অনু-অরু, বাংলার দুই কন্যা ফ্যাশনে অনন্যা

অনু-অরু, বাংলার দুই কন্যা ফ্যাশনে অনন্যা

Friday October 23, 2015,

3 min Read

অনু এবং অরু, দুই বাঙালি বোন। ২০১৩র অগস্টে ওয়াইন খেতে খেতে দুই বোন ঠিক করে নেন ফ্যাশন ব্র্যন্ড নিয়ে কাজ করবেন। শেষ দশ বছর ধরে দুজনে আলাদা আলাদাভাবে কখনও বিজ্ঞাপনে, কখনও এয়ারহোস্টেজের কাজ করেছেন। তবে মনে ধরেনি কিছুই। পেশাদার গানের শিল্পী হবেন বলে অরু এয়ারহোস্টেজের কাজ ছেড়ে দেন। কনসার্টে যেসব পোশাক পরতেন অরু নিজেই তার ডিজাইন করতেন। অরুর ডিজাইন করা পোশাক লোকের প্রশংসা পেত। তখন থেকেই ফ্যাশন ডিজাইনিংকেই পেশা হিসেবে নেওয়া যায় কিনা ভাবতে শুরু করেন।

‘২০১৩র নভেম্বরে আমরা একটা ফেসবুক পেজ খুলি। সঙ্গে সঙ্গে ভালো সাড়া পাই। শাড়ির অর্ডারের বন্যা লেগে যায়। কালেকশনে নতুন নতুন ডিজাইন জুড়তে থাকি। মাসের মধ্যেই শাড়ির ইউনিক কালেকশনের জন্য পরিচিতি পেয়ে যাই। শুধু শাড়ি নয়, স্কার্ট, প্যান্ট, ওয়েস্টকোট, কুর্তা, কাফতান যাই বানিয়েছি, তারিফ পেয়েছি’, বলেন দুই বোন।

image


গত এক দশকে আন্তর্জাতিক বাজারে ভারতীয় ফ্যাশনের কদর বেড়েছে। ভারতীয় পণ্য সহজলভ্যও হয়েছে। হিসেব বলছে ২০০৬ থেকে ২০১২ এই ৬ বছরে ভারতীয় পণ্য রপ্তানি ১৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার থেকে বেড়ে ৩৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে দাঁড়িয়েছে। অশা করা হচ্ছে ২০২১ সালের মধ্য বাজার বেড়ে ২২৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার হবে। ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রিতে আর্থিক লাভ এবং সৃজনশীলতা, ভারতের যুব উদ্যোক্তাদের উৎসাহিত করছে। ফলে অনেকে ফ্যাশনের বাজার ধরার চেষ্টা করছেন। পোশাকের ডিজাইন, রং, আকার, মেটেরিয়াল, পোশাক পরার ধরন আমাদের দেশের ফ্যাশন ডিজাইনে বিপ্লব এনে দিয়েছে।

বলছিলেন প্রত্যেকটি সুতো এক একটা গল্প বলে। যেন, নিয়ে যায় একেবারে গোড়ার কথায়। তাই ওঁরা রেশম তোলা থেকে সুতো বোনা সবটাই করেন। মুম্বইয়ের ‘অনুঅরু’ ফ্যাশন ব্র্যান্ড এখন রমরমিয়ে চলছে। দুই বাঙালি বোন গোটা ফ্যাশন দুনিয়ার কাছে রং এবং নিজস্বতায় অনন্য পরিচিতি পেয়েছেন। অনলাই এবং অফলাইনে ‘অনুঅরু’র পোশাক পাওয়া যায়।

ওয়েবসাইটে ‘অনুঅরু’র সাড়ে সাত হাজার নিয়মিত ফলোয়ার আছে। অনলাইনে প্রতিদিন গড়ে ১০ পিস বিক্রি। প্রদর্শণীর সময় সেটা দিনে পঞ্চাশও ছোঁয়। ‘ফ্যাশন ট্রেন্ডস ফিরে ফিরে আসে’, বলেন অরু। ‘স্লিভ লেংথের ফ্যাশন চলে যেতে পারে, কয়েক বছর পর আবার ঠিক ফিরেও আসবে। আসলে ফ্যাশন নয়, বদল হয় দৃষ্টিভঙ্গির। যে পোশাক পরছি তাকে কোন দৃষ্টিতে দেখা হচ্ছে তার উপর নির্ভর করে ফ্যাশন। আমরা যেভাবে দেখছি আমাদের সৃষ্টিও তার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ। যদি মানিয়ে নিতে না পারেন তাহলে আপনি ফ্যাশন দুরস্ত হয়ে উঠতে পারবেন না’, অরুর সংযোজন।

খুব তাড়াতাড়ি ব্রেক ইভেনে পৌঁছে গেলেও এখনও খুব বেশি লাভজনক হয়ে ওঠেনি এই ব্র্যান্ড। দুই বোনই জানান, অনলাইনে ভালো বিক্রি আছে। তাছাড়া কোথাও এক্সিবিশন হলে সেখানেও অংশ নিয়ে যতটা সম্ভব বিক্রি বাড়ানোর চেষ্টা করেন। অনু-অরু জানান, এখন তাঁদের নজর মেটেরিয়াল, হস্তশিল্প, মূল স্টাইল এবং ডিজাইনের বহুমুখিতার দিকে। ‘হাতে বোনা সুতি, পাট এবং সিল্ক থেকে শুরু করে প্রায় সব ধরনের ফেব্রিক নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা করছি। প্রত্যেকটা শাড়ি অন্যদের থেকে আলাদা করতে হাতে বোনা হয়। ডিজাইনি করা শাড়িও বিক্রি শুরু করেছি। অবয়ব অনুযায়ী কেমন কাট হবে কী প্যাটার্ন হবে সেটা যেহেতু বুঝি, নানা সাইজের পোশাক তৈরিতে অল্প সময়েই ভালো নাম করে ফেলেছি’, বলেন দুই সহোদরা।

কিছু নামী অনলাইন পোর্টলে ‘অনুঅরু’র পোশাক পাওয়া যায়। বিক্রি বাড়াতে বিভিন্ন রিটেল চেনেও নিজেদের পণ্য রাখার কথা ভাবা হচ্ছে। এবার পুরুষদের পোশাকও কালেকশানে রাখার চিন্তাভাবনা হচ্ছে। মুম্বইয়ের বাইরে যেসব প্রদর্শণী হয় সেখানেও দেখা যাবে ‘অনুঅরু’ ব্র্যান্ড।

তবে একটা কথা স্পষ্ট ওদের উৎসাহ তুঙ্গে। দুই বোন চেষ্টা করে যাচ্ছেন ঠিক মানের জিনিস গ্রাহকের হাতে তুলে দেওয়ার। ফ্যাশন ডিজাইনে এখন প্রতিযোগিতাও অনেক বেশি। দুই বোনই জানানে, শুরু থেকে নতুন ব্র্যান্ডের প্রচার একটু বেশিই করতে হয়, কালেকশনের বৈশিষ্ট তুলে ধরতে হয়। ‘অনুঅরু’র ক্ষেত্রে আরাম এবং আভিজাত্য দুটোই সমান গুরুত্বপূর্ণ। সেটাই প্রচারের ইউএসপি হিসেবে দেখছেন এই দুই বাঙালি উদ্যোক্তা।