মাসিক চাঁদায় টাটকা ফলের রস

মাসিক চাঁদায় টাটকা ফলের রস

Monday September 21, 2015,

4 min Read

রোগকে দূরে সরিয়ে রাখতে চান? বুড়িয়ে যাওয়া আটকাতে চান? চিকিৎসকরা বলেন সুস্থ আর নিরোগ থাকতে নিয়মিত ফল খান। কিন্তু হাজারো ব্যস্ততার মধ্যে অনেকেই ফল কেনা বা খাওয়ার সময় করে উঠতে পারেন না। কেউ-কেউ বলেন, কাজের মধ্যে ব্রেকফার্স্ট-লাঞ্চের সময়ই মেলে না, আবার ফল! কিন্তু হাত বাড়ালেই যদি ফলের রস মেলে? ঠিক যেমন বাড়ির দোরগোড়ায় রোজ খবরের কাগজ পৌঁছে যায় সেভাবে? ব্যাপারটা আশা করি আপনার ভালোই লাগবে।ঠিক এমনই একটি পরিষেবা নিয়ে এসে তাক লাগিয়ে দিয়েছে জুস মেকার। এক উদ্যমী তরুণের স্টার্টআপ। ইয়োর স্টোরিতে আজ সেই গল্পই শোনাব আপনাদের।

ভারতে ফলের রস বলতেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে রাস্তার ধারে ছোট-ছোট স্টলের ছবি। একে রাস্তায় ধোঁয়া-ধুলো, তার ওপর অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ। এরইমধ্যে ফলের রস তৈরি ও গলাধঃকরণ। বিশেষজ্ঞরা বলেন এমন ফলের রস খাওয়ার থেকে না খাওয়াই ভালো। কিন্তু ঘটনা হল, ভারতে ফলের রস বিক্রির প্রায় ৭৫ শতাংশই দাঁড়িয়ে রয়েছে অসংগঠিত এই ক্ষেত্রটির ওপর। বাকিটা প্যাকেটজাত জুস। ভারতে যা থেকে বার্ষিক ব্যবসার পরিমাণ প্রায় এগারোশো কোটি টাকা।

জন্ম নিল জুস মেকার

অর্থাৎ বিশাল একটা বাজার খালি পড়ে রয়েছে। ফলের রসে যে লাভের গন্ধ লুকিয়ে রয়েছে তার বুঝতে পারেন সাভাদ। আর তারই ফলশ্রুতি তাঁর সংস্থা জুস মেকার (Juice Maker). মাত্র উনিশ বছর বয়সেই নিজের গ্রাম পাপানাচেরিকে বিদায় জানিয়ে বেঙ্গালুরুতে পা রেখেছিলেন সাভাদ। একরকম জেদ করেই বেঙ্গালুরুর মতো শহরে চলে এসেছিলেন তিনি। পকেটে মোটে ২৫০ টাকা। ইংরেজিটাও সেভাবে বলতে পারতেন না। সেই সময় সহায় হয়েছিলেন বন্ধু নিয়াসিম (এখন বিজনেস পার্টনার)। কথা চালানোর উপযোগী কয়েকটা টেক্সট লিখে পাঠিয়ে দেন নিয়াসিম। কাজ পান একটি বড় হোটেলে। হসপিটালিটি ইন্ডাস্ট্রি কীভাবে চলে সেই প্রথম কাছ থেকে দেখলেন সাভাদ। খুব দ্রুত শিখে নেন কাজকর্ম। উন্নতিও হয়। বেঙ্গালুরুতে ওই হোটেল গোষ্ঠীর সর্বকনিষ্ঠ জেনারেল ম্যানেজার হয়ে যান। কিন্তু এখানে বাঁধা থাকতে চাননি সাভাদ। আসলে ভবিষ্যতের স্বপ্নটা তখনই মনের মধ্যে আঁকা হয়ে গিয়েছে। নিজের মতো কিছু করতে হবে। একদিন তাই চাকরিটা ছেড়েই দিলেন। আর কোরামাঙ্গলাতে খুলে বসলেন ছোট্ট একটা দোকান। নাম দিলেন জুস মেকার।


