ব্যবসা ভালোবেসে, বোঝাল ‘ক্রেয়া’

ব্যবসা ভালোবেসে, বোঝাল ‘ক্রেয়া’

Friday September 04, 2015,

4 min Read

টেক স্পার্ক ২০১২র একটি সাম্প্রতিক আর্টিকেলে বিশেষজ্ঞরা গুগুলের গৌতম গান্ধি এবং সিকোয়া ক্যাপিটেলের শৈলেন্দ্র সিংয়ের বিতর্ক নিয়ে কাটাছেঁড়া করছিলেন। বিতর্কের বিষয় ছিল ‘মাণদণ্ড’। শৈলেন্দ্র প্রচলিত এবং জনপ্রিয় ধারনার প্রসঙ্গ টেনে বলেন, উদ্যোক্তারা সব সময় বিজনেস লিডার বা মেন্টরদের কাছ থেকে টিপস পান-যে কোনও নতুন সংস্থার লক্ষ্য থাকবে ওপরের দিকে ওঠা এবং একটা মানে পৌঁছে যাওয়া। গৌতম অবশ্য এই সব প্রচলিত ধারনার ধার ঘেঁষতে রাজি নন। শৈলেন্দ্রর যুক্তির উলটো পথে হেঁটে বলেন, একজন উদ্যোক্তার ক্ষেত্রে সবচেয়ে প্রযোজনীয় দিক হল তাঁর কী পছন্দ এবং কোন বিষয়টি তাঁকে প্রেরণা যোগায়, এগিয়ে নিতে সাহায্য করে। বাজার ধরা যদি আদৌ কোনও ব্যবসার মানদন্ড হয়ে থাকে তা আসা উচিত উপজাত হিসেবে।

image


ক্রেয়া সাসটেনএবল গুডিস-একেবারে প্রাকৃতিক, কাপড় কাচার জৈব গুড়ো সাবান। সংস্থার প্রতিষ্টাতার সঙ্গে কথা বলে বোঝা গেল তিনি গৌতমের ‌যুক্তিতে বিশ্বাসী। প্রীতি এবং শ্রীনি ক্রেয়ার প্রতিষ্ঠাতা, দুজনেই শহরের মানুষ। নানা সুযোগ-সুবিধা, দ্রুততা, ব্যবসা এবং মানুষের নৈকট্য-শহরে থাকার এই ফায়দাগুলি ভালোই জানেন উদ্যোক্তা দম্পতি এবং তার সুবিধাও নেন পুরপুরি। অসুবিধাও আছে, তাও জানেন। একটা ছোট্ট অংশের মানুষের অসম্ভব প্রভাব অন্যদের টিকে থাকার ক্ষেত্রে বিরাট চ্যালেঞ্জের হয়ে দাঁড়ায়। ‘পেছনের কটা বছর...থিতু হওয়ার জন্য নানা চেষ্টা চরিত্র্র করছিলাম’, শ্রীনি বলছিলেন সাম্প্রতিক এক সাক্ষাতে। তাই অন্যান্য ভালো উদ্যোক্তার পথ ধরে প্রীতি-শ্রীনিও চ্যালেঞ্জ হিসেবে ব্যবসাকেই বেছে নিলেন। এবং ২০১০ এর মে-তে কর্পোরেট চাকরি ছেড়ে ক্রেয়া গড়লেন। ক্রেয়া এখন এমন কিছু পণ্য উৎপাদন করে যেগুলি শহুরে জীবনের সঙ্গে মানানসই এবং নজর রাখা হয় যাতে ক্রেতাদের বিরাট কিছু বদলাতে না হয়। ক্রেয়ার মূল উৎপাদিত পণ্য হল কাপড় ধোয়ার গুড়ো সাবান, যার পুরওটাই উদ্ভিদ নির্ভর, একেবারে প্রাকৃতিক এবং উন্নতমানের জৈব জিনিসপত্র দিয়ে তৈরি। ক্ষারের গুড়ো সাবান যেগুলি আপনার বাড়ির আলমারিতে ঠাসা তার কনসেপ্টকেই বাতিল করে দিয়েছে ক্রেয়ার গুড়ো সাবান। বাড়িতে যখন ক্রেয়া ব্যবহার করবেন, জানবেন আপনার এবং পরিবেশের ক্ষেত্রে একদম নিরাপদ জিনিসই ব্যবহার করছেন।

ক্রেয়ার ৯৭ শতাংশ গুড়ো সাবান সোপবেরি (রিঠা)থেকে তৈরি। ‘হাজার হাজার বছর ধরে চিন, ভারতে এমনকী পুরও এশিয়াতেও রিঠা ব্যবহার হয়ে আসছে’, ব্যাখ্যা দেন শ্রীনি। ‘আমরদের মনে হয়েছে, তিন হাজার বছর ধরে যার থেকে মানুষ উপকার পেয়েছে, আরও অনেকের কাছে সেটা পোঁছে ‌যাক’। নানা প্রক্রিয়ায় গুড়ো সাবান তৈরি করে প্যাকেটজাত করার জন্য অন্ধ্র প্রদেশের এক জৈব খামার থেকে ক্রেয়ার চেন্নাইয়ের অফিসে রিঠা নিয়ে আসা হয় । রিঠাগুলি রোদে শুকানোর পর গুড়ো করে শুধুমাত্র ক্যালসিয়াম কার্বোনেট মেশানো হয় যাতে গুড়ো শুকনো রাখার যায়। এভাবেই উদ্যোক্তা স্বামী-স্ত্রী ভালো মানের, প্রকৃতিক এবং পরিবেশ বান্ধব পণ্য উৎপাদন করেন।

image


ক্রেয়া ডিটারজেন্ট কিনে আপনি যা পেলেন তার চাইতেও বেশি গুরুত্বপূর্ণ কী পেলেন না। কোনও রকম ক্ষতিকারক রাসায়নিক, ক্ষার, ব্লিচ পাবেন না যা অন্য ডিটারজেন্টে থাকবেই।‘পেট্রোলিয়াম থেকে তৈরি এই ডিটারজেন্টগুলি বিষাক্ত রাসায়নিকে ভরা। জল,কাপড় ও চামড়ার পক্ষে ক্ষতিকারক’,বলেন শ্রীনি। তাই যখন ক্রেয়া ব্যবহার করবেন, জানবেন আপনি শুধু পরিবেশ দূষণমুক্তই রাখছেন না, নিজেকেও নিরাপদ রাখতে পারছেন। কাপড় ধোয়া শেষ হলে অবশিষ্ট অংশ বাগানে ফেলে দিন এবং সুতির থলে শুকোতে দিন পরের বার ব্যবহারের জন্য।

ক্রেয়া এবার আরও বড় হওয়ার দিকে এগোতে চায়। উপাদিত পণ্যের তালিকায় হেঁসেলের নানা জিনিসপত্র যেমন থালা ধোয়ার সাবান, সাবান পরিষ্কারের সরঞ্জাম আনার প্ল্যানিং আছে। লক্ষ্য একটাই। বাড়িতে ক্ষতিকর কোনও রাসায়নিক ঢুকতে দেবেন না ওই দম্পতি। ‘অনেকেই আমাদের প্রডাক্ট ব্যবহার করে খুশি এবং অন্যগুলির জন্য মুখিয়ে আছেন’,ব্যাখ্যা দিলেন শ্রীনি। তাহলে, এই গল্প কীভাবে উদ্যোক্তাদের ‘যা করতে ভালো লাগে’ সেই ঘরনার ধারনার সঙ্গে মিলছে, যেখানে মান নিয়ে কথা হচ্ছে? যখন শ্রীনিকে জিজ্ঞাসা করা হল তাঁর কোম্পানির লক্ষ্য কী, পুঁজির কথা তাঁর মাথায় ছিল না। ‘তোমার জানা উচিত - দুটি আলাদা ব্যপার।সংস্থা ভিসি (ভেঞ্চার ফান্ডিং বা উদ্যোক্তাদের কাছ থেকে টাকা সংগ্রহ) ফান্ডিং নিয়ে থাকবে নাকি ভিসি ফান্ডিং ছাড়া থাকবে...আমরা আমাদের মতো, যা করছি তা নিয়ে খুশি’।

পরিবেশ বান্ধব এবং সুন্দর জীবনধারণের জন্য পণ্য তৈরির ইচ্ছে থেকে ক্রেয়ার সৃষ্টি। শ্রীনি বলেন এই আবেগটাই এক জন উদ্যোক্তার থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ‘নিজেকে জিজ্ঞেস কর’, ব্যাখ্যা করেন শ্রীনি, ‘তিন থেকে পাঁচ বছর কোনও আর্থিক লাভের কথা না ভেবে চালিয়ে যেতে পারবে তো’? একদল আবেগতাড়িত, আরেক দল আর্থিক লাভ বা ওপরে ওঠা ছাড়া কিছু বোঝে না- দুটি দলের মধ্যে স্পষ্ট বিভাজন রেখা আছে। উচ্চাকাঙ্খী উদ্যোক্তাদের কাছে শ্রীনির প্রশ্ন, ‘পুঁজি বাড়াতে সংস্থা তৈরি করছেন নাকি সংস্থাটি আপনার সন্তানের হাতে তুলে দিতে চাইছেন’? শ্রীনির নিজের উত্তর, পরেরটি। নিজের টাকাতেই এগিয়ে যাওয়ার লক্ষ্য থাকলে পরিবারের মধ্যে সংস্থা ধরে রাখুন। শ্রীনি ও প্রীতি স্বপ্ন দেখেন তাঁদের ন মাসের কন্যাও একই চিন্তা ধারা নিয়ে বড় হবে, একই রকম আবেগ থাকবে ক্রেয়ার জন্য তাঁদের যেমন আছে।