলে। এই ধ্রনের ক্যামেরা লাগান থাকে বনের ধারে গাছে কিংবা বনের রাস্তায়। তারফলে বনের ভিতর প্রানীদের অবস্থান খুব ভালোভাবে বোঝা যায় । প্যান্থেরার বিজ্ঞানীরা এই ক্যামেরা বানিয়েছেন এবং বিশ্বের নানা সংস্থায় তারা এই ক্যামেরা ভাড়া দিয়ে থাকেন।

আরন্যক এবং প্যান্থেরা

image


আরন্যক এবং প্যান্থেরা একযোগে উত্তর ভারতে কাজ করে চলেছে।তারা মানস জাতীয় উদ্যান, কাজিরাঙ্গা জাতীয় উদ্যান, নামদাহা জাতীয় উদ্যান এবং কারবি অ্যাঙ্গোলা হিল এরিয়ায় কাজ করছে। তাদের পরবর্তী উদেশ্য হল মানস টাইগার রিসার্ভ এলাকাকে পাঁচ বছরে টাইগার ফরেভার সাইট হিসাবে উন্নীত করা । তারা আর একটি প্রোজেক্টের কথাও ভেবেছে। যেখানে তারা ক্যামেরার মাধ্যমে চোরাশিকারিদের সনাক্ত করবে এবং তাদের ছবি সরাসরি ফোনের মাধ্যমে বনদফতরের কাছে পাঠিয়ে দেওয়া যাবে।

সাম্প্রতিকত সংযোজন হিসাবে আরণ্যক আসাম বনদফতরকে সাহায্য করছে কাজিরাঙ্গা জাতীয় উদ্যানের গণ্ডার চোরাশিকারিদের ধরিয়ে দিতে। এক্ষেত্রে তারা ‘কে৯’ নামের ডগ স্কোয়াডেরও সাহায্য নিয়েছে। আসাম বনদফতরের দুই বেলজিয়ান কর্মীও সেখানে যোগদান করেছে। কাজিরাঙ্গা তে ডগস্কোয়াড ও আরণ্যক একযোগে ১০ জন চোরাশিকারিকে ধরিয়ে দিতে পেরেছে।

আঞ্চলিক এলাকাগুলিতে, উত্তরপূর্ব ভারতে এই সময়ে তারা ২৮ টি প্রোজেক্ট হাতে নিয়েছে। সেকানে তারা প্রকৃতির সংরক্ষণের ওপরেই কাজ করে চলেছে। বনাঞ্চলকে বাঁচাতে তারা একটি ডেটাবেস ও তৈরী করেছে। এর পাশাপাশি তারা আইনেরও সাহায্য নিয়েছে। হিয়ালয়ের পাদদেশে বনের আধাঁরে যে ধরনের অপরাধ চলে তার ওপরেও তাঁরা নজরদারি চালাচ্ছে। জীববৈচিত্র্য এবং জলাভূমি নিয়েও তারা নানা সমীক্ষা করে চলেছে। এই বিষয়ে তাদের সাহায্য করছে জিওগ্রাফিক ইনফরমেশন সিস্টেম। জিআইএস এবং সমীক্ষার আরও নানা কাজের জন্য আরণ্যক নেপাল ও ভূটান সরকারের সঙ্গে হাত মিলিয়েছে। আর এইভাবেই সকলের অগোচরে আরন্যক প্রকৃতির সংরক্ষণ করে চলেছে।