image


সাভাদের বিজনেস মডেল

খবরের কাগজ বা ম্যাগাজিনে যেমন সাবস্ক্রিপশন নেওয়া হয়, ঠিক সেভাবেই মান্থলি বেসিসে গ্রাহক নিয়ে থাকে জুস মেকার। অর্থাৎ যে বা যারা রোজ টাটকা ফলের রস চান, তাদের কথা ভেবেই সার্ভিস দিয়ে থাকে সাভাদের সংস্থা। সেই কাজে সাভাদের সঙ্গী তথা অংশীদার ছেলেবেলার দুই বন্ধু নিয়াসিম ও মহসিন। মাত্র এক মাসের মধ্যেই শুধুমাত্র মুখের কথাতে আড়াইশোর বেশি গ্রাহক পেয়ে গিয়েছে জুস মেকার। সাবস্ক্রিপশন বেসিসে ফলের রস পৌঁছে দেওয়ার অর্ডার আসছে বহুজাতিক সংস্থা, কর্পোরেট অফিস, জিম, অ্যাপার্টমেন্ট এমনকী অন্য স্টার্টআপ থেকেও।জুস মেকারের গ্রাহক তালিকায় আপাতত নাম লিখিয়েছে Lookup, 103 Studios, TookiTaki, Pollsye, Get Closer. ব্যবসা আরও ছড়িয়ে দিতে সহযোগী করে নেওয়া হয়েছে SwiKggy, TinyOwl, TastyKhana, Foodpanda, Roadrunnr-এর মতো সংস্থাকে।


image


সাভাদের টিম

নিজেদের পয়সায় শুরু করা এই স্টার্টআপে জুস মেকার, ডেলিভারি বয় মিলিয়ে এখন মোট উনিশজন সদস্য। লাভ খারাপ হচ্ছে না। মাসিক বৃদ্ধির হার ১২৫ শতাংশ। এর বেশিরভাগই আসছে সংস্থার অফলাইন স্টোর থেকে। এই প্রক্রিয়ায় এবার প্রযুক্তিকেও জুড়তে চান সাভাদ। যাতে গ্রাহকরাও খুব সহজে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে উঠতে পারবেন। আর তারাও গ্রাহকদের সঙ্গে নিয়মিত সম্পর্ক রাখতে পারবেন। আগামী বছর (২০১৬) চেন্নাইতেও ব্যবসা ছড়ানোর পরিকল্পনা নিয়েছেন সাভাদ।


image


ফলেন পরিচয়তে

ফলের রস তৈরির ব্যাপারে নিজস্ব রেসিপি রয়েছে জুস মেকারের। সেই রেসিপি মেনেই অত্যন্ত স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে ফলের রস তৈরি করা হয়। ফল ও সবজির ক্ষেত্রে আগামী দিনে শুধুমাত্র অর্গানিক পদ্ধতিতে উৎপন্ন জিনিসেই জোর দিতে চায় সংস্থা। আর একটা জিনিসে সবসময় নজর রাখা হয়, যা যে কোনও ব্যবসারই মূলমন্ত্র। গ্রাহক সন্তুষ্টি। সাভাদ বলেন," কোনও জিনিস ডেলিভারি দেওয়া মানেই কিন্তু সবটা শেষ হয়ে যায় না। এরপরও নিয়মিত জানতে হয় গ্রাহক খুশি কি না বা তিনি আর কী চান"।


image


পথ দেখাচ্ছে জুসেরো

বিজনেস ইনসাইডারের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালিতে জুস মেকারের মতো প্রায় একই মডেলে কাজ চালাচ্ছে জুসেরো। সেই স্টার্টআপের ব্যবসার দিকে তাকালে চোখ কপালে উঠবে। ২০১৩ সালের অক্টোবের জুসেরোর ব্যবসার পরিমাণ ছিল ৪ মিলিয়ন ডলার, আর ২০১৪ সালের এপ্রিলে তা পৌঁছে গিয়েছে ১৫.৮ মিলিয়ন ডলারে। ২০১৫ সালের মধ্যে ১০০ মিলিয়ন ডলারই আপাতত লক্ষ্য জুসেরোর। হয়তো অবিশ্বাস্য মনে হচ্ছে। কিন্তু সম্ভাবনার বহর এতটাই। তিন ভারতীয় তরুণ তাই ভরসা রাখছেন নিজেদের বিজনেস মডেলেই।