নদীতে বাঁশের সেতু বানিয়ে টোল তোলেন এক মাঝি

জনসেবায় সেতু নির্মাণ করেছেন অজ বাংলার এক মাঝি, জনতার দানে উঠছে সেই সেতু তৈরির খরচ।

নদীতে বাঁশের সেতু বানিয়ে টোল তোলেন এক মাঝি

Saturday October 08, 2016,

2 min Read

৪৩ বছরের শেখ লালচাঁদ পেশায় একজন ঘাট মাঝি। কিন্তু লালচাঁদ এমন একটি কাজ করে ফেলেছেন যাঁর জেরে তিনি নিজেই এখন একটি খবর। মুণ্ডেশ্বরী নদীর ওপর চলাচলের জন্যে একটি সেতু তৈরি করেছেন স্বউদ্যোগে এবং নিজের গাঁটের কড়ি খরচ করে। বাঁশের তৈরি এই সেতুটিই তাঁকে গ্রামবাসীদের কাছে হিরো বানিয়েছে। লালচাঁদ এখন স্থানীয় বহু মানুষের কাছেই এক প্রেরণার মতো।

image


ঘোড়াবেড়িয়া-চিটনান এবং ভাটোরা একটি দ্বীপ এলাকা। দ্বীপটি মুণ্ডেশ্বরী, দামোদর ও রূপনারায়ণ নদী পরিবেষ্টিত। লালচাঁদের নির্মিত বাঁশের সেতুটি মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছে।

লালচাঁদ পেশায় মাঝি। কিন্তু বছরের সব সময় নদীর অবস্থা নৌকা বাইবার উপযুক্ত থাকে না। সেইসময় নদী পেরোতে গ্রামবাসীদের দুর্ভোগের অন্ত থাকে না। লালচাঁদের কথায়, ভাটার সময় নদী পেরোতে গিয়ে গ্রামবাসীদের পা কাদায় ডুবে যায়। ছাত্রছাত্রীদের স্কুল ব্যাগ কাঁধে নিয়ে নদী পেরোতে ভীষণ কষ্ট হয়। এসব দেখেই আমি ভেবেছি, একটা বাঁশের সেতু তৈরি করে দিলে কেমন হয়?

সেতুটি তৈরি করতে মোট সাড়ে সাত লক্ষ টাকা লেগেছে। স্ত্রীর গয়না বন্ধক দিয়ে এবং আত্মীয়-পরিজনদের কাছ থেকে ধার নিয়ে ওই বাঁশের সেতুটি নির্মাণের জন্যে প্রয়োজনীয় টাকা জোগাড় করেছেন লালচাঁদ। ১৬ জন শ্রমিক টানা ২৮দিন উদয়াস্ত কাজ করে সেতুটি তৈরি করেছেন। সেতু নির্মাণে যে খরচ হয়েছে পারাপারকারীদের কাছ থেকে টোল আদায় করে সেই খরচ তুলে নিচ্ছেন লালচাঁদ। পায়ে হেঁটে নদী পেরোতে হলে ২ টাকা, মোটর সাইকেলের জন্যে ৬ টাকা, গাড়ি পারাপারে ১০০ টাকা টোল আদায় করছেন লালচাঁদ। ছাত্রছাত্রী ও বয়স্কদের জন্যে টোল বাবদ আদায় ১ টাকা। অ্যাম্বুল্যান্স এবং পরীক্ষা চলাকালীন পড়ুয়াদের পারাপারের জন্যে লালচাঁদ একটি পয়সাও টোল বাবদ আদায় করেন না। কৃষকদের কাছ থেকে মাসিক ৫০ টাকা আদায় করার বিনিময়ে তাঁদের যতবার ইচ্ছা সেতু পারাপার করতে পারবেন।

বাঁশের সেতু তৈরির পরে তৈরি হয়েছে দারুণ এক সুখবর। এ গ্রামে মানুষের বিয়ে হওয়ার পিছনে অন্যতম বাধা ছিল নদী পেরোনোর কষ্ট। জনৈক গ্রামবাসী অচিন্ত্য মাইতি বললেন, সে সমস্যাও আর নেই। সেতু হয়ে যাওয়ায় পারাপার বা যোগাযোগ রক্ষা সহজতর হয়েছে। সামনের বছরই আমার মেয়ে বিয়ে ঠিক হয়ে গিয়েছে। আসলে লালচাঁদের সেতুটাই আমাদের বাঁচিয়েছে।

(TCI)