ভাববেন, আর কাম তামাম করবে দিল্লির রোবট

ভাববেন, আর কাম তামাম করবে দিল্লির রোবট

Sunday January 31, 2016,

3 min Read

আলাদিনের প্রদীপের সেই জিনিকে বলতে হত কী চাই। এবার আর বলতেও হবে না। আপনি শুধু ভাববেন। হয়ত ভেবে বসলেন মাথার ওপর পাখাটা ঘুরতে শুরু করুক। ব্যাস ওইটুকুই যথেষ্ট। বাকি কাজটা করে দেবে রোবট! এখনই অবাক হলেন নাকি ? একটু সবুর করুন। যন্ত্রমানবদের কীর্তি শুনলে আরও আশ্চর্য হবেন। এক্কেবারে PK স্টাইলে কেবল স্পর্ষ করেই এই রোবট টের পায় তার মালিক কী ভাবছে। অমনি সেই কাজ তুরন্ত করতে লেগে পরে।

image


এতদিন যেসব রোবট তৈরি হয়েছিল, তাদেরকে বাইরে থেকে নির্দেশ দেওয়া হত। এরপর সেটাও করতে হবে না। দিল্লির “ASET ট্রেনিং অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউট”-এর তৈরি এমনই এক রোবট, যে সেন্সরের মাধ্যমেই ধরে নেবে তার মালিক কী বলতে চাইছে। সেইমতো কাজও শুরু করে দেবে । এরজন্য শুধুমাত্র দরকার মালিকের হাত। তা আলতো করে ছোঁয়ালেই হবে। ব্যাস, তাহলেই কেল্লাফতে! মালিকের সব মনোকামনা পূর্ণ করবে সাধের রোবট।

খড়গপুর IIT-তে হয়ে গেল টেকনো-ম্যানেজমেন্ট উৎসব ‘ক্ষিতিজ-২০১৬’। মূলত রোবোটের ব্যবহারিক দিক তুলে ধরতেই এই আয়োজন। উদ্যোক্তা আইআইটির ‘জিমখানা’ ছাত্র সংগঠন। শুধু রোবট প্রদর্শনী নয়, ছিল রোবটের যুদ্ধ, ক্যুইজ, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, বিনামূল্যে কর্মশালা, আলোচনাসভা-সহ নানা আয়োজন। ২০০৪ সাল থেকে আইআইটি খড়্গপুরে এই উৎসব হচ্ছে। মানুষের চাহিদা মতোই রোবোটের আবিষ্কার হচ্ছে। সেই সব অত্যাধুনিক যন্ত্রমানব নিয়েই দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পড়ুয়ারা হাজির হন। দেশ-বিদেশে রোবোটিক্স নিয়ে কাজ করা অধ্যাপকেরাও এই উৎসবে যোগ দিয়েছেন। আর তা দেখতেই ভিড় জমিয়েছিলেন আইআইটির পড়ুয়ারা।

ক্ষিতিজেই এই অবাক যন্ত্রমানব নিয়ে হাজির হয়েছিলেন নয়াদিল্লির ASET ট্রেনিং অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটের রিসার্চ হেড দিবাকর বৈশ্য। তিনি ক্লোনিং মস্তিষ্কের উপরে নানা ধরনের রোবোট তুলে ধরেছেন। সেই রোবোটগুলি মানুষের মনের কথা বুঝে কাজ করতে পারে। এমনকী ২ ফুট উচ্চতার ২ কিলোগ্রামের এই থ্রিডি-রোবোট নাচ, ফুটবল খেলা, পুশ-আপের মতো নানা কাজ করতে পারবে। ভারতের বাজারে এই যন্ত্রমানবের দাম দেড় থেকে আড়াই লক্ষ টাকা হবে বলে দিবাকর বৈশ্যের ধারণা। আরও একটি চমক ছিল যন্ত্রহাত। কনুই থেকে তৈরি ওই হাত মূলত হাত হীনদের জন্য। কোনও তার সংযোগ ছাড়াই এই হাত মানুষের মস্তিষ্কের কথা ধরে নিয়ে সেই মতো নিজেকে সঞ্চালন করে। বিশ্বে এমন হাত এর আগে তৈরি হলেও এতটা উন্নত ছিল না, দাম ৩০ লক্ষ টাকার কাছাকাছি। ইনস্টিটিউটের রোবটিক অ্যান্ড রিসার্চ হেড দিবাকর বৈশ্য বলেন, ‘আমাদের সংস্থায় তৈরি রোবট অনেক বেশি উন্নত, দামও ১৫ হাজারের মধ্যে। যা তাড়াতাড়ি বাজারে আনছি। এ ছাড়াও খুব শিগগিরই একটি বিশেষ রোবট বাজারে আনা হচ্ছে। যার মাধ্যমে মালিক কিছু ভাবার সঙ্গে সঙ্গেই রোবট সেই কাজ শুরু করে দেবে। মুখে নির্দেশ দেওয়ার অপেক্ষা রাখবে না। মস্তিষ্কের ভাবনাকে তরঙ্গের মতো ধরে নিয়েই কাজ করবে রোবট। এক কথায় এবার রোবটের নিজস্ব চিন্তাভাবনার জন্য ব্রেন দেওয়া হচ্ছে। একে ক্লোনিং মস্তিষ্কও বলা যেতে পারে’।

কী আপনার রজনিকান্তের ফিল্ম মনে পড়ছে তো! ঠিক তাই... মস্তিষ্কে তথ্য ছাড়া আবেগও কী যাবে। প্রেম টেমে পরবে নাকি রোবট। সে বিষয়ে এখনও নিশ্চিত নন বিজ্ঞানীরা তবে এদের কাণ্ড দেখলে যে কেউ রোবটের প্রেমে পড়ে যাবে। সেবিষয়ে নিশ্চিত। কেননা কাজের কাজটা এরা করে দিতে দারুণ সক্ষম।

মালয়েশিয়া থেকে আসা ক্রিয়েটিভ রোবোটিক্স লার্নিং সেন্টার তুলে ধরেছে ব্যালেন্সিং রোবট। এই রোবোটের উপর ভারী কিছু চাপিয়ে দিলে সহজেই ভারসাম্য বজায় রাখতে পারে। প্রদর্শনীর দায়িত্বে থাকা মালয়েশিয়ার সফটওয়্যার ডেভেলপার বাসুকি পার্থসারথীর কথায়, “মানুষের শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অংশ হল মেরুদণ্ড। এর সাহায্যে মানুষ ভারসাম্য বজায় রেখে দাঁড়াতে পারে। কিন্তু স্নায়ুরোগে অনেকের মেরুদণ্ড দুর্বল হয়ে পড়ে। এই রোবট সেই দুর্বলতা কাটাতে সাহায্য করবে।’’

আইআইটির জিমখানা জানিয়েছে, এ বার প্রায় আড়াই হাজার পড়ুয়া প্রতিযোগিতায় যোগ দিয়েছেন। প্রতিটি ইভেন্টে কোথাও ১ লক্ষ কোথাও ৫০ হাজার করে গড়ে ৬০ হাজার টাকার পুরস্কার দেওয়া হয়েছে। আইআইটির ধারণা, এই প্রযুক্তি উৎসবের মধ্যে দিয়েই দেশ প্রযুক্তিতে সমৃদ্ধ হবে। জিমখানার সহ-সভাপতি অটল আশুতোশ অগ্রবাল বলেন, “চিন, জাপান প্রযুক্তি বা এই রোবোটে যতটা এগিয়েছে, সেখানে ভারত ততটা পারেনি। আমরা চাই এই উৎসবের মধ্যে দিয়ে দেশের প্রযুক্তিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে।’